মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ফের টেট (Primary TET) পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ করতে চলেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু পিছু পিছু তৈরি হচ্ছে দুর্নীতির প্রস্তুতিও। যার কেন্দ্রে রাজ্য প্রাথমিক বোর্ডের সচিবের একটি চিঠি। রাজ্য সরকারি সংস্থা ওয়েবেল টেকনোলজি লিমিটেডকে (Webel Technologies) চিঠি লিখে বোর্ডের সচিব পরীক্ষা পরিচালন সংক্রান্ত টেকনো-কমার্শিয়াল প্রস্তাব জমা দিতে বলেছেন। কিন্তু কোন সংস্থাকে দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে, তার নাম ধাম দিয়ে তাদেরকেই কাজটি দিতে বলা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ডের (Primary Education Board) মতে, এই সংস্থাটিই একমাত্র সুন্দরভাবে পরীক্ষা নিতে সক্ষম।
কী রয়েছে চিঠিতে?
২-পাতার চিঠিতে প্রথমেই বলা হয়েছে, চলতি বছরের ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে সম্ভবত টেট পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। সেক্ষেত্রে পুজো শেষ হলেই, আগামী ১৪ অক্টোবর থেকেই অনলাইন রেজিস্ট্রেশন-পর্ব শুরু করা হতে পারে। এই পরীক্ষার জন্য ওয়েবেলের সামনে কী কী কাজের সুযোগ রয়েছে, তা স্পষ্ট করা হয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে—অনলাইন রেজিষ্ট্রেশন পর্বের ওয়েব হোস্টিং ও ক্লাউড সার্ভার গঠন, নতুন ডোমেন ও পেমেন্ট গেটওয়ে তৈরির মতো প্রযুক্তিগত কাজ। এছাড়া রয়েছে হেল্পলাইন থেকে শুরু করে অ্যাডমিট কার্ড ও পরীক্ষার ওএমআর শিট ছাপানো ইত্যাদি।
আরও পড়ুন: পুজোর আগেই টেট উত্তীর্ণ আরও ৬৫ জনকে নিয়োগের নির্দেশ হাইকোর্টের
এতটা পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু, সন্দেহ জাগল চিঠির দ্বিতীয় পাতায় এসে। যেখানে একেবারে চিঠির শেষদিকে বলা হয়েছে— ওপরে উল্লেখ করা কাজগুলোর জন্য পর্ষদ বিভিন্ন ভেন্ডরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। অতঃপর, মেসার্স মেগা ক্যালিবার এন্টারপ্রাইস প্রাইভেট লিমিটেডের দেওয়া সমাধান ভীষণই ভাল বলে মনে হয়েছে। ওপরের কাজগুলোর জন্য তাদের নির্বাচন করা যেতে পারে।
শিক্ষা দফতর থেকে ওয়েবেলে এই চিঠি যাওয়া মাত্র তোলপাড় শুরু হয়েছে। অনেকের প্রশ্ন, বর্তমানে এসএসসি এবং টেট কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমে সিবিআই বেসরকারি সংস্থার কারসাজিতেই সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে বলে জানতে পেরেছে। ওএমআর শিট বদলে দেওয়া থেকে, ফাঁকা শিট জমা নিয়ে পরে তা পূরণ করা সহ নানা অভিযোগ উঠেছে পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বেসরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে। এবার তা হলে ফের একটি নির্দিষ্ট সংস্থাকেই পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার জন্য রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড তৎপর কেন?
তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের প্রশ্ন, যদি সংস্থা বাছাই শিক্ষা দফতরই করে দেয় তা হলে ওয়েবেলের কাছে টেকনো-কমার্শিয়াল প্রস্তাব চাওয়ার কি দরকার? শিক্ষা দফতর এবং তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের একাংশের মতে, শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া এবারও ফিক্সড ম্যাচ হতে চলেছে। আগের বারের মতোই কোন সংস্থা পরীক্ষা নেবে তা বোর্ড ঠিক করে ফেলেছে। সেইমতো, দিল্লির ওই সংস্থার নামও চিঠিতে সুপারিশ করা হয়েছে। অর্থাৎ, ঘুরপথে ওয়েবেলের মাধ্যমে তার বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন: মানিকের অপসারণ বহাল, এখনই চাকরি পাবেন না ২৬৯ জন, নির্দেশ হাইকোর্টের
সরকারি কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, গতবারও কোন সংস্থা পরীক্ষা নেবে তা বিকাশ ভবনই ঠিক করে নিয়েছিল। কিন্তু মৌখিকভাবে ওই সংস্থাকে বরাত দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এবার সেটুকু চক্ষুলজ্জা না রেখে সরাসরি কোন সংস্থা পরীক্ষা নেবে তা আগেই জানিয়ে দিয়েছে প্রাথমিক বোর্ড। এ কথা জেনে বিস্মিত বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, চোরেদের এই সরকারের দুর্নীতি মজ্জাগত। আবার লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থীর জীবন নিয়ে প্রতারণার চক্র শুরু হয়েছে। একমাত্র ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি বা এনটিএ যদি পরীক্ষা নেয় তা স্বচ্ছ হতে পারে।
এসএসসি, টেট কেলেঙ্কারি নিয়ে তোলপাড় রাজ্য। আদালতের নির্দেশে তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হচ্ছে ৫০ কোটি নগদ টাকা। রাজ্যের শাসক দলের হেভিওয়েট মন্ত্রী গারদে। তারপরও, যে রাজ্য শাসক দল ও প্রশাসনের মধ্যে দুর্নীতি নিয়ে যে সামান্যতম হেলদোল নেই, তা এই চিঠিতেই প্রমাণিত।
+ There are no comments
Add yours