তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
বয়সের সীমানায় আর আটকে থাকছে না। বিপদ এখন তিরিশের চৌকাঠের আগেই। ভারতে বাড়ছে স্ট্রোকের (Stroke) ঘটনা। মস্তিষ্কের স্নায়ুর সমস্যা থেকেই স্ট্রোক হয়। ভারত সহ গোটা বিশ্বে মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ স্ট্রোক। অর্থাৎ, পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারত তথা গোটা বিশ্বে যত মানুষ প্রত্যেক বছর মারা যাচ্ছেন, তাদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ স্ট্রোক। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কয়েক দশক আগেও পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে দেখা গিয়েছে, কম বয়সীদের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ছে। এর ফলে আজীবন পঙ্গু হয়ে থাকার ঝুঁকিও দেখা দিচ্ছে।
কী বলছে পরিসংখ্যান? (Stroke)
সম্প্রতি প্রকাশিত এক আন্তর্জাতিক সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ছে। ২৫-৩০ বছর বয়সীদের প্রায় ৩০ শতাংশের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি দেখা দিচ্ছে। এই ঝুঁকি যথেষ্ট উদ্বেগের বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, স্ট্রোক হলে অনেকে প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাওয়া যায় না। তাঁদের নানান স্নায়বিক সমস্যা হয়। তাঁরা কাজ করতে পারেন না। তাই তরুণ প্রজন্মের মধ্যে স্ট্রোকের (Stroke) ঝুঁকি বেশি দেখা দিলে, তা বাড়তি উদ্বেগের বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।
কাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি?
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, রক্তচাপ ওঠানামা করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। তাঁরা জানাচ্ছেন, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তের প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। তাই তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি হচ্ছে। পাশপাশি, তরুণ প্রজন্মের বড় অংশের রাতে ঘুমের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। অধিকাংশের রাত জেগে অফিসের কাজ করতে হয়। কিংবা দীর্ঘ সময় ল্যাপটপের সামনে বসে থাকতে হয়। রাতে পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া এবং দীর্ঘ সময় এক জায়গায় বসে থাকার জেরে একাধিক হরমোন ঘটিত ও স্নায়বিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর জেরে স্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি হয়।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ডায়াবেটিস আক্রান্তদের স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। ভারতে কম বয়সীদের মধ্যে ডায়বেটিস বাড়ছে। কর্মক্ষেত্রের চাপ, আধুনিক ব্যস্ত জীবনের জটিলতা হাইপারটেনশনের সমস্যা ডেকে আনছে। ডায়বেটিসের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাই সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে স্ট্রোকের ঝুঁকি।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, স্থূলতা স্ট্রোকের (Stroke) ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে খাদ্যাভ্যাস সংক্রান্ত নানান সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অনেকের খাবার খাওয়ার ব্যবধান অনেক বেশি হচ্ছে। আবার অনেকেই ফাস্ট ফুডে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। আর এগুলো স্থূলতার সমস্যা তৈরি করে। তাই বাড়ছে স্ট্রোকের ঝুঁকি।
কী পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ মহল?
বিশেষজ্ঞদের একাংশের পরামর্শ, হাইপারটেনশনকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। কর্মক্ষেত্রে হোক কিংবা ব্যক্তিগত জীবন, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তবেই স্ট্রোকের ঝুঁকি কমবে। তাই নিয়মিত যোগাভ্যাসের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, যোগাভ্যাস একদিকে শরীর সুস্থ রাখে, আরেকদিকে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে। মানসিক চাপ, অবসাদের মতো সমস্যাকে রুখতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত যোগাভ্যাস করলে স্ট্রোকের (Stroke) ঝুঁকি কমবে।
এর পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসের দিকেও নজর দেওয়া জরুরি বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞ মহল। তাঁরা জানাচ্ছেন, খাবার খাওয়ার মাঝের ব্যবধান কমাতে হবে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরিমিত খাবার খাওয়া দরকার। যাদের কাজের চাপে সময় মতো খাওয়া হয় না, তাদের জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, ড্রাই ফ্রুটস, বিস্কুট, ফলের মতো খাবার সঙ্গে রাখা দরকার।
বিরিয়ানি, পিৎজা, বার্গারের মতো খাবার একেবারেই এড়িয়ে চলতে হবে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা জানান, স্থূলতা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে পারবে তরুণ প্রজন্ম।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours