মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: যুদ্ধের (Russia War) আবহে শান্তির বাণী প্রেরণ করতে ইউক্রেন যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Modi)! ২১ অগাস্ট দু’দিনের সফরে পোল্যান্ড যাবেন তিনি। সেখান থেকে ২৩ অগাস্ট তিনি রওনা দেবেন ইউক্রেনের উদ্দেশে। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর এই সফরসূচি চূড়ান্ত করেছে বিদেশমন্ত্রক।
যুদ্ধের আবহে ইউক্রেনে প্রধানমন্ত্রী (PM Modi)
আড়াই বছর ধরে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় এসেই প্রধানমন্ত্রী প্রথমে যান রাশিয়া সফরে। বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে। এবার তিনি যাবেন যুদ্ধরত ইউক্রেনে। সেখানে তিনি বৈঠক করবেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে। মোদিই হচ্ছেন প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী যিনি ভারত-ইউক্রেন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পর এই প্রথম যাচ্ছেন ইউক্রেন সফরে।
ভারসাম্যের রাজনীতি
গত মাসে যখন প্রধানমন্ত্রী রাশিয়া সফরে যান, তখন পশ্চিমের সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। তাঁদের বক্তব্য, ইউক্রেনে মস্কোর আগ্রাসনকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই কারণেই রাশিয়ার পর এবার ইউক্রেন যাচ্ছেন মোদি। বিবদমান দুই দেশের মধ্যে ভারসাম্যের রাজনীতি বজায় রাখতেই তাঁর এই কিভ (ইউক্রেনের রাজধানী) সফর। যদিও বিদেশমন্ত্রক সূত্রে খবর, তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী (PM Modi) হওয়ার পর মোদিকে শুভেচ্ছা জানান জেলেনস্কি। তখনই তিনি কিভ সফরের আমন্ত্রণ জানান মোদিকে। সেই আমন্ত্রণই রক্ষা করতে ইউক্রেন যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: হাথরস কাণ্ডের দুঁদে মহিলা সিবিআই অফিসার সীমা এবার আরজি করের তদন্তে
মোদি-জেলেনস্কি
গত জুন মাসে ইটালিতে জি৭ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির সম্মেলনে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। ভারত জি৭-এর সদস্য দেশ নয়। আমন্ত্রিত দেশের প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন মোদি। এই সম্মলেন জেলেনস্কির (Russia War) সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী। পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। রাশিয়ার বিরুদ্ধে আগ্রাসনের অভিযোগ তুলে জ্বালানি কেনা বন্ধ করে পশ্চিমের বিভিন্ন দেশ। যার জেরে বিপাকে পড়ে তেল-নির্ভর অর্থনীতির দেশ রাশিয়া। যদিও রাশিয়া থেকে নিয়মিত তেল কিনে যাচ্ছিল ভারত, পশ্চিমি বিশ্বের চোখরাঙানি উপেক্ষা করেই। ইউক্রেনের সঙ্গেও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে ভারত। তবে ভারত যে যুদ্ধের পক্ষে নয়, রাশিয়াকে পইপই করে বলেছে নয়াদিল্লি।
‘‘এটা যুদ্ধের সময় নয়’’
পুতিনকে কাছে পেয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘এটা যুদ্ধের সময় নয়।’’ তার পরেও বন্ধ হয়নি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া সফরের পর ইউক্রেন সফরে গিয়ে যুদ্ধ বন্ধের বার্তা দিতে পারেন মোদি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির মধ্যে সেতু বন্ধনের কাজ করতে পারেন মোদি। কারণ আমেরিকা ও পশ্চিমের শান্তি আলোচনায় মস্কোকে ডাকা হয়নি। আমন্ত্রণ জানানো হলেও, পুতিন যেতেন না। তাই দৌত্যের জন্য পুতিনের প্রথম পছন্দ নয়াদিল্লি। বস্তুত, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট।
স্থপতি মোদিই!
রাশিয়ার সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মানে ভূষিত করা হয় মোদিকে। মস্কো সফরে যাওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন পুতিন। নিজে গাড়ি চালিয়ে মোদিকে পাশে বসিয়ে ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন মস্কোয় তাঁর সরকারি বাসভবন। মোদির এই সফরে দুই দেশের মধ্যে একাধিক দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। স্বাক্ষর হয়েছে একাধিক মউ-ও। রাশিয়া যদি মন্ত্রমুগ্ধ হয় মোদিতে, তাহলে ইউক্রেনেরও আস্থা রয়েছে মোদির ওপর। সব মিলিয়ে রাশিয়া-ইউক্রনের মধ্যে চলা যুদ্ধ বন্ধের স্থপতি হতে পারেন মোদিই। রাশিয়া সফর সেরে দেশে ফেরার পরেই জল্পনা ছড়ায় এবার মোদি যাবেন ইউক্রেন সফরে। তখন বিদেশমন্ত্রকের তরফে অবশ্য এ ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। সোমবার বিদেশমন্ত্রকের তরফে নিশ্চিত করা হয় মোদির কিভ সফর।
'এটা কোনও শূন্য যোগ খেলা নয়'
বিদেশমন্ত্রকের সচিব (পাশ্চাত্য বিশ্ব-বিষয়ক) তন্ময় লাল বলেন, “রাশিয়া এবং ইউক্রেন দুই দেশের সঙ্গেই ভারতের একটি স্বাধীন সম্পর্ক রয়েছে। দ্বন্দ্বের অবসানে ভারত বরাবরই কূটনৈতিক ও আলোচনার পথে সমস্যার সমাধানে আগ্রহী।” তিনি বলেন, “এটা কোনও শূন্য যোগ খেলা নয়। দুপক্ষের কাছেই গ্রহণযোগ্য বিকল্পগুলির মাধ্যমেই অর্জন করা যেতে পারে স্থায়ী শান্তি। এটি নিষ্পত্তি হতে পারে একমাত্র আলোচনার মাধ্যমে।” তিনি আরও বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদি ইউক্রেন ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা জারি রেখেছেন।” দুই দেশের যুদ্ধ বন্ধে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ ভারত খুঁজবে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পর প্রকাশ্যেই রাশিয়ার সমালোচনা করেছিল ভারত (PM Modi)। কারণ রাশিয়াই প্রথম আঘাত হেনেছিল ইউক্রেনে। রাশিয়াকে নিরস্ত করতে একাধিকবার যুদ্ধ বন্ধের আবেদন করেছে ভারত। যুদ্ধ যে কোনও সমস্যার সমাধান নয়, তাও (Russia War) জানিয়ে দিয়েছেন বুদ্ধ-অশোকের দেশের প্রধানমন্ত্রী (PM Modi)।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours