তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এই সমস্যা এখন বেশ উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু ভারতীয় শিশুদের অসুস্থতার অন্যতম বড় কারণ হল জীবন যাপন সংক্রান্ত রোগ। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ভারতীয় শিশুদের সব চেয়ে বড় সমস্যা হল স্থূলতা (Childhood Obesity)। ভারতের প্রায় ৪০ লক্ষ শিশু এই সমস্যায় ভুগছে। যা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন 'হু'। তারা জানাচ্ছে, ওজন নিয়ে সচেতনতা তৈরি না হলে পরবর্তী জীবনে ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি হবে। তাই শিশুস্বাস্থ্য নিয়ে সার্বিক সচেতনতা কর্মসূচি জরুরি।
কেন উদ্বিগ্ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা? (Childhood Obesity)
তাদের তরফে জানানো হয়েছে, ভারতীয় শিশুদের বড় অংশ স্থূলতার সমস্যায় ভুগছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ছয় থেকে সাত বছর বয়স থেকেই এই সমস্যা শুরু হয়ে যায়। আর তার জেরেই দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ ভারতীয় ডায়াবেটিস, রক্তচাপের মতো নানান রোগে খুব কম বয়স থেকেই আক্রান্ত হচ্ছে (Excess Food)। এমনকী বয়স তিরিশের চৌকাঠে পৌঁছানোর আগেই ভারতীয়দের হৃদরোগের সমস্যা বাড়ছে। এর পাশপাশি বাড়ছে ক্লান্তি। কমছে কর্মদক্ষতা। অনিয়ন্ত্রিত ওজনের জেরে অধিকাংশ ভারতীয় শিশুর এনার্জির ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। ফলে স্বাভাবিক জীবন যাপন ব্যাহত হচ্ছে। তাই শিশুদের ওজনে অতিরিক্ত বৃদ্ধি বা স্থূলতার সমস্যা যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ বলেই মনে করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
কেন ভারতীয় শিশুদের স্থুলতার সমস্যা বাড়ছে?
বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, ভারতীয় শিশুদের স্থূলতার (Childhood Obesity) সমস্যার অন্যতম কারণ, অপুষ্টিকর খাবার অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাস। এর জেরে একদিকে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিচ্ছে, আরেকদিকে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে শরীরে ফ্যাট প্রবেশ করছে। ওজন বাড়ছে। তাঁরা জানাচ্ছেন, পুষ্টিকর খাবারের ধারণা এখনও অধিকাংশ অভিভাবকের কাছেই অস্পষ্ট। তাই 'ভালো খাবার' হিসেবে যা শিশুকে দেওয়া হয়, অধিকাংশ সময়েই তার জেরে শিশুর শরীরে বিপদ বাড়ছে।
তাঁরা আরও জানাচ্ছেন, শিশুর জন্মের পরের প্রথম ছ'মাস শুধুমাত্র মায়ের স্তন্যপান করানো নিয়ে এখনও নানান অসচেতনতা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক একযোগে প্রচার করার পরেও, বহু পরিবারে নানান ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। শিশুর জন্মের পরের প্রথম ছ'মাস শুধুমাত্র মায়ের দুধ পর্যাপ্ত, এই ধারণা এখনও সর্বত্র নেই। তাই অনেক সময়েই শিশুকে নানান বাজারচলতি প্যাকেটজাত দুধ ও খাবারে অভ্যস্ত করা হয়। কিন্তু এই সমস্ত খাবারে থাকে অতিরিক্ত পরিমাণ শর্করা। যা শরীরের ওজন মারাত্মক বাড়িয়ে তোলে।
পাশপাশি, অধিকাংশ পরিবারেই শিশুরা খুব কম বয়স থেকেই চটজলদি খাবারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। পিৎজা, ফ্রেঞ্চফ্রাই, বার্গারের মতো খাবার অধিকাংশ শিশু নিয়মিত খায়। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা থেকে বাদ পড়ে রুটি, পালং শাক, বিট, গাজর, মোচা, কুমড়োর মতো খাবার। কিন্তু এই ধরনের খাবারে রয়েছে পর্যাপ্ত পুষ্টিগুণ। এতে শরীরের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ হয়। আবার ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। অতিরিক্ত ফ্যাট না থাকায়, শিশু সুস্থ থাকে। কিন্তু খাবার নিয়ে এই সচেতনতার অভাব বাড়ছে বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাই ভারতে বাড়ছে স্থূলতার সমস্যা।
কী পরামর্শ দিচ্ছে বিশেষজ্ঞ মহল? (Childhood Obesity)
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, প্রথম থেকেই শিশুকে অতিরিক্ত খাওয়ানোর মানসিকতায় বদল জরুরি। অধিকাংশ অভিভাবকদের সমস্যার জেরেই শিশুদের ভোগান্তি বাড়ে। তাঁরা জানাচ্ছেন, শিশুর ওজন ও বৃদ্ধি ঠিক থাকার পরেও অধিকাংশ অভিভাবকদের অভিযোগ থাকে শিশু ঠিকমতো খায় না। অভিভাবকদের কর্মশালা জরুরি। খিদে পেলে শিশু জানাবে এবং সে খাবে, এটাই সুস্থ শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া, এই সম্পর্কে এখনো অধিকাংশ অভিভাবক ওয়াকিবহাল নয়। এর জেরে প্রথম থেকেই তাঁরা শিশুদের অতিরিক্ত পরিমাণ খাবার (Excess Food) খাওয়ায় অভ্যস্থ করে তোলেন। আর কী খাওয়ানো হচ্ছে, সেদিকেও নজরদারি জরুরি। সবজি, ফল, দানাশস্য, নানান ধরনের বাদামের পাশপাশি নিয়মিত বাড়িতে তৈরি মাছ, মাংস, ডিম পরিমিত পরিমাণে শিশুর খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। তবে তেল কিংবা বাটার ব্যবহারের ক্ষেত্রেও পরিমাণে নজরদারি জরুরি। স্থূলতার সমস্যা এড়াতে হলে যে কোনও প্যাকেটজাত খাবার একেবারেই দেওয়া চলবে না।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours