মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বেদ হল জীবনের আধার। বেদকে আঁকড়ে ধরেই বেঁচে থাকে ভারত। তাই সারা বিশ্বে অস্থিরতার মধ্যেও ভারত একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র। পুনেতে বেদ সেবকদের সম্মান প্রদান অনুষ্ঠানে এমনই দাবি করলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত (Dr Mohan Bhagwat)। বেদ জ্ঞানের (Knowledge of Vedas) প্রসারের গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে আরএসএস সরসঙ্ঘচালক বর্তমান সময়ে প্রাচীন শাস্ত্রগুলির পুনরুজ্জীবনের আহ্বান জানান। তাঁর মতে, বেদই পারে সমাজের আধ্যাত্মিক বন্ধন অটুট রাখতে। বেদের জ্ঞান সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
বেদের বার্তাই আমাদের মন্ত্র
ভারতের উচিত বেদের জ্ঞান (Knowledge of Vedas) এবং সংস্কৃত ভাষার চর্চা করা। তিনি জানান, ভারতীয় সংস্কৃতি মোটেই রক্ষণশীল নয়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এর পরিবর্তন হয়েছে। বেদের মূল্যবোধেই ভারত রাষ্ট্রের গঠন হয়েছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম তা অনুসরণ করে চলেছে। আরএসএস প্রধানের (Dr Mohan Bhagwat) মতে, ভারত আজ বিশ্বের অন্যতম শক্তিতে পরিণত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এই দেশ কোনওদিনই আমেরিকা, চিন বা রাশিয়ার মতো সুপারপাওয়ার হবে না। এই দেশগুলি শক্তি প্রদর্শনে বিশ্বাসী। মোহন ভাগবত বলেন, “আমাদের এমন এক দেশ হয়ে উঠতে হবে, যার কাছে বর্তমান বিশ্বের সব সমস্যার জবাব থাকবে। আমাদের এমন এক দেশ হতে হবে, যারা বিশ্বকে শান্তি, প্রেম এবং সমৃদ্ধির পথ দেখাবে।” তিনি আরও জানান, ভারত এমন একটি দেশ যা ‘ধর্ম’ প্রচারে বিশ্বাস করে, সবাইকে একত্রিত করে। তিনি বলেন, “আমাদের কাছে জয় মানে ধর্মের বিজয়।” তাঁর মতে, সাধারণ মানুষের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেবে বেদই।
বেদ সেবকদের সম্মান
ডঃ মোহন ভাগবত (Dr Mohan Bhagwat) পুনের বালগন্ধর্ব রঙ্গমন্দিরে ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বেদ সেবকদের সম্মাননা অনুষ্ঠানে বলেন, “আজকের সমাজে বিশ্বাস বজায় রাখতে, বেদ সম্পর্কে আধুনিক জ্ঞান সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।” শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ন্যাস এবং শ্রী সদগুরু গ্রুপ, পুনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বেদ সেবকদের সম্মান জানানো হয়। এই বেদ সেবকরা নভেম্বর ২০২২ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত অযোধ্যায় ১৬ মাসব্যাপী বেদের চারটি অধ্যায়ের পূর্ণ পাঠ সম্পন্ন করেছেন। মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ২৪০ জন পুরোহিত এবং স্বেচ্ছাসেবক এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন, যেখানে ৩৬টি পর্যায়ে একটানা পুজো-অর্চনা করা হয়েছে।
বেদ হল হাতিয়ার
সরসঙ্ঘ চালকের মতে, বেদে (Knowledge of Vedas) নিহিত গভীর জ্ঞানের গুরুত্ব অপরিসীম। বেদকে ভারতের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের ভিত্তি হিসেবে বর্ণনা করেন ভাগবত। তিনি বলেন, “আধুনিক প্রজন্মের কাছে বেদের জ্ঞানকে পৌঁছে দেওয়া উচিত, যাতে তাঁরা বিশ্বে শান্তির বার্তা পৌঁছে দিতে পারে।” সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে ভাগবত ক্রমবর্ধমান উদাসীনতা এবং বিশৃঙ্খলা সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, “বিশ্বের বিভিন্ন অপশক্তি একত্রিত হয়ে শান্তি বিঘ্নিত করতে চাইছে। আমেরিকা, পোল্যান্ড এবং আরব বিশ্বের সাংস্কৃতিক অবক্ষয় এর উদাহরণ। এই অপশক্তিগুলি ভারতের ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি করতে পারে। কিন্তু আমাদের শাস্ত্র, বিশেষত বেদ, আমাদের এমন জ্ঞান প্রদান করে যা দিয়ে আমরা এই অপশক্তির মোকাবিলা করতে পারি।”
পরিবারের মূল্যবোধ
পরিবারের মূল্যবোধের গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে ভাগবত (Dr Mohan Bhagwat) বলেন, “ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্যের কারণে পরিবারের মূল্যবোধ এখনও অটুট আছে। বিশ্বজুড়ে যখন পরিবার ব্যবস্থা ধ্বংস হচ্ছে, তখনও ভারতে এটি মজবুত রয়েছে।” বেদ সেবকদের এই মূল্যবোধগুলিই সমাজের সর্বস্তরে প্রচার করার আহ্বান জানান ভাগবত।
অস্পৃশ্যতা দূর
ভাগবত (Dr Mohan Bhagwat) সমাজ থেকে বৈষম্য, বিশেষত অস্পৃশ্যতা দূর করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “যখন শাস্ত্রে অস্পৃশ্যতার কোনও স্থান নেই, তখন এই অমঙ্গলের বৈষম্য কেন থাকবে?” এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক চম্পত রাই, পুনের ভারত বিকাশ গ্রুপের ডঃ হনুমন্ত গায়কোয়াড়, সাকাল মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান অভিজিৎ পাওয়ার, এবং সদগুরু গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান যশবন্ত কুলকার্নি। চম্পত রাই অযোধ্যার রাম মন্দিরের অগ্রগতি সম্পর্কে বিভিন্ন কথা জানান। রাম মন্দির নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন। স্বামী গোবিন্দদেব গিরিজি মহারাজ তাঁর বক্তৃতায় তপস্যার মহিমা বর্ণনা করেন এবং সন্ত জ্ঞানেশ্বরের ‘পসায়দান’কে রাম রাজ্যের ‘ঘোষণাপত্র’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
RSS SarSanghchalak Dr Mohan Bhagwat Ji visited Symbiosis University and Dr Babasaheb Ambedkar Museum & Memorial at Pune, Maharashtra.#Rashtriya_Swayamswvak_Sangh pic.twitter.com/q08sjviz6X
— Raj Pushp Awasthi (@rajpushp11) September 5, 2024
বেদ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির চর্চা প্রয়োজন
বেদের জ্ঞান (Knowledge of Vedas), বেদ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির চর্চা প্রয়োজন, রয়েছে বলে মনে করেন মোহন ভাগবত (Dr Mohan Bhagwat)। তিনি বলেন, “সমস্ত জ্ঞানই রয়েছে বেদে। আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের ধর্ম রক্ষণশীল নয়। আমাদের সংস্কৃতি আমরা কী খাব, কী খাব না, তা বলে দেয় না। তবে, আমাদের সংস্কৃতি আমাদের বলে যে কোন খাবার খেলে শরীর খারাপ হতে পারে।” তাঁর কথায়, “সমাজের সমস্ত অংশের কাছেই বেদের জ্ঞান কাজে লাগতে পারে। বৈদিক গণিতশাস্ত্রই এর জলজ্যান্ত উদাহরণ। সমাজের সমস্ত ছাত্রছাত্রীই বৈদিক গণিতের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছেন।”
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours