মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: উত্তর ২৪ পরগনার (North 24 Parganas) আমডাঙায় তৃণমূল প্রধান মহম্মদ রূপচাঁদ মণ্ডল খুনের ঘটনায় অবশেষে পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতের নাম আনোয়ার হোসেন। তার বাড়ি বোদাই এলাকায়। তার বাবা তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত। ফলে, গোষ্ঠী কোন্দলের যে অভিযোগ উঠছে, এই গ্রেফতারির ঘটনায় তা আরও জোরালো হল।
কে এই রূপচাঁদ? (North 24 Parganas)
রূপচাঁদের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার (North 24 Parganas) আমডাঙায়। তিনি এক সময় এলাকায় ছোটখাট জমির দালালি করতেন। রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর শাসক দলের নেতার সঙ্গে তিনি ওঠাবসা শুরু করেন। সামান্য জমির দালালি করা রূপচাঁদ রাতারাতি জমি মাফিয়া হয়ে ওঠেন। দুহাতে টাকা কামাতে থাকেন। সব সময় চারচাকা করে এলাকা ঘুরতেন তিনি। তৃণমূল দল করলেও কোনও পদ না থাকায় রাজনৈতিক সম্মান মিলছিল না তাঁর। তাই, পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়ানোর মনস্থির করে্ন। কিন্তু, প্রথমে টিকিট না মিললেও নিজের বিভিন্ন স্তরে প্রভাব খাটিয়ে তিনি তৃণমূলের প্রার্থী হন। ভোটে জিতেও যান। ভোটে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেছিলেন বলে এলাকায় কান পাতলেই শোনা যায়। পঞ্চায়েত সদস্য হিসেবে তিনি থাকতে রাজি ছিলেন না। তাই, তিনি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়েও প্রধান হয়েছিলেন। বিনিময়ে ১০ লক্ষ টাকা তাঁকে দিতে হয়েছিল বলে দলের অন্দরে গুঞ্জন রয়েছে। শুরু হয়েছিল ক্ষমতা আর এলাকা দখলের লড়াই। ফলে, রাজনীতির থেকে তাঁর ব্যক্তিগত শত্রু বেড়ে গিয়েছিল। আর তাঁর পরিণতিতেই অকালেই খুন হতে তাঁকে।
কেন খুন?
উত্তর ২৪ পরগনার (North 24 Parganas) আমডাঙা এলাকায় রয়েছে কামদেবপুর হাট। এই হাটের দখলদারি ছিল তৃণমূলের এক গোষ্ঠীর হাতে। প্রধান হওয়ার পর হাটের দখলদারি নিজের অধীনে আনার চেষ্টা করেছিলেন রূপচাঁদবাবু। আর তাতেই বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিলেন তিনি। এমনিতেই দলের প্রধান হওয়ার পর নিজের মতো করেই চলতেন। দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশ অনেক সময় তিনি পাত্তা দিতেন না। আর এলাকায় জমি মাফিয়া হিসেবে পরিচিত থাকায় তাঁকে কেউ বেশি ঘাঁটাত না। প্রধান হওয়ার পর তিনি এলাকায় দাপিয়ে বেড়াতে থাকেন। বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর পক্ষে তা মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। পথের কাঁটা সরাতে রূপচাঁদকে খতম করার পরিকল্পনা করে তার বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকজন। আমডাঙা ও বোদাই পঞ্চায়েতের মধ্যে কামদেবপুর হাটের দখলদারি নিয়ে যে দ্বন্দ্ব ছিল বলে অভিযোগ, তার জেরেই এই খুন বলে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে। আর আনোয়ার হোসেন নামে প্রথম গ্রেফতারির পর জানা গিয়েছে, ধৃত ব্যক্তি বোদাই পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা। আর যে কামদেবপুর হাটের দখলদারি নিয়ে গন্ডগোল চলছিল বলে জানা গিয়েছে, দুষ্কৃতীরা সেখানেই তাঁকে লক্ষ্য করে বোমা ছুড়ে খুন করে। ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকটি বোমা উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত তৃণমূল প্রধানের ভাই কী বললেন?
নিহত তৃণমূল প্রধানের ভাই লালচাঁদ মণ্ডলের দাবি, 'কোনও রাজনৈতিক কারণ নয়, ব্যক্তিগত শত্রুতার শিকার হয়েছেন রূপচাঁদ'। খুনের ঘটনার জেরে এদিন সকাল থেকে থমথমে এলাকা। কামদেবপুর হাট বন্ধই থাকে শুক্রবার। তবে, যেটুকু মানুষের আসা যাওয়া হয়, সেটাও এদিন হয়নি এই হাটকে ঘিরে। ভর সন্ধ্যায় যখন হাট প্রচুর মানুষের আনাগোনা ছিল, তার মধ্যেই খুন করা হয় ওই তৃণমূল নেতা। খুনের ঘটনায় আর কারা জড়িত রয়েছে তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours