মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক-পড়ুয়াকে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে। যদিও আগেই আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আর প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেফতার করা হয়। এবার দুজনকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিবিআইয়ের (CBI) কর্তারা।
সন্দীপ ও অভিজিতের ঘন ঘন সাক্ষাত! (CBI)
তদন্তকারীদের (CBI) দাবি, ঘটনার দিন অর্থাৎ ৯ অগাস্ট চিকিৎসকের মৃতদেহ উদ্ধারের পর থেকে সন্দীপ ও অভিজিতের মোবাইলে সবচেয়ে বেশি কথাবার্তা হয়েছিল, দেখা গিয়েছে কল ডিটেলসে। ১৪ অগাস্ট পর্যন্ত সন্দীপ ও অভিজিতের কথা হয়। বিশেষ করে ১০ অগাস্ট ওই ঘটনায় সিট গঠন করে তদন্ত শুরু করে কলকাতা পুলিশ। তার পরেও সন্দীপের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ ফোনালাপের বিষয়টি সন্দেহজনক বলে মনে করা হচ্ছে। টাওয়ার লোকেশন অনুযায়ী, সন্দীপ ও অভিজিতের ঘন ঘন সাক্ষাতের তথ্য মিলেছে। অভিজিৎ ৯ থেকে ১৪ অগাস্ট পর্যন্ত নিয়মিত আরজি করে যাতায়াত করেছেন, মিলেছে তথ্য। তদন্তকারীদের কথায়, ৯ অগস্ট চিকিৎসক-পড়ুয়ার মৃতদেহ সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয়েছিল। পুলিশের তরফে অভিজিৎ ও তাঁর সহযোগীরা প্রথম ওই সেমিনার হলে পৌঁছন। এর পরে ওই সেমিনার হলে থিকথিকে ভিড় হয়ে যায়, দাবি তদন্তকারীদের। সে ক্ষেত্রে 'প্লেস অব অকারেন্স' অর্থাৎ মৃতদেহের আশপাশের নমুনা রক্ষার মূল দায়িত্ব ছিল অভিজিতের। কিন্তু অভিজিৎ ওই দায়িত্ব পালন করেননি।
আরও পড়ুন: ইস্তফা দিচ্ছেন কেজরিওয়াল! দিল্লির পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কে?
প্রমাণ লোপাটে ওসির ভূমিকা
তদন্তকারীদের (CBI) দাবি, ময়না তদন্তকারীদের কথায়, ঘটনাক্রম অনুযায়ী সেমিনার হলে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের সঙ্গে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের ক্ষেত্রেও টালা থানার ওসি-র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একটি মাত্র সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া গিয়েছে। তারও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ধোঁয়াশা ও অস্পষ্ট। মৃতদেহ দ্রুত দাহ করার ক্ষেত্রেও অভিজিতের অতিসক্রিয়তার নানা ইঙ্গিত মিলেছে বলে খবর। তদন্তকারীদের দাবি, সন্দীপের গাড়ির চালককে আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। শনিবার লালবাজারে এক শীর্ষ কর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সিবিআইয়ের এ কর্তা বলেন, একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে চিকিৎসক-পড়ুয়ার খুন ও ধর্ষণের তথ্যপ্রমাণ লোপাট করা হয়েছিল। সন্দীপ ও অভিজিৎকে জেরা করে মূল চক্রান্তকারীদের ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাই অভিজিৎ এবং সন্দীপকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা জরুরি হয়ে উঠতে পারে, দাবি সিবিআইয়ের।
সন্দীপ ঘোষের দেওয়া তথ্যগুলি বিভ্রান্তিকর
সিবিআই (CBI) সূত্রের খবর, তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ৯ অগাস্ট হাসপাতালে ধর্ষিত তরুণীর দেহ উদ্ধার হওয়ার পরে সন্দীপ ঘোষ (Sandip Ghosh) প্রথমে ঘটনার এফআইআর দায়ের করতেই চাননি। শুধু তাই নয়, বিষয়টি আদালতে চলে যাওয়ার পরেও, তিনি আইনি পরামর্শ নেন এবং আবারও এফআইআর এড়ানোর চেষ্টা করেন। আত্মহত্যা বলেই প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করেন এই ঘটনাকে। জানা গিয়েছে, অভিজিৎ মণ্ডল এবং সন্দীপ ঘোষের মধ্যে প্রথম যোগাযোগ হয় ৯ অগাস্ট, সকাল ১০টায়। কিন্তু, ওসি অপরাধস্থলে পৌঁছতে অনেক দেরি করেন। তদন্তের সময়ে সন্দীপের ভয়েস অ্যানালিসিস এবং পলিগ্রাফ পরীক্ষা করা হয়েছিল। সেই সব পরীক্ষার ফরেনসিক রিপোর্ট বলছে, তদন্তকারীদের সন্দীপ ঘোষের দেওয়া তথ্যগুলি বিভ্রান্তিকর ছিল এবং তাঁর বিভিন্ন দাবিই প্রতারণামূলক ছিল।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours