তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
আধুনিক জীবনে রোগের ধরন বদলে যাচ্ছে। ভারতীয়দের অধিকাংশ শারীরিক সমস্যাই এখন জীবন যাপনের ধরন সম্পর্কিত। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ভারতীয়দের অতিরিক্ত নুন খাওয়ার (Salt in Diet) অভ্যাস নানা শারীরিক সমস্যা তৈরি করছে। ফলে, একাধিক নিঃশব্দ মহামারি হানা দিচ্ছে। জীবন শেষ হয়ে যাওয়ার পরে, তার প্রভাবের ভয়াবহ রূপ নিয়ে মানুষ বুঝতে পারছেন।
কীভাবে নুন সমস্যা বাড়াচ্ছে?
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, অতিরিক্ত নুন এবং তেল সমস্যা বাড়াচ্ছে। দিনে যেমন চার চামচের বেশি তেল খাওয়া উচিত নয়, তেমনি নুন খাওয়ার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকা দরকার। দিনে ২ গ্রামের বেশি নুন খাওয়া উচিত নয়। কিন্তু অধিকাংশ ভারতীয় দিনে ১০ গ্রামের বেশি নুন খান। এর ফলে দেহে নুন চাহিদার তুলনায় বেড়ে যায়। সবজি কিংবা মাছ-মাংস রান্না করার সময় নুন ব্যবহার ছাড়াও অনেকের আলাদা ভাবে নুন খাওয়ার (Salt in Diet) অভ্যাস রয়েছে। যা শরীরের জন্য আরও সমস্যা বাড়ায়। কারণ, চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, নুন রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা তৈরি করে। ফলে শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হয়।
কোন রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে নুন (Salt in Diet)?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, অতিরিক্ত নুন খেলে (Salt in Diet) সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি বাড়ে হাইপারটেনশনের। রক্তচাপ ওঠা-নামা করে। যার ফলে শরীর অস্থির হয়ে ওঠে। সর্বোপরি হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। একাধিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভারতীয়দের মৃত্যুর কারণ হিসাবে তালিকায় প্রথমেই রয়েছে হৃদরোগ। হার্ট অ্যাটাকের জেরে প্রতি বছর কয়েক লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। আর হৃদরোগ বেড়ে চলার অন্যতম কারণ হাইপারটেনশন। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, হাইপারটেনশন একটা জীবন যাপনের ধরন সংক্রান্ত রোগ। তাই খাবারের ধরন বদল করলেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে।
হাইপারটেনশনের পাশাপাশি অতিরিক্ত নুন খেলে কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে। পা ফুলে যাওয়া, কিডনিতে সমস্যার মতো একাধিক রোগের কারণ অতিরিক্ত নুন খাওয়া। এছাড়াও শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ অতিরিক্ত পরিমাণ নুন খাওয়া। তাই চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, অতিরিক্ত নুন একাধিক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
কোন পরিবর্তনের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা?
বিশেষজ্ঞ মহলের পরামর্শ, জীবন যাপনে বদল আনলেই বড় বিপদ এড়িয়ে চলা যাবে। তাই প্রথমেই তেল ও নুন খাওয়ায় (Salt in Diet) নিয়ন্ত্রণ জরুরি বলেই পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ মহল। তাঁরা জানাচ্ছেন, স্যালাড বা ওই জাতীয় খাবার খাওয়ার সময় একেবারেই অতিরিক্ত নুন মেশানো চলবে না। অনেকেই শশা, পেঁপে, পেয়ারা জাতীয় খাবারে নুন মিশিয়ে খান। সেগুলো একেবারেই করা চলবে না। তাছাড়া, ফ্রোজেন খাবার, যেমন বার্গার, হটডগ, এই জাতীয় খাবারে যে ধরনের মাংস ব্যবহার করা হয়, তাতে অতিরিক্ত নুন থাকে। তাই এই খাবার একেবারেই খাওয়া উচিত নয় বলে জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদদের একাংশ।
তবে, নুন খাওয়া কমানোর পাশপাশি তেলের দিকেও নজর দিতে হবে। অতিরিক্ত তেল হৃদরোগের ঝুঁকি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। তাই তেলেভাজা, কিংবা অতিরিক্ত মশলা দেওয়া খাবার একেবারেই খাওয়া চলবে না। পাশপাশি অতিরিক্ত ফ্যাট জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে, জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাইপারটেনশনের মতো নিঃশব্দ মহামারি রুখতে খাবারের পাশপাশি নির্দিষ্ট সময়ে বিশ্রাম নেওয়া, মানসিক চাপ কমানোর জন্য দিনের নির্দিষ্ট সময় পরিবারের জন্য বরাদ্দ করা, সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার মতো অভ্যাস রাখা জরুরি। কারণ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ জীবন যাপনের জন্য শরীর ও মন সুস্থ রাখা দরকার।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ
+ There are no comments
Add yours