মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: অর্থের অভাবে সঠিক মতো উৎপাদন করা যাচ্ছে না বিদ্যুৎ। ফলে দেশে চরম আকার নিয়েছে ঘাটতি। মোকাবিলা করতে এবার নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট সময় ধরে বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশ (Bangladesh)। আর এতেই উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন, পদ্মা সেতু তৈরি করতে গিয়ে কি দেউলিয়ার পথে হাসিনা প্রশাসন!
কিছুদিন আগেই বাংলাদেশ পদ্মা সেতুর (Padma Setu) উদ্বোধনে উদ্বেলিত হয়েছিল দু'পার বাংলার বাসিন্দারা। বাংলাদেশ তো বটেই, এপারেও কিছু মানুষজনও পদ্মা সেতুর উদ্বোধন পালন করেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে অজস্র পোস্ট। এমন নয় যে পদ্মা সেতু ভারত-সংযোগকারী কোনও সেতু, বা এটি পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কোনও স্থাপত্যের নিদর্শন। তা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের পদ্মা সেতু নিয়ে মাতামাতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
মুক্তিযুদ্ধের (Mukti Juddho) গৌরবময় ইতিহাসের সঙ্গে সেতু নির্মাণকে তুলনা করতে দেখা গিয়েছিল বাংলাদেশে। কোনও বিদেশি সাহায্য ছাড়াই নিজের দমে তারা এই সেতু বানিয়েছে বলেও বার বার দাবি করেছে বাংলাদেশ। যদিও, এত বিপুল অর্থ বরাদ্দ কোথা থেকে হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তার খানিকটা উত্তর পাওয়া গেল সোমবার। দেখা যাচ্ছে, বিগ বাজেট সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে কার্যত ভাঁড়ার শূন্য হয়েছে বাংলাদেশের। ফলে, চরম বিদ্যুৎ সংকটে ডুবেছে ভারতের এই প্রতিবেশী দেশ। বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কমাতে দেশে নিয়মিত এলাকা ভিত্তিক লোডশেডিংয়ের (Power Cut) ঘোষণা করল শেখ হাসিনার সরকার।
সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, লোডশেডিং (Load Shedding) হতে পারে দিনে ২ ঘণ্টা পর্যন্ত। আর এখন থেকে সপ্তাহে এক দিন বন্ধ থাকবে পেট্রল পাম্প। খরচ সাশ্রয়ের জন্য ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন আপাতত স্থগিতের সিদ্ধান্তও নিয়েছে সরকার। বিষয়টি জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক ই এলাহী চৌধুরী।
তৌফিক ই এলাহি চৌধুরী বলেন, "খরচ কমাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন আজ থেকে সাময়িক বন্ধ থাকবে। এ সিদ্ধান্ত সাময়িক। বিশ্বের পরিস্থিতির উত্তরণ হলে আগের অবস্থানে ফিরে আসা হবে।"
আরও পড়ুন: হিন্দুদের উপর নির্যাতন বাংলাদেশে! ফেসবুক পোস্ট ঘিরে বিতর্ক
তিনি আরও বলেন, "পৃথিবীতে একটা যুদ্ধ পরিস্থিতি চলছে। ইউক্রেনে যে যুদ্ধ চলছে, তা ইউক্রেনের একার নয়। ওই যুদ্ধের প্রভাব পড়ছে আমাদের ওপর।" তিনি আরও বলেন, "যাদের অর্থের অভাব নেই, তারাও কিন্তু লোডশেডিং করছে। যুক্তরাজ্যে হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ায় হচ্ছে। ডিজেলের বিদ্যুৎ উৎপাদন আপাতত স্থগিত করলাম, তাতে খরচ অনেকটা কমবে। ডিজেলের দাম আকাশচুম্বী হয়ে গেছে।"
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে পিটিয়ে খুন হিন্দু শিক্ষককে, জুতোর মালা অন্যকে
তৌফিক-ই-এলাহি চৌধুরী বলেন, "আমাদের ধারণা, এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি হবে। এতে দিনে এক থেকে দেড় ঘণ্টা এবং কোনও কোনও জায়গায় দু'ঘণ্টাও লোডশেডিং হতে পারে। কিন্তু দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এবং পৃথিবীর এই খারাপ সময়ে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।"
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, "কোন এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং হবে, তা আগে থেকে গ্রাহককে জানিয়ে দেওয়া হবে। আমরা সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি শিল্পক্ষেত্রকে।" তিনি আরও বলেন, আগামী এক সপ্তাহে এক থেকে দু'ঘণ্টা লোডশেডিং করা হবে। পরে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রতিমন্ত্রী এদিন বলেন, এখন থেকে পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত সারা দেশে এক দিন পেট্রল পাম্প বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে কীভাবে, কোন পদ্ধতিতে বন্ধ রাখা হবে, সেটা পরে জানানো হবে।বন্দর এলাকায় সপ্তাহে দু'দিন পেট্রল পাম্প বন্ধ রাখার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে বলেও জানান নসরুল হামিদ। এমনকি সরকারি অফিসগুলোয় কীভাবে সময় কমিয়ে আনা যায়, সেকথাও ভাবা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস।
পদ্মা সেতু যে বাংলাদেশকে কপর্দকশূন্য করে ছেড়েছে তা এক প্রকার স্পষ্ট। সেতু উদ্বোধনের খুশির রেশ কাটতে না কাটতেই পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিপুল টোল চাপিয়েছে বাংলাদেশ প্রশাসন।এবার সেখানে ঝুপ করে নেমে এল নিকষ কালো অন্ধকার। পদ্মা সেতু আলোকিত রাখতে গিয়ে এখন সাময়িকভাবে অন্ধকারে থাকতে হবে সেদেশের বাসিন্দাদের।
+ There are no comments
Add yours