মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: দেড় বছরের শিশুকে নৃশংসভাবে খুন করার অপরাধে মা ও তাঁর প্রেমিককে দোষী সাব্যস্ত করল হাওড়া জেলা আদালত। মঙ্গলবার হাওড়া (Howrah) জেলা আদালতের প্রথম ফাস্ট ট্র্যাক এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক সন্দীপ চক্রবর্তী শিশুপুত্রকে হত্যা করা ও প্রমাণ লোপাট করার অপরাধে তার মা হাসিনা সুলতানা ও তার প্রেমিক ভান্নুর শা-কে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩০২, ২০১ এবং ৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেন।
নৃশংসভাবে শিশুকে খুন, ব্যাগে করে ফলকনামায় (Howrah)
সরকার পক্ষের তরফে মামলাটি পরিচালনা করেন আইনজীবী অরিন্দম মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান, ঘটনার সুত্রপাত অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুর জেলায়। সেখানকার টেনালী থানার রাইস মিল কলোনিতে মা রশিদা বিবির-র কাছে দেড় বছরের ছেলে সেখ জিশান আহমেদকে নিয়ে থাকতেন হাসিনা সুলতানা। স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে, ছোট্টবেলার প্রেমিক ভান্নুর শায়ের হাত ধরে হায়দরাবাদে ওঠেন তাঁরা। দেড় বছরের জিসানকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। কিন্তু, সন্তানের সামনে প্রেমিকের সঙ্গে অবাধ মেলামেশা করা যাচ্ছিল না। পথের কাঁটা সরাতে দুধের শিশুকে খুন করার ছক কষেন তাঁরা। ২০১৬ সালে ২২ জানুয়ারি রাতে দেড় বছরের সন্তানকে মা আর তাঁর প্রেমিক মিলে একপাতা ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বেঘোর করে মাথায় আঘাত করে নৃশংসভাবে খুন করেন। পরে, ব্যাগের মধ্যে শিশুটিকে রেখে সেকেন্দ্রাবাদে ফলকনামা এক্সপ্রেসে রেখে আসেন। ২৪ তারিখ ফলকনামা এক্সপ্রেস এসে পৌঁছায় হাওড়া স্টেশনে। নিয়ম মোতাবেক ট্রেন পরীক্ষা ও পরিষ্কার করার সময় রেল কর্তৃপক্ষের নজরে আসে সিটের নীচে রাখা ব্যাগটি। ব্যাগটি খোলা হলে উদ্ধার হয় একটি অজ্ঞাতপরিচয় বাচ্চার মৃতদেহ। যার শরীরে ১২টি আঘাতের চিহ্ন ছিল। হাওড়া (Howrah) জিআরপি থানার পুলিশ তদন্ত শুরু করে।
ব্যাগের সূত্র ধরে তদন্ত
তদন্ত চলাকালীন পুলিশের নজরে আসে অন্ধ্রপ্রদেশের টেনালী থানার জারি করা লুক-আউট নোটিশটি। ব্যাগের সূত্র ধরেই মৃত শিশুটির ছবি নিয়ে পুলিশ রওনা হয় অন্ধ্রপ্রদেশের টেনালী থানার উদ্দেশে। সেখানে গিয়ে দেখা যায় যে, মৃত ও নোটিশে, একই শিশুর ছবি। খুঁজে বার করা হয় শিশুটির বাবা শেখ রিয়াজকেও। সেও শিশুটিকে নিজের ছেলে বলে সনাক্ত করে। পুলিশ এরপর শিশুটির দিদা, মিসিং ডায়েরি করা রোশন বিবিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, দেখানো হয় মৃত শিশুটির ছবি। তিনিও শিশুটিকে সনাক্ত করেন। ইতিমধ্যে দেখা যায় শিশুটির মা হাসিনা তার মায়ের বাড়িতে ফিরে এসেছে। তাকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে অবশেষে তিনি পুলিশের কাছে সমস্ত দোষ স্বীকার করেন। হাসিনাকে নিয়ে পুলিশ পাড়ি দেয় ভান্নুর এর বাড়ির উদ্দেশে। সেখানে গিয়ে তাকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে অবশেষে তিনিও পুলিশের কাছে সমস্ত দোষ স্বীকার করেন। দুজনকে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ আইন মোতাবেক হাওড়া আদালতে হাজির করে।
সরকারি আইনজীবী কী বললেন?
হাওড়ার (Howrah) সরকারি আইনজীবী অরিন্দম মুখোপাধ্যায় বলেন, দেড় বছরের অসহায় সন্তানকে যেভাবে নৃশংসভাবে দুজনে মিলে হত্যা করেছে এবং তার পরে খুব ঠান্ডা মাথায় উভয়ে মিলে ট্রেনে করে সন্তানের মৃতদেহ ভিনরাজ্যে পাচার করেছে, তা সত্যই বিরলের মধ্যে বিরলতম। সরকারপক্ষের তরফ থেকে এই মামলাতে সর্বোচ্চ সাজা, অর্থাৎ ফাঁসির সাজা শোনানোর প্রার্থনা আদালতের কাছে রাখা হয়েছে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours