মাধ্যম নিউজ ডেস্কঃ অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারি ও গরু পাচার চক্রের তদন্তে নেমে রাজ্যে ৪২ ঘাটের সন্ধান পেয়েছে সিবিআই। উত্তরবঙ্গের হিলি থেকে উত্তর ২৪ পরগনার সুন্দরবন সংলগ্ন ৪২টি ঘাট দিয়ে নিয়মিত গরু পাচারে মদত দিয়েছেন অন্তত ৬২ জন পুলিশ অফিসার। সীমান্তবর্তী এলাকায় ইন্সপেক্টর ও সাব-ইন্সপেক্টর থাকা নীচুতলার পুলিশ অফিসাররা ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত গরু পাচারে অতি সক্রিয় ছিলেন। তাঁদের মদত করতেন আটটি জেলার পুলিস কর্তারা। কয়লা কাণ্ডের মতো এবার গরু পাচারের ৪২ ঘাটের এলাকা সামলানো সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারদের সিবিআই-ইডির আতস কাচের নীচে আসতে হবে।
তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের দাবি, কোনও কোনও থানা এলাকায় আট-দশটি পাচার ঘাট ছিল। সেই সব থানায় ওসির পোস্টিংয়ের জন্য কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। বীরভূম, বর্ধমান জেলার কয়েকটি থানার ওসি আসার গরু পাচারের রুটের প্রোটেকশন দিতেন। ফলে পাচার ঘাটের চেয়েও গরুর হাট থেকে সীমান্ত পর্যন্ত গরু নিরাপদে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতেন যে সব নীচু তলার পুলিশ কর্তা, তাঁদেরও নজরে রাখছে সিবিআই।
সিবিআই-ইডি জেনেছে, পশ্চিমবঙ্গে যে ৪২টি ঘাট দিয়ে গরু পাচার হত সেগুলি হল দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি, কোচবিহারের তুফানগঞ্জ, দার্জিলিংয়ের ফাঁসিদেওয়া, মুর্শিদাবাদের লালগোলা এলাকার খাদুয়া, মদনঘাট, টিকলি চর, ভাগিরথী, নিমতিয়া, ধুলিয়ান ঘাট, কাহারপাড়া, রাজাপুর, মোহনগঞ্জ, বামনাবাদ, চর কামারি, কাতলামারি, চর বিনপুর, চর লবনগোলা, সবদলপুর-কানাপাড়া, রাজারামপুর, দিয়ার মানিকচক, আসারিয়াদহ, রামনগর, রেনু, বাহারা ঘাট, নিমতিতা, ফিরোজপুর। মালদহ জেলার ঘাটগুলির মধ্যে উল্লেখ্য হল, বৈষ্ণবনগরের সাহাপুর, শিবপুর ঘাট, কুম্ভীরা, দৌলতপুর, কালিয়াচক, হবিবপুরের কেদারিপাড়া, আগ্রা এবং আর কে ওয়াধা ঘাট। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট, হেমনগর, স্বরূপনগর, গাইঘাটা, বনগাঁও, বাগদার বাঁশঘাটা, মালিদা, গাঙ্গুলিয়া এবং আংরাইল ঘাট দিয়ে নিয়মিত গরু পাচার হয়েছে। এছাড়া বীরভূমের মুর্শিদাবাদ সংলগ্ন থানার ওসিরা এবং বর্ধমানের ঝাড়খণ্ড সীমানা থেকে মুর্শিদাবাদ আসার পথের যে সব থানা রয়েছে সেগুলির ওসিরাও সিবিআই-ইডির নজরে রয়েছে।
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, পুলিশ কর্তা থেকে নীচু তলার পুলিশ কর্মীদের যোগসাজশেই বরাবর গরু পাচার হয়ে এসেছে। রাজনৈতিক নেতাদের ধরা শুরু হয়েছে, কয়লা কাণ্ডে যোগ থাকা পুলিশ কর্তাদের নোটিস দিয়েছে ইডি, একই পথে গরু পাচারে যুক্ত পুলিশ কর্তা এবং থানার ওসিদের এক এক করে ডাকা হবে।
গরু পাচারে অভিযুক্ত এনামুল হকের বিভিন্ন আস্তানায় তল্লাশি চালিয়ে যে সব নথি পাওয়া গিয়েছে, তাতে অন্তত রাজ্যের ৬২টি থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি)-র নাম পাওয়া গিয়েছে।প্রতি মাসে গরু পাচার চক্র থেকে দক্ষিণ ও উত্তরবঙ্গের আট-ন’টি জেলার কর্মরত ওই ওসি-রা ‘মাসোহারা’ পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন তদন্তকারীরা। সিবিআই সূ্ত্রের দাবি, এনামুলের খাতায় নাম থাকা সব ওসি’দেরই ধীরে ধীরে আয়কর ও সিবিআই তদন্তের সামনে আসতে হবে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারি এবং আট আইপিএস অফিসারকে ইডির তলবের পর পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের নীচুতলার বহু পুলিশ অফিসার সিবিআইকে তথ্য দেওয়াও শুরু করেছেন। নিজে থেকেই তাঁরা সিবিআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে গোপনে গরু-কয়লা পাচারে যুক্ত অফিসারদের বেআইনি সম্পত্তি ও কারবারের তথ্য তুলে দিচ্ছেন বলে তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর।
+ There are no comments
Add yours