তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
বয়স বাড়লে অনেকের কমে দৃষ্টিশক্তি। প্রবীণদের চোখে ছানি পড়ার সমস্যা প্রায়ই দেখা যায়। উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে সহজেই এই সমস্যার সমাধান করা যায়। কিন্তু উদ্বেগ বাড়াচ্ছে শিশুদের চোখের ছানি (Childhood cataracts)। জুন মাস ছিল 'ভিশন হেলথ মান্থ'। দেশ জুড়ে চলেছে চোখের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতার কর্মসূচি। সেখানেই বেরিয়ে আসে, কম বয়সীদের মধ্যে চোখের সমস্যা বাড়ছে। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, চোখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া কিংবা দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের মতো সমস্যার পাশপাশি চোখে ছানি পড়ার সমস্যাও বাড়ছে। খুব ছোট শিশুরাও এই চোখের ছানির সমস্যায় ভুগছে, যা যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা। ঠিক সময়ে এই ছানি অপারেশন করতে না পারলে শিশু অন্ধত্বের শিকার হতে পারে, এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলেই তাঁদের মত।
কেন শিশুদের চোখে ছানি হচ্ছে? (Childhood cataracts)
অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, এই সমস্যা জন্মগত। অর্থাৎ, মাতৃগর্ভ থেকেই শিশু এই রোগে আক্রান্ত। আর এই সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, গর্ভবতী বিভিন্ন ভাইরাস ঘটিত রোগে আক্রান্ত হলে শিশুর চোখে ছানির সমস্যা হতে পারে। চিকিৎসকদের একাংশ মনে করছেন, ভাইরাস ঘটিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। গর্ভাবস্থায় অনেকেই সাধারণ ভাইরাস ছাড়াও ডেঙ্গি, জিকা কিংবা করোনার মতো জটিল ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। এর জেরে শিশুর শরীরে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। বিশেষত শিশুর মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র এবং চোখের গঠনে প্রভাব দেখা দিচ্ছে। এর ফলেই ছানির মতো সমস্যা বাড়ছে। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, সন্তান ধারণের প্রথম তিন মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে গর্ভবতী কোনও ভাইরাস ঘটিত অসুখে আক্রান্ত হলে তার প্রভাব মারাত্মক হয়। বিশেষত রুবেলা জাতীয় ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শিশুর চোখে ছানির সমস্যা তৈরি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ভাইরাস ঘটিত প্রভাবের পাশাপাশি মা কোনও রকম অ্যালার্জির সমস্যায় আক্রান্ত হলে তার জেরেও শিশুর চোখে ছানির (Childhood cataracts) সমস্যা তৈরি হতে পারে।
মায়ের শরীরে নানান ভিটামিনের অভাব শিশুর চোখে ছানির সমস্যা বাড়াচ্ছে বলেও মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, মহিলাদের মধ্যে ভিটামিনের অভাব দেখা দিচ্ছে। আর তার জেরেই শিশুদের শরীরে নানান জন্মগত সমস্যা বাড়ছে। ছানি তার মধ্যে অন্যতম। মায়ের শরীরে ভিটামিন এ, ভিটামিন কে, ভিটামিন ডি-র অভাব থাকলে শিশুর জন্মগত ছানির সমস্যা হতে পারে। তবে গর্ভাবস্থাতেই শুধুমাত্র শিশুদের চোখে ছানি হয়, এমন নাও হতে পারে। চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, অনেক সময়েই দেড় থেকে দু'বছর বয়সে শিশুর কোনও ধরনের মেটাবলিক ডিসঅর্ডারের জেরেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে (Damage to Eyesight)।
কীভাবে এই সমস্যার মোকাবিলা সম্ভব?
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, শিশুদের দেখতে সমস্যা হলে (Childhood cataracts) অনেক সময়েই বলতে পারে না। তাই এক্ষেত্রে অভিভাবকদের বাড়তি সতর্কতা জরুরি। শিশুর চোখের আই বলে সামান্য সাদা ছোপ দেখা দিলেও দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি। যত দ্রুত ছানি নির্মূল করা যাবে, শিশুর অন্ধত্বের ঝুঁকি তত কমবে। তবে এর পাশপাশি গর্ভবতীদের বিশেষ খেয়াল রাখা জরুরি বলেও জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, গর্ভাবস্থায় ঠিকমতো যত্ন হলে, নবজাতকের এই ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা কমবে। মায়ের পুষ্টির দিকেও বিশেষ নজরদারি জরুরি। মায়ের শরীরে যাতে ভিটামিনের ঘাটতি না ঘটে, সে দিকে নজরদারি প্রয়োজন। এছাড়া, গর্ভবতীর দেহে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ যাতে বেশি না দেওয়া হয়, এ নিয়ে সর্বত্র প্রচার হওয়া জরুরি। কারন, অতিরিক্ত স্টেরয়েডের ব্যবহার একাধিক রোগের কারণ। গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে স্টেরয়েড অত্যন্ত ক্ষতিকারক। তাই এ নিয়েও সচেতনতা জরুরি (Damage to Eyesight)।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours