মাধ্যম নিউজ ডেস্কঃ অনুব্রত মণ্ডল, সায়গল হোসেন কিংবা টুলু মণ্ডলই নয় বীরভূমের গরু, কয়লা, পাথর-বালির কারবারে যুক্ত আরও নয় ব্যক্তির সন্ধান পেয়েছে ইডি-সিবিআই। সেই ‘নবগ্রহ’-র মাধ্যমেই হাজার হাজার কোটি টাকা গত কয়েক বছরে বীরভূম থেকে লুট হয়েছে বলে তদন্তকারী সংস্থা জানতে পেরেছে। এঁদের মাধ্যমেই যে তৃণমূল নেতাদের টাকা বিভিন্ন স্থানে বিনিয়োগ হয়েছে তাও তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন। সায়গল গ্রেফতার হওয়া এবং টুলুর বাড়িতে তল্লাশি অভিযানের পর ওই নবগ্রহের অনেকেই এখন গা ঢাকা দিয়েছেন। কেউ কেউ ঝাড়খণ্ডে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু ইডি-সিবিআইয়ের হাতে তাঁদের যাবতীয় তথ্য চলে এসেছে। এক এক করে তাঁদের তদন্ত প্রক্রিয়ায় সামিল করে গরু, কয়লা, বালি, পাথরের সিন্ডিকেট সাম্রাজ্যে আঘাত হানা হবে বলে তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা যাচ্ছে।
কলকাতার পিজি হাসপাতাল অনুব্রতর চিকিৎসা করতে রাজি হয়নি। তাঁকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে সরকার। অতীতে সিবিআই-ইডির হাত থেকে বাঁচতে তৃণমূল নেতারা এসএসকেএমেই ঢুকে পড়তেন। নতুন ঘটনাক্রমে সিবিআইয়ের কাছে যেতেই হবে কেষ্টকে। তার পরেই বীরভূমের নবগ্রহের পালা।
তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর, পাচারের কারবারে পরোক্ষ যোগ পাওয়া গিয়েছে স্থানীয় এক চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের। তিনিই বীরভূমের চার মক্কেলের (সবচেয়ে প্রভাবশালী ৪ তৃণমূল নেতা) সমস্ত লগ্নির হদিশ জানেন। নানা ভুয়ো সংস্থা তৈরি করে জমিজমা থেকে বিভিন্ন ব্যবসায় কীভাবে তৃণমূল নেতাদের লুটের টাকা কোথায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তাও জানা রয়েছে ওই ব্যক্তির। তদন্তকারীর সংস্থা ইতিমধ্যেই তাঁকে কয়েকবার ডেকে পাঠিয়েছে। তদন্তে আরও সহযোগিতা না করলে তাঁকেই তদন্ত প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসতে চায় ইডি-সিবিআই (ED-CBI)।
দিদি’ ফোন ধরছেন না, সিবিআই ডাকে বিচলিত কেষ্টর চোখে ঘুম নেই
হিসাবপরীক্ষক ছাড়া বাকি আটজনই অবশ্য সাধারণ ব্যবসায়ী বা দালাল গোত্রের ব্যক্তি। কিন্তু গত সাত-আট বছরে তারা সকলেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। সিবিআই-ইডির তদন্তকারীদের একাংশ জানাচ্ছেন, সিউড়ি শহরের পুলিশ সুপারের অফিসের কাছাকাছি স্থানে বসবাসকারী এক ব্যক্তি ইদানীং বালি-পাথর-কয়লার ডাক মাস্টার হিসাবে কাজ করছেন। বালি এবং পাথর ব্যবসায়ীদের থেকে টাকা তুলে তিনিই এখন তৃণমূল নেতাদের ঘরে পৌঁছে দিয়ে আসছেন। এই চক্রে সাঁইথিয়াতেও মিলেছে এক অভিষেকের সন্ধান। কে এই নতুন অভিষেক, তাও নজরে রেখেছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। এছাড়া আরও দুই ‘মণ্ডল’ বীরভূমের বালি-পাথরের কারবারে সক্রিয় রয়েছেন। এঁদের কাছেই খাটছে বীরভূমের বিভিন্নস্তরের তৃণমূল নেতাদের কোটি কোটি টাকা। এক ‘বোস’ এবং এক ‘রাজ’-র সন্ধানও তদন্তকারীরা পেয়েছেন। এছাড়াও আছেন দুমকার এক ‘পাঠক’ এবং এক ‘তিওয়ারি’।
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, বীরভূমের তৃণমূল নেতাদের লুট, কাটমানি, তোলাবাজির অধিকাংশ টাকা এই নবগ্রহের কাছেই গচ্ছিত রয়েছে। ফলে তদন্ত প্রক্রিয়ায় এঁরা সহযোগিতা করে নেতাদের টাকার হদিস দিলে ভাল, নইলে বীরভূমের লুটের টাকা ও সম্পত্তি উদ্ধারের অভিযানে আরও বড় জাল নিয়ে নামতে চলেছে ইডি-সিবিআই।
পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে উত্তর বীরভূমের এক জনপ্রতিনিধি ইতিমধ্যেই বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলে খবর। তিনি নিজেও বালি-পাথরের কারবারে রয়েছেন। প্রয়োজন হলে তিনি জোড়াফুল ছেড়ে পদ্মফুল ধরতে প্রস্তুত বলে বার্তা পাঠাতে শুরু করেছেন বলে জানা গিয়েছে। যদিও বিজেপি দুর্নীতিতে যুক্ত কোনও নেতা-নেত্রীকে স্থান দেবে না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে।
+ There are no comments
Add yours