মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভরা গ্রীষ্মের দুপুরে তরমুজ এক আলাদা তৃপ্তি দেয়। আর গ্রীষ্মের শেষ হতে না হতেই বাজারে আকাল পড়ে তরমুজের। আবার এক বছর অপেক্ষার পর পাওয়া যায় তরমুজ। কিন্তু কখনও কি শুনেছেন চির ঠান্ডার দেশে বরফমোড়া স্থানে চাষ হয় তরমুজের (Watermelon Cultivation), আর তার ফলনও চোখে পড়ার মতো! হ্যাঁ, এই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছেন একদল রাশিয়ান বিজ্ঞানী।
শীতলতম স্থানেই তরমুজ চাষ (Watermelon Cultivation) নিয়ে গবেষণা!
রাশিয়ার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কেন্দ্র ভোস্টক স্টেশন। এটি পৃথিবীর শীতলতম স্থান হিসাবেই পরিচিত। এখানে রাশিয়ান বিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরে নানা গবেষণা করে চলেছেন। এই স্থানের তাপমাত্রা সব সময় প্রায় -89.2 ডিগ্রির কাছাকাছি থাকে। অবাক করা বিষয়, আজ থেকে প্রায় ৪৩০০ বছর আগে সুদানে প্রথম বারের মতো তরমুজ নামক ফলটি জন্ম নিয়েছিল। আর সেখান থেকেই গোটা পৃথিবীতে আস্তে আস্তে তা ছড়িয়ে পড়ে। সুদানের সাক্কারায় প্রথম তরমুজের দেখা মেলে, যা কিনা আন্টার্টিকার ঠান্ডা থেকে অনেক অনেক দূরে। যেখানে কোনও ভাবেই ঠান্ডাতে তরমুজ চাষের সম্ভাবনা নেই, সেখানেই তরমুজ গাছ বেড়ে ওঠা ও তরমুজ জন্ম নেওয়াতে (Watermelon Cultivation) বিজ্ঞান মহল হতবাকও।
কীভাবে এই অসম্ভবকে সম্ভব (Watermelon Cultivation) করেছেন বিজ্ঞানীরা?
প্রথমত, এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন অ্যান্টার্কটিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রুশ গবেষকরা। তার সঙ্গে এগ্রোফিজিকাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও রাশিয়ান অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস-এর বায়োমেডিক্যাল ইনস্টিটিউটের গবেষকরা একত্রিত হয়ে এই গবেষণাকার্য চালিয়েছেন এবং বরফে তরমুজ জন্মানো (Watermelon Cultivation) সম্ভব করেছেন। ভোস্টক স্টেশনে বিজ্ঞানীরা একটি গ্রিন হাউস চেম্বার তৈরি করেছেন। এই গ্রিন হাউস চেম্বারটিকে এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে ভিতরের তাপমাত্রা সহজে কমানো এবং বাড়ানো যেতে পারে। তাছাড়া তরমুজ চাষের জন্য যা যা পরিবেশের প্রয়োজন, সমস্তটাই কৃত্রিমভাবে তৈরি করেছেন তাঁরা।
কৃত্রিমভাবে তৈরি করেছেন সূর্যালোকও
তরমুজ চাষের জন্য যে সূর্যালোকের প্রয়োজন, সেই সূর্যালোকও কৃত্রিম ভাবে তৈরি করেছেন এই রাশিয়ান বিজ্ঞানীরা। গ্রিন হাউস চেম্বারের ভিতর এক রকম বিশেষ আলোর ব্যবহার করা হয়েছে যা অবিকল সূর্যালোকের মতো। বিজ্ঞানীরা দুটি প্রজাতির তরমুজ এই চাষের জন্য (Watermelon Cultivation) বেছে নিয়েছিলেন, যেগুলি খুব সহজেই এবং তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে। কোনও স্থানে অক্সিজেনের ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও সেই স্থানে এই তরমুজ চাষ ও অন্যান্য উদ্ভিদ বেড়ে ওঠা সম্ভব কিনা, এই উদ্দেশ্যেই তাঁরা এই গবেষণা শুরু করেছিলেন। শুধু সূর্যালোকই নয়, বরফের দেশে চাষের জন্য কৃত্রিম মাটিরও সৃষ্টি করেছিলেন এই বিজ্ঞানীরা। এই কৃত্রিম মাটিতেই বপন করা হয়েছিল বীজ। অক্সিজেন বিহীন এই ঠান্ডার দেশে পরাগায়নের জন্য কোনও পোকার উপস্থিতি না থাকায় বিজ্ঞানীরা নিজ হাতে পরাগায়ন ঘটিয়েছিলেন। বীজ রোপনের প্রায় ১০৩ দিন পর প্রথম আটটি পাকা ও মিষ্টি তরমুজ গাছের দেখা মেলে এই স্থানে। এই গাছে যে তরমুজগুলি জন্মেছিল, সেগুলির এক একটির ওজন প্রায় দুই পাউন্ড অর্থাৎ ১ কেজি ওজনের।
শুধু তরমুজ (Watermelon Cultivation) নয়, চাষ আরও অনেক কিছুরই
এই স্থানে তরমুজ চাষ (Watermelon Cultivation) ছাড়াও আরও নানা বিষয়ে গবেষণা করে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। ২০২০ সালে, ভোস্টক স্টেশনে তুলসী, পার্সলে এবং বাঁধাকপির মতো উদ্ভিদ চাষ করেছেন। তাছাড়াও কোরিয়ান বিজ্ঞানীরা এই স্থানে চাষ করার চেষ্টা করেন। কিছু ক্ষেত্রে তাঁরাও সফলতা অর্জন করেন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours