মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: এলিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রাণীদের নিয়ে উৎসাহ নেই, এরকম মানুষ খুব কমই আছে। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এই ভিনগ্রহের প্রাণীদের নিয়ে বিভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে। কিছু দেশ এই ভিনগ্রহের প্রাণীদের অস্তিত্ব নিয়ে সদর্থক মতামত প্রকাশ করেছে, কেউ কেউ আবার ইউএফও দেখতে পাওয়ার দাবিও করেছেন। এই ধরনের বহু তথ্য ইন্টারনেট ঘাঁটলে আমরা দেখতে পাই। তবে যে বিষয় নিয়ে এই প্রতিবেদন, সেটি হল আমেরিকার 'Area 51' বলে একটি স্থান, যেখানে কয়েক বছর থেকে স্থানীয়রা দাবি করে আসছেন, সেখানে কিছু গুপ্ত গবেষণা করা হয় ভিনগ্রহের প্রাণীদের নিয়ে। অনেকে সেখানে ইউএফও দেখার দাবিও করেছেন। আর সেগুলি আমেরিকান সেনা বরাবর সাধারণের থেকে লুকিয়ে এসেছে বলে অভিযোগ। এগুলি মিথ না মিথ্যা, তা নিয়েও অনেক জলঘোলা হয়েছে।
কী এই Area 51, যা নিয়ে আমেরিকাবাসী ও বিশ্ববাসীর এত উৎসাহ?
এরিয়া 51 হল আমেরিকার নেভাডা টেস্ট অ্যান্ড ট্রেনিং রেঞ্জের অন্তর্গত মরুভূমির গ্রুম হ্রদের তীরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিমান বাহিনীর (ইউএসএএফ) একটি উচ্চ শ্রেণিবদ্ধ অপারেশন ঘাঁটি। এটি নানারকম সামরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণের কেন্দ্র। এটি একটি বিরাট গোপন সামরিক বিমানঘাঁটি, যেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ। এই এরিয়া 51-এর মূল উদ্দেশ্য হল, পরীক্ষামূলক উড়োজাহাজ তৈরি, অস্ত্রশস্ত্রের সিস্টেমের পরীক্ষা প্রভৃতি।
Area 51 কেন বরাবর মানুষের চর্চার বিষয়? কী এমন হয় সেখানে?
এই স্থানটি সবসময় চর্চায় উঠে আসার মূল কেন্দ্রবিন্দু হল, এই এরিয়া 51 কে ঘিরে গড়ে ওঠা ভিনগ্রহের প্রাণীদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য। এরিয়া ৫১ এর জল্পনা শুরু হয় ১৯৪৭ সালে রোসোয়েল নামক এক জায়গায় একটি বিমান দুর্ঘটনার পর থেকেই। বিমান দুর্ঘটনার পর বিমানের ভেঙে যাওয়া অনেক টুকরো সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় এবং সেই টুকরোগুলি সাধারণ মানুষের হাতে আসে। পরে তাঁরা বুঝতে পারেন, সেই টুকরোগুলি সাধারণ কোনও বিমানের অংশ নয়। অনেকে তখন থেকে মনে করেন, সেগুলি ছিল কোনও স্পেসশিপ-এর টুকরো, যার চালক ছিল ভিনগ্রহের কোনও প্রাণী। এমনও শোনা যায়, সেখান থেকে জীবিত ভিনগ্রহের প্রাণীটিকে উদ্ধার করে ইউএস আর্মি এবং সেটিকে Area 51 এ নিয়ে যায়। সেখানে সেই এলিয়েনটিকে নিয়ে নানা গবেষণা তাঁরা করেন। এখনও সেখানেই নাকি রাখা আছে সেই ভিনগ্রহের প্রাণীটি।
Area 51 এর বিজ্ঞানীরা সেই এলিয়েনটিকে গবেষণার মাধ্যমে তাঁদের ব্যবহৃত প্রযুক্তিকে রপ্ত করতে চাইছেন, যা আমাদের পৃথিবীর সামরিক শক্তিকে হয়তো আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। কিন্তু এসব রটে যাওয়ার পরেই ইউএস আর্মি মুখ খোলে এবং জানায়, সেখানে কোনও স্পেসশিপের দুর্ঘটনা ঘটেনি। যেসব টুকরো সেখান থেকে পাওয়া গেছে, সেগুলি একটি বড় ওয়েদার বেলুনের। এখানে এলিয়েন থিওরিকে জুড়ে দেওয়া সম্পূর্ণ রটনা মাত্র। অন্যদিকে সম্পূর্ণ বিষয়টি গোপন করা হয় বলে দাবি তুলতে থাকে সাধারণ মানুষ। এরপর থেকেই এরকম নানা ঘটনা এই এরিয়া 51 কে কেন্দ্র করে ঘটতে থাকে।
অনেকবার শিরোনামে উঠে আসে এই Area 51, কিন্তু কেন?
এই Area 51 কে নিয়ে বিভিন্ন রটনার পরিপ্রেক্ষিতে এবার মুখ খোলে আমেরিকান সরকার। সরকারের তরফে জানানো হয়, গুপ্তচর সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি ১৯৫৫ সালে যুদ্ধ বিমানের পরীক্ষার জন্য প্রথম এই জায়গাটিকে ঘাঁটি হিসেবে তৈরি করে এবং এই প্রজেক্টের নাম দেওয়া হয় 'অ্যাকোয়াটোন'। 'লকহিড ইউ-২' নামক এক ইঞ্জিনের গবেষণা ও পরীক্ষা এখানে করা হয়, যা সাধারণ যুদ্ধ বিমানের থেকে আরও বেশি উচ্চতায় উড়তে সক্ষম। এর পরেও 'ড্রাগন লেডি' নামক এক যুদ্ধ বিমানের পরীক্ষামূলক উড়ান এই Area 51 থেকেই লোকচক্ষুর আড়ালে করা হয়। ১৯৫৫ সালে এই যুদ্ধ বিমানের পরীক্ষামূলক উড়ান শুরু হওয়ার পর থেকেই স্পেসশিপ দেখতে পাওয়ার অভিযোগ উঠতে থাকে। সাধারণ মানুষের তরফ থেকে দাবি উঠতে থাকে, কোনও সাধারণ যুদ্ধবিমান এত উচ্চতায় উড়তে পারে না। জানা যায়, বিমানটি ৪৫ হাজার ফুট উচ্চতায় উঠতে সক্ষম। মানুষ দাবি করতে থাকে, এত উচ্চতায় উড়তে সক্ষম কোনও বিমান সাধারণ বিমান নয়, এটি একটি স্পেসশিপ যা এরিয়া ৫১ সবসময় সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লুকিয়ে এসেছে। এত উচ্চতায় ওড়ার ঘটনা আবার ভিনগ্রহীদের অস্তিত্বের যুক্তিকে তুলে আনে। মার্কিন সেনাবাহিনী অবশ্য আজও এই বিষয়ে কোনও তথ্য জনসমক্ষে জানায়নি। ভিনগ্রহীদের উপস্থিতিকে তারা গুজব বলেই দাবি করে এসেছে চিরকাল।
কী দেখেছেন পাশের গ্রামের বাসিন্দারা?
আবার এই Area 51 এর পাশেই একটি গ্রাম আছে, যেখানকার বাসিন্দারা দাবি করেন, এই স্থানে অনেকরকম অসংগতিপূর্ণ জিনিস দেখা যায়। রাতের আকাশে অনেক লাইটকে একসঙ্গে উড়তে এবং নিচে নেমে আসতে দেখেছেন তাঁরা। তাঁরাও বিশ্বাস করেন, এর ভিতর এমন কিছু একটা হয়, যেটা সরকার ও ইউএস আর্মির পক্ষ থেকে সবসময় সাধারণ মানুষের কাছে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। এরিয়া ৫১ এর জায়গায় প্রায় কয়েক কিলোমিটার দূরে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে সতর্কবার্তা দিয়ে রেখেছে কর্তৃপক্ষ, যেখানে ছবি তোলা নিষেধ ও আগে যাওয়া নিষেধ বলে লেখা আছে। অন্যথায় শাস্তি পর্যন্ত হতে পারে বলে উল্লেখ করা আছে। এলিয়েন থিওরি বা স্পেসশিপ থিওরি সত্যি হোক বা মিথ্যা, এই এরিয়া ৫১ আজও সক্রিয় এবং অনেক সাধারণ মানুষের কৌতূহলের স্থান হিসাবেই বিবেচিত।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours