মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। বিপ্লবীদের উপর নির্মম অত্যাচারে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন তাঁর প্রশ্ন কবিতা। দেশকে স্বাধীন করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল একদল তরুণ তরুণী। আজ যেখানে আইআইটি খড়গপুর (IIT Kharagpur), সেখানেই ছিল বিপ্লবীদের বন্দিনিবাস। সশস্ত্র আন্দোলন হোক কিংবা অসহযোগ আন্দোলন, ব্রিটিশ পুলিশের হাতে বন্দি হতে হয়েছিল একাধিক স্বাধীনতার সংগ্রামীকে। বন্দি করা হয় হিজলী বন্দি নিবাসে। এই জেলের মধ্যে অন্যতম বন্দি ছিলেন বিপ্লবী সন্তোষ মিত্র।
কার নামে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার?
ছাত্রাবস্থায় রাজনীতিতে আকৃষ্ট হন সন্তোষ মিত্র। তাঁর জন্ম ১৯০০ সালের ১৫ অগাস্ট এবং মৃত্যু ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৩১। মাত্র ৩১ বছরের জীবন, দেশের স্বাধীনতার জন্য নিবেদন করেছিলেন। ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার ফলে কারাদণ্ড হন। এছাড়াও শ্রমিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন। ১৯২৩ সালে গুপ্ত বিপ্লবী দলের সঙ্গে যোগদান করে বিপ্লবী কর্মে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম করেন ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে। চট্টগ্রামে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দলেনের সময় গোপনে অস্ত্র সরবরাহ করতেন বিপ্লবীদের। এরপর গ্রেপ্তার হলে তাঁকে হিজলী (IIT Kharagpur) জেলে পাঠানো হয়। কলকাতা শহরে আজকের দিনে সবথেকে বড় দুর্গা পুজো গুলির মধ্যে একটি পুজো হল, বিপ্লবী সন্তোষ মিত্রের নামাঙ্কিত পার্কের পুজো সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজো।
হিজলী জেল (IIT Kharagpur) এক ঐতিহাসিক পীঠস্থান
১৯৩১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর রাত্রি প্রায় সাড়ে নটা নাগাদ, নিরস্ত্র বন্দিদের উপর অতর্কিতে আক্রমণ চালায় ব্রিটিশ সেনাবাহিনী। চালানো হয় গুলিও। নিরস্ত্র বন্দিদের উপর গুলি চালানোর ঘটনায় মৃত্যু হয় দুই বীর বিপ্লবীর। এই দুই বিপ্লবীরা হলেন সুভাষচন্দ্র বসুর সহপাঠী সন্তোষ মিত্র এবং মাস্টারদা সূর্যসেনের অনুগামী তারকেশ্বর সেনগুপ্ত। ১৯১৯ সালের জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে নাইট উপাধি ত্যাগ করেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। হিজলী (IIT Kharagpur) হত্যাকাণ্ডের পর রবীন্দ্রনাথ লিখলেন প্রশ্ন কবিতা, “ভগবান তুমি যুগে যুগে দূত পাঠায়েছ বারে বারে, দয়াহীন সংসারে।”
আজকের আইআইটি খড়্গপুর
এখন যেখানে খড়্গপুর আইআইটির (IIT Kharagpur) পুরনো ভবন, পরাধীন ভারতে সেখানেই ছিল হিজলি বন্দিনিবাস। অদূরে প্রথম মহিলা জেল। ১৬ সেপ্টেম্বরের সেই রাতে হিজলি বন্দি নিবাসে ‘পাগলা ঘন্টা’ বাজিয়ে নির্বিচারে গুলি চালায় ইংরেজ পুলিশ। খবর পেয়ে সুভাষচন্দ্র ও যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত হিজলিতে আসেন। হিজলি ও চট্টগ্রাম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ওই বছর ২৬ সেপ্টেম্বর কলকাতায় একটি সভা হয়। সভাপতিত্ব করেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বর্তমানে আইআইটি নির্মিত হয়েছে বন্দিনিবাসের বিশাল ইমারতে। বর্তমান প্রজন্ম মনে রাখে না ইতিহাস, মনে রাখে না সংগ্রামের কালো দিনের কথা। স্বাধীনতা দিবসে ফের স্মৃতিতে অম্লান হিজলীর সেদিনের সেই কালো ঘটনার কথা।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours