মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কালীপুজোর আগেই বন্ধের ডাক দিলেও সকলের অনুরোধে পিছিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু পুজোর মরশুম পার হতেই আন্দোলনে নামলেন বালুরঘাট তহবাজারের ব্যবসায়ীরা (Dakshin Dinajpur)। আগামিকাল ৬ ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকাল ব্যবসা বন্ধের ডাক দেওয়া হয়েছে। বালুরঘাটের তহবাজারের পুরো ব্যবসার পাশাপাশি বালুরঘাট শহর ও আশপাশ এলাকার সবজি ব্যবসাও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার শহর জুড়ে মাইকে এই বন্ধের কথা প্রচার করা হয়।
কেন বিদ্রোহ ঘোষণা ব্যবসায়ীদের? (Dakshin Dinajpur)
মূলত সবজির খুচরো ব্যাবসায়ীদের সঙ্গে কৃষকদের নজিরবিহীন লড়াইয়ে প্রশাসনিক পদক্ষেপ না থাকার অভিযোগেই এই বিদ্রোহ ঘোষণা বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। যা আগামী দিনে বালুরঘাটবাসীকে নাজেহাল করবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তাঁদের অভিযোগ, করোনা কালে তহবাজার থেকে আলাদা হয়েছিল কৃষক বাজার। প্রশাসনিক কর্তাদের উপস্থিতিতেই গত সেপ্টেম্বরে হওয়া বৈঠকে খুচরো ব্যবসায়ীরা লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত ওই কৃষকদের মূল বাজারে ফিরে আসার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। সেই সময়সীমা ইতিমধ্যেই পার হয়ে যাওয়ার পরেও, কৃষকরা তহবাজারে না ফিরে আসায় বালুরঘাট ব্যবসায়ী সমিতির (Dakshin Dinajpur) পক্ষে আগামিকাল ৬ ডিসেমবর থেকে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। আবার মূল বাজারে ফিরতে যদি প্রশাসন জোর করে, তবে তাঁরাও ধর্মঘটের পথে যেতে বাধ্য হবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কৃষক সংগঠনের নেতারা। এমতাবস্থায় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে কীভাবে মেলবন্ধন করে বালুরঘাটকে স্বাভাবিক রাখা যাবে, তার সমাধানসূত্র বের করতে নাজেহাল প্রশাসনিক কর্তারা।
কী করে তৈরি হল সমস্যা?
বালুরঘাট শহরের তহবাজার এলাকায় কাঁচামাল অর্থাৎ সবজি এবং মাছের ব্যবসার জন্য পৃথক জায়গা করা রয়েছে। দীর্ঘ বছর ধরে ওই এলাকাতেই কাঁচামালের ব্যবসা করে আসছেন ব্যবসায়ীরা। জেলা ও জেলার বাইরের কৃষকরা এই বাজারে এসেই পাইকারদের কাছে তাঁদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে যেতেন। ওই বাজার থেকেই পাইকারদের কাছ থেকে সবজি সহ অন্যান্য ফসলগুলি খুচরো ব্যবসায়ীরা কিনে গ্রাম বা শহরের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যেতেন। কিন্তু ছন্দ কাটে করোনা কালে। ওই সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে খুচরা ব্যবসায়ীদের ওই ঘিঞ্জি বাজার থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় হাই স্কুল মাঠে। আর কৃষক বা পাইকারদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয় আন্দোলন সেতুর পাশে রাস্তাতে। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসতেই খুচরো সহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা ফের তহবাজারে ফিরে যান। কিন্তু কৃষক বা পাইকাররা আর ওই রাস্তা থেকে উঠে ফেরত যাননি তহবাজারে (Dakshin Dinajpur)। বরং দিন দিন ওই সকালবেলার প্রায় দু'ঘণ্টার এই রাস্তার অস্থায়ী বাজারে কৃষক বা পাইকারদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। অভিযোগ, ধীরে ধীরে বালুরঘাটবাসীও তহবাজারের ওই ঘিঞ্জি পরিবেশে বাজার করতে না গিয়ে ফাঁকা রাস্তা থেকেই ওই বাজার করতে শুরু করে দেন। এতে যেমন তহবাজার ব্যবসায়ীরা মার খেতে শুরু করেন, তেমনি তাঁদেরও দোকান ছেড়ে এসে এই এলাকা থেকে সামগ্রী কিনতে আসতে হচ্ছে। তাই অবিলম্বে ওই কৃষক ও পাইকারদের তহবাজারে ফিরিয়ে আনার দাবিতে সরব হতে থাকেন ব্যবসায়ীরা। প্রশাসনের সহযোগিতায় একাধিকবার বৈঠক করেও এই সমস্যা মেটানো যায়নি। ফলে এবার একে অপরের বিরুদ্ধে কার্যত বিদ্রোহর পথে দুই পক্ষই। প্রশাসনকে বাদ দিয়েই এবার দুপক্ষই দফায় দফায় বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেছে।
কে কী বলছেন?
বালুরঘাট ব্যবসায়ী সমিতির (Dakshin Dinajpur) সম্পাদক হরেরাম সাহা বলেন, প্রশাসনও বেশ কয়েকবার বৈঠক করে ওই কৃষকদের তহবাজারে ফিরে আসার জন্য বলেছে। আমাদেরও আন্দোলনে না নামতে সময় চেয়ে নিয়েছে। কিন্তু বারবার সময় পেরিয়ে গেলেও ওই আন্দোলন সেতুর বাজার তহবাজারে ফিরে আসেনি। তাই এবার আমরা চরম পথে যেতে বাধ্য হচ্ছি। তহবাজার ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা গোপাল সাহা বলেন, কৃষকরা আমাদের বাজারে না থাকায় ব্যবসা অনেক কমে গিয়েছে। ওরা রাস্তা দখল করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে, অথচ প্রশাসন বারবার শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছে। তাই আমাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছি। আগামী ৬ তারিখ থেকে বালুরঘাট শহর ও আশপাশ এলাকার সমস্ত সবজি বাজার বন্ধ। তহবাজারের সমস্ত রকম ব্যবসা বন্ধ। কৃষক সংগঠনের নেতা সঞ্জয়কুমার মণ্ডল বলেন, আমরা জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উৎপাদিত ফসল নিয়ে বালুরঘাটে আসি। আগে তহবাজারে আমাদের বসার জন্য ছাউনি, ওজন যন্ত্র ইত্যাদি দেওয়া হয়েছিল প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কিন্তু করোনাকালে আমাদের রাস্তাতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তখন আমরা কয়েকজন মাত্র কৃষক ছিলাম, এখন সেই সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়ে গিয়েছে। ফলে এই সময় তহবাজারে ফিরে গেলে জায়গার অভাব হবে। তাই আমরা ওই বাজারে আর ফিরে যেতে চাইছি না। আমাদের এই রাস্তা থেকে সরিয়ে আশেপাশেই কোথাও জায়গা করে দিক প্রশাসন। জোড়াজুড়ি করলে বা আমাদের অন্যান্যা দাবি পূরণ না হলে, আমরাও দুধ, ডিম, সবজি সহ নানা কাঁচামালের কৃষকরা ধর্মঘটের পথে যেতে বাধ্য হব।
বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারম্যান অশোক মিত্র বলেন, আমরা দুপক্ষের সাথেই কথা চালিয়ে যাচ্ছি। সমাধানসূত্র আশা করি বের হবে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours