মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভোটবঙ্গে বিতর্ক জমে উঠেছে ‘নবাব বনাম রাজা’। বিতর্কের কেন্দ্র কৃষ্ণনগর। একদল রাজার শিবিরে তো অপর দল নবাবের বাহিনীতে। ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে গেরুয়া শিবির এই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পরিবার থেকেই। রানি অমৃতা রায়কে। তৃণমূলের প্রার্থী হলেন সম্প্রতি ঘুষকাণ্ডে লোকসভা থেকে বহিষ্কার হওয়া সাংসদ মহুয়া মৈত্র। প্রার্থী হিসেবে অমৃতাদেবীর নাম ঘোষণা হতেই তৃণমূল শিবিরের নিশানায় রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। তিনি নাকি ব্রিটিশদের দালাল। এমনটাই দাবি ঘাষফুল নেতাদের। ভোট প্রচারে ৩১ মার্চ রবিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও একই কথা বলতে শোনা যায় কৃষ্ণনগরে। পলাশীর যুদ্ধে ব্রিটিশদের কাছে সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় হয়। সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে সামিল ছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্রও- এমনই দাবি তৃণমূলের। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্যই নবাবকে নায়ক বানিয়ে রাজাকে ভিলেন বানাতে চায় তৃণমূল। কে নায়ক, কেই-বা ভিলেন সেই সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে আমাদের জানতে হবে, সিরাজউদ্দৌলা কি প্রকৃত উদার শাসক ছিলেন? মহানুভব নবাব ছিলেন? সর্ব-ধর্মসমভাব নীতিতে বিশ্বাসী রাখতেন? কী বলছেন ইতিহাসবিদরা? কী বলছেন বাঙলার মনীষীরা?
পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কী বলছেন সিরাজ সম্পর্কে?
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (Vidyasagar) তার বাঙ্গালার ইতিহাস গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ে লিখছেন, ‘‘সিরাজউদ্দৌলা, সিংহাসনে অধিরূঢ় হইয়া, মাতামহের পুরাণ কৰ্ম্মচারী ও সেনাপতিদিগকে পদচ্যুত করিলেন। কুপ্রবৃত্তির উত্তেজক কতিপয় অল্পবয়স্ক দুষ্ক্রিয়াসক্ত ব্যক্তি তাঁহার প্ৰিয়পাত্র ও বিশ্বাসভাজন হইয়া উঠিল। তাহারা, প্ৰতিদিন, তাঁহাকে কেবল অন্যায্য ও নিষ্ঠুর ব্যাপারের অনুষ্ঠানে পরামর্শ দিতে লাগিল। ঐ সকল পরামর্শের এই ফল দর্শিয়াছিল যে, তৎকালে, প্ৰায় কোনও ব্যক্তির সম্পত্তি বা কোনও স্ত্রীলোকের সতীত্ব রক্ষা পায় নাই।’’ বিদ্যাসাগরের (Vidyasagar) আরও সংযোজন, ‘‘রাজ্যের প্রধান প্রধান লোকেরা এই সমস্ত অত্যাচার সহ্য করিতে না পারিয়া তাহার পরিবর্তে অন্য কোনও ব্যক্তিকে সিংহাসনে বসাইবার চেষ্টা দেখিতে লাগিলেন। তাহারা নিশ্চিত জানিতেন তিনি সিরাজউদ্দৌলার অপেক্ষা ভদ্র নহেন। কিন্তু মনে মনে এই আশা করিয়াছিলেন, আপাতত এই উপায় দ্বারা উপস্থিত বিপদ হইতে মুক্ত হইয়া পরে কোনও যথার্থ ভদ্র ব্যক্তিকে সিংহাসনে নিবিষ্ট করিতে পারিবেন।’’ বিদ্যাসাগরের লেখাতেই ষ্পস্ট সিরাজের শাসন থেকে পরিত্রাণ পেতে উদগ্রীব ছিল বাঙালি।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours