মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: হিন্দু বিবাহ থেকে শুরু করে পূজার্চনা, সব জায়গাতেই গোত্রের (Gotra) প্রয়োজনীয়তা কতখানি, তা আমরা কমবেশি সকলেই জানি। এক এক জনের গোত্র ভিন্ন ভিন্ন। কিন্তু কোনও দিন কি ভেবে দেখেছেন, এই গোত্রের উদ্ভব কী করে হল? কী এর গুরুত্ব? আমাদের নিজেদের গোত্র আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু বাড়িতে প্রশ্ন করলেও অনেক সময় সঠিক উত্তর মেলে না, এই গোত্র আসলে কী? কিছু ধর্মপ্রাণ মানুষ এবং পুরোহিতের কাছ থেকে জানা যায়, এই গোত্র আসলে একেক জন প্রাচীন ঋষির নাম অনুসারে তৈরি হয়েছে। আর প্রত্যেক মানুষ মনে করেন, সেই অনুসারে তাঁরা সেই ঋষির বংশধর। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, কাশ্যপ গোত্রের মানুষ মনে করেন, প্রাচীন যুগে কাশ্যপ নামক এক ঋষি ছিলেন। তাঁর নাম অনুসারেই এই গোত্রের নামকরণ হয়েছে।
গোত্রের (Gotra) উদ্ভব কীভাবে?
গোত্র (Gotra) শব্দটির প্রথম নিদর্শন মেলে ঋকবেদে। কিন্তু সেখানে এই গোত্র শব্দটি অন্য অর্থে ব্যবহৃত হয়েছিল। সেই সময় গোত্র বলতে বোঝাত ‘গরুর পাল’। আবার ছান্দোগ্য উপনিষদ্-এ গোত্র হিসাবে একটি মানব গোষ্ঠীকে বোঝানো হয়েছে। এই গোত্রগুলির উদ্ভব যে একজন ঋষির নাম থেকে হয়েছে এবং এগুলি তাঁদের বংশধররা বহন করছেন, তা এই সময় থেকেই মনে করা শুরু হতে থাকে। কিন্তু এই গোত্র প্রথা তখন শুধুমাত্র ব্রাহ্মণদের মধ্যে প্রচলিত ছিল। পরে তা ক্ষত্রিয় ও পরিষদের মধ্যেও ব্যবহৃত হতে শুরু হয়। ব্রাহ্মণ্যবাদ অনুযায়ী ব্রাহ্মণ গোষ্ঠী মোট সাত জন বৈদিক ঋষির বংশধর, এমনটাই মনে করা হয়। এই সাত জন ঋষি হলেন গৌতম, ভরদ্বাজ, বিশ্বামিত্র, জমদগ্নি, বশিষ্ঠ, কাশ্যপ ও অত্রি। পরবর্তী ক্ষেত্রে এই গোত্রগুলি থেকেই আরও ৪৯ টি উপ গোত্রের উদ্ভব হয়। আবার এই ব্রাহ্মণদের অনুসরণ করে ক্ষত্রিয় এবং পরিষদের মধ্যেও গোত্র প্রথা শুরু হয়।
গোত্রের গুরুত্ব কী?
প্রাচীনকালের এই গোত্র (Gotra) প্রথা আজ বর্তমান যুগেও এক ঐতিহ্যবাহী ভূমিকা পালন করে চলেছে। সাধারণত একেকটি গোত্র বংশ পরিচয় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করে। আসলে প্রাচীন যুগে বর্ণভেদ প্রথা অনুযায়ী সকল বর্ণকে আলাদা আলাদা শ্রেণিবদ্ধ করার জন্য এই গোত্রের ব্যাবহার করা হত। আজও কোনও শুভ কাজের সময় গোত্র অনুসারে গুরুত্ব বিবেচনা করা হয়। পূজার্চনা, বিবাহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে গোত্র খুবই প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে।
একই গোত্রের (Gotra) মানুষের বিবাহ হয় না, কেন জানেন?
প্রাচীনকাল থেকে বিশ্বাস করা হত, একই গোত্রের (Gotra) মধ্যে বিবাহ সম্পন্ন করা যায় না। কারণ একই গোত্রের যারা হয়, তারা ভাই-বোনের সম্পর্ক বহন করে। তাহলে তারা স্বামী স্ত্রী হবে কী করে? সেই কারণেই এমন প্রথা মানা হত, যা আজও মানা হয়।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours