TMC Syndicate War: সবার উপরে সিন্ডিকেট সত্য, তাহার উপরে নাই!

Kolkata Syndicate Clash: সিন্ডিকেটের এই রোগ -- তা সে ভাইরাসই হোক বা ব্যাক্টেরিয়া কিংবা ছত্রাক-- শাসক দলের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে রয়েছে...
syndicate_tmc
syndicate_tmc

তৃণমূল জমানায় পশ্চিমবঙ্গে সিন্ডিকেট রাজের বাড়বাড়ন্ত নতুন কথা নয়। দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধী শিবিরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শাসক দলের বদান্যতায় রাজ্যে সিন্ডিকেট রাজ কার্যত ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। শহর হোক বা গ্রামাঞ্চল-- সর্বত্রই সিন্ডিকেট বিরাজমান। কিন্তু, সাম্প্রতিককালে, সিন্ডিকেটের এই নির্লজ্জ ও খুল্লমখুল্লা আস্ফালন যেভাবে দিকে দিকে প্রতিফলিত হয়েছে বা হচ্ছে, তা সম্ভবত কোনওদিন এরাজ্যে হয়নি।

গত ডিসেম্বরে বিপুল সংখ্যা নিয়ে কলকাতা পুরভোটে জয়ী হয় রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। অথচ, তার পাঁচ মাসের মধ্যেই, পুরসভার ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে শুরু হয়ে গিয়েছে সিন্ডিকেট-দৌরাত্ম্য। বেহালা হোক বা লেক গার্ডেন্স কিংবা বাঁশদ্রোণী-- দিকে দিকে সিন্ডিকেটের এই গ্যাং-ওয়ার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার কঙ্কালসার অবস্থা। 

বিগত কয়েকদিনের মধ্যেই কলকাতার একাধিক এলাকায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনা সামনে এসেছে। গত বৃস্পতিবার বেহালাতে চড়ক মেলার দখলদারি ঘিরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। ঘটনায় জখম হয় বেশ কয়েকজন।
অন্যদিকে, সোমবারই লেক গার্ডেন্সেও এমনই বখরার ভাগ নিয়ে গন্ডগোল বাধে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে। ঘটনাচক্রে, গন্ডগোলটি ঘটে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের বাড়ির সামনেই। এটাই শেষ নয়। সম্প্রতি, বাঁশদ্রোণীতেও দেখা গিয়েছে একই ছবি। সিন্ডিকেটের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে ভরদুপুরে কলকাতার রাস্তায় প্রকাশ্যে চলে গুলি। সেই গুলির আঘাতে জখম হন দুই ব্যক্তি। যার জেরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। 

সিন্ডিকেটের এই দৌরাত্ম্য কতটা বেড়েছে, তার প্রমাণ বঙ্গবাসী হাতে গরমে পেয়েছে চলতি সপ্তাহে, যেখন সিন্ডিকেট-দুষ্কৃতীদের দুই গোষ্ঠীর গুলির লড়াইয়ে অতিষ্ট হয়ে বাধ্য হয়ে পুলিশকে ফোন করতে হচ্ছে শাসক দলেরই সাংসদকে! তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় থাকেন লেক গার্ডেন্সে। তাঁর বাড়ির পাশেরই সিন্ডিকেটের বিবাদে ধুন্ধুমারকাণ্ড বেঁধে যায় গোটা এলাকায়। স্থানীয় সূত্রে খবর সিন্ডিকেট কার হাতে থাকবে এই নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করা হয় পরস্পর গোষ্ঠীকে। ধারালো অস্ত্রের কোপে আহত হন ৭ জন। গন্ডগোলের আওয়াজ শুনে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। তিনি ফোন করেন লেক থানায়।

শাসক শিবির যতই বিষয়টিকে "ছোট বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা" হিসেবে উল্লেখ করুক না কেন, সিন্ডিকেট নিয়ে দলের সাংসদের মন্তব্যেই স্পষ্ট, সমস্যা কোন পর্যায়ে গিয়েছে। প্রবীণ এই নেতাকে বলতে শোনা যায়, "এখানে ৬০ বছর আছি। নকশাল আমল দেখেছি। কোনওদিন এরকম ঘটনা দেখিনি। রেল কলোনির আন্দোলন করেছি। লেকগার্ডেন্স এরকম কোনও ঘটনা কখনও ঘটেনি।" ঘটনায় যথেষ্টই ক্ষুব্ধ এবং বিরক্ত সাংসদ সৌগত রায়৷ সংবাদমাধ্যমের সামনে সিন্ডিকেট নিয়ে গন্ডগোলের কথা স্বীকারও করে নিয়েছেন তিনি৷  

শাসক শিবির যাই দাবি করুক না কেন, সিন্ডিকেট রোগ তৃণমূলের আজকের নয়। এটা দীর্ঘদিন ধরেই শাসক দলের শীর্ষস্তরের বদান্যতায় ভেতরে-ভেতরে শক্তিবৃদ্ধি করেছে। একটা সময়ে সিন্ডিকেটের বাড়বাড়ন্ত এবং গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে বার বার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিল রাজারহাট এবং নিউটাউনের নাম। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল। রাজারহাট – নিউটাউন এলাকায় সিন্ডিকেট ব্যবসা নিয়ে শাসকদলের দুই দু গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ লেগেই থাকত। সেখানে বিল্ডারদের নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহের জন্য এই 'সিন্ডিকেটগুলির' নিয়ন্ত্রণ নিয়ে টিএমসি সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার এবং দলের বিধায়ক সব্যসাচী দত্তের মধ্যে শত্রুতা বাংলায় সুপরিচিত ছিল।

এখন, রাজারহাট-নিউটাউনের সিন্ডিকেট দৌরাত্ম্য থাকলেও, কিছুটা নিষ্প্রভ। কিন্তু, শহরের অন্য প্রান্তে তা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। ফলে, সিন্ডিকেটের এই রোগ -- তা সে ভাইরাসই হোক বা ব্যাক্টেরিয়া কিংবা ছত্রাক-- শাসক দলের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে রয়েছে। বদল হচ্ছে তো শুধু আক্রান্ত এলাকার নাম। 

 

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles