মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন ঈদের দিন (Eid 2023) রেড রোডে নামাজ পড়বেন, এরমধ্যে নতুনত্ব কিছু নেই। কিন্তু এবার এই ঘটনাকে ঘিরেই ঝুলি থেকে বেরিয়ে পড়েছে বিড়াল, বিরোধী দলের পক্ষ থেকে এমনই জোরালো অভিযোগ তোলা হয়েছে। রাজ্য সরকারের পূর্ত দফতরের এক টেন্ডার বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যাচ্ছে, রেড রোড এবং ময়দান এলাকা জুড়ে ঈদের নামাজ পড়ার জন্য যাবতীয় বন্দোবস্ত করতে মাঠে নেমেছে রাজ্য সরকারই। তিনটি পৃথক কাজের জন্য সব মিলিয়ে বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ২৬ লক্ষ টাকা। বিরোধী মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, কোনও একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ধর্মাচরণের জন্য রাজ্য সরকার কি এভাবে দরাজ হস্তে দানধ্যান করতে পারে?
ঈদের টেন্ডার বিজ্ঞপ্তিতে ঠিক কী বলা হয়েছে?
এবার ৫ ই এপ্রিল জারি করা ওই টেন্ডার বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যাচ্ছে, ঈদ-উল-ফিতর (Eid 2023) উপলক্ষে আশপাশের গ্রাউন্ড থেকে আবর্জনা সরানো, মাঠ পরিষ্কার করা, বাস্কেটবল ক্লাবের সামনে জমে থাকা জলকাদা বালি দিয়ে ভর্তি করা ইত্যাদি কাজের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৬ লক্ষ ৪৯ হাজার ১৩ টাকা। ঈদ-উল-ফিতরের জন্য অস্থায়ী প্যান্ডেল, স্টেজ এবং আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র তৈরির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৯ লক্ষ ৯৭ হাজার ৮৮৯ টাকা। ময়দান এলাকায় গেট এবং এই সংক্রান্ত কাজের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৯ লক্ষ ৯৮ হাজার ৭৮৯ টাকা। এই সমস্ত কাজই তিনদিনের মধ্যে শেষ করার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এমনকি টাকা আরও লাগলে দেবে গৌরী সেন, এমনও আশ্বাস দিয়ে রাখা হয়েছে।
দল এবং সরকার একাকার হয়ে গিয়েছিল তৃণমূলের সভাতেও
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে একই ধরনের একটি ঘটনা এভাবেই প্রকাশ্যে এসেছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা ছিল শহিদ মিনারে। আর ওই সভার জন্য যাবতীয় বন্দোবস্ত করতে মাঠে নেমেছিল খোদ রাজ্য সরকার। সেবারও দেখা গিয়েছিল, পূর্ত দফতর রেড রোড এবং আশপাশের এলাকায় প্যান্ডেল তৈরি, ব্যারিকেড বসানো ইত্যাদি কাজের জন্য তড়িঘড়ি টেন্ডার ডেকেছিল। তখনও প্রশ্ন উঠেছিল, একটি রাজনৈতিক দলের জন্য সরকার কি এভাবে টাকা খরচ করতে পারে? বিরোধীরা তখনও তীব্র সমালোচনা করে বলেছিল, দল ও সরকার যে একাকার হয়ে গেছে, এটাই তার বড় প্রমাণ।
তোষণের রাজনীতিরই জ্বলন্ত প্রমাণ, তোপ বিজেপির
ঈদের (Eid 2023) ওই টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ্যে আসতেই বিজেপি নেতৃত্ব রাজ্য সরকারের ব্যাপক সমালোচনায় নেমেছে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, সরকার তাহলে সব জায়গাতেই নামাজ পড়ার জন্য খরচের ব্যবস্থা করুক। আর শুধু একটি ধর্ম কেন, সব ধর্মের জন্যই সরকার এমন দরাজহস্ত হোক। পরে এ ব্যাপারে ট্যুইট-বাণও নিক্ষেপ করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা।
PWD has floated a tender for constructing a Pandal at Red Road for Id Ul Fitar. Why not for all the Idgahs across WB? Are those Namazis less important?
— Suvendu Adhikari • শুভেন্দু অধিকারী (@SuvenduWB) April 20, 2023
Similarly from now on PWD should float tenders for constructing Pandals for the biggest festivals of WB; Durga Puja & Kali Puja. pic.twitter.com/6zwY9TqF4W
বিজেপির সাফ কথা, তৃণমূল সরকারের তোষণের রাজনীতি যে কোন পর্যায়ে পৌঁছতে পারে, তার আরও একটি জলজ্যান্ত প্রমাণ সামনে এল। বিজেপি নেতৃত্ব বলছে, যে রাজ্যে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সরস্বতী পুজো বন্ধ করে দেওয়া হয়, দুর্গাপুজোর বিসর্জনের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়, রাজ্যের একাধিক জায়গায় মিছিলে নির্লজ্জ আক্রমণের ঘটনা ঘটে, সেখানে ঈদের নামাজের যাবতীয় খরচ বহন করছে রাজ্য সরকার? এরপরেও সাধারণ মানুষের আর বোঝার কিছু বাকি থাকে কি?
বিজেপি নেতৃত্বের কটাক্ষ, মুসলিমদের ঠকিয়ে রাজনীতি করার দিন যে শেষ, তা সাগরদিঘিই বুঝিয়ে দিয়েছে। তৃণমূল সরকারের শেষের সেই দিন যে এগিয়ে আসছে, তা এই ধরনের তোষণনীতি থেকেই পরিষ্কার।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours