Dharmapala: বাঙালি সুশাসক রাজা ধর্মপাল কেন পরমেশ্বর ছিলেন জানেন?

Pala Empire: পাল যুগে বঙ্গের সম্রাট ধর্মপালের রাজত্ব ছিল সুবর্ণযুগ
দেশের_খবর,_দশের_খবর,_সব_খবর,_সবার_আগে_পেতে_ফলো_করুন_আমাদের  Whatsapp,_Facebook, Twitter,_Telegram এবং_Google_News পেজ।_(1)
দেশের_খবর,_দশের_খবর,_সব_খবর,_সবার_আগে_পেতে_ফলো_করুন_আমাদের  Whatsapp,_Facebook, Twitter,_Telegram এবং_Google_News পেজ।_(1)

ড. সুমন চন্দ্র দাস

বঙ্গে শশাঙ্কের মৃত্যুর পর শতবর্ষব্যাপী অনৈক্য, আত্মকলহ, বহিঃশত্রু পুনঃ পুনঃ আক্রমণের ফলে বিরাট অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল। এই সময় বঙ্গে রাজতন্ত্র ছিল না। ঐতিহাসিক লামা তারানাথ এই সময়কে 'মাৎস্যন্যায়' বলেছেন। ছোট ছোট মাছকে যেমন করে বড় বড় মাছ শিকার করে, ঠিক তেমনি রাজনৈতিক অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছিল দেশে। সুশাসক না থাকায় দুর্বল মানুষের উপর সবলের অত্যাচার ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে চরম আকার নিয়েছিল। এই সময় পালবংশের গোপাল ৭৪০ থেকে ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে রাজা হিসেবে নির্বাচিত হন। আনুমানিক ৭৭০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। তাঁর পুত্রের নাম ধর্মপাল, তিনি দ্বিতীয় পালরাজা হিসেবে সিংহাসনে বসেন ৭৭০ খ্রিষ্টাব্দে এবং রাজত্ব করেন ৮১০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। পাল রাজারা অবশ্য বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি বাঙালি রাজা হিসেবে অত্যন্ত বীর সাহসী এবং রাজনীতিককুশল ছিলেন। তাঁর কীর্তি ইতহাসে অবিস্মরণীয়।

পরমভট্টারক, মহারাজাধিরাজ ধর্মপাল

রাজা হিসেবে ধর্মপাল (Pala Empire) আর্যাবর্তে এক সাম্রাজ্য স্থাপনার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু সাময়িক ভাবে তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন প্রতীহার বংশের রাজা বৎসরাজ। গুর্জর, হুণদের সঙ্গে বা ঠিক তাঁদের পরপরই ভারতের পাঞ্জাব, রাজপুতানা এবং মালবে সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিলেন। অষ্টম শতকের শেষে বৎসরাজ পূর্বে সাম্রাজ্য বিস্তারে অগ্রসর হন। অপর দিকে ধর্মপাল পশ্চিমদিকে অগ্রসর হলে উভয়পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ হয়। কিন্তু যুদ্ধে ধর্মপাল পরাজিত হয়েছিলেন। তবে বৎসরাজ পূর্ব দিকে কতটা সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিলেন, তার উল্লেখ সঠিক ভাবে পাওয়া যায়নি। ইতিমধ্যে ধর্মপালের সাম্রাজ্য মগধ, বারাণসী এবং প্রয়াগ হয়ে গঙ্গা-যমুনার মধ্যবর্তী ভূ-ভাগ পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছিলেন। তাঁকে গৌরব সূচক সম্বোধন হিসেবে পরমেশ্বর, পরমভট্টারক, মহারাজাধিরাজ নামে উপাধি দেওয়া হয়েছে।

আর্যাবর্তের কান্যকুব্জ জয়

ধর্মপালের পুত্র দেবপালের একটি তাম্রশাসন থেকে জানা যায়, তিনি দিগ্বিজয়ে প্রবৃত্ত হয়ে কেদার, গোকর্ণ নামক দুই তীর্থ এবং গঙ্গাসাগর সঙ্গম পর্যন্ত আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। কেদার হল হিমালয়ের সুপরিচিত জায়গায়। গোকর্ণ বলতে কেউ কেউ বম্বে প্রেসিডেন্সির মধ্যে উত্তর কানাড়ায় তীর্থধাম বোঝান। আবার নেপালে পশুপতি মন্দিরের দুই মাইল উত্তর-পূর্বে গোকর্ণ নামক তীর্থ স্থান রয়েছে। একই ভাবে কাপিলাবস্তুর নিকটে গঙ্গাসাগর বলে একটা জায়গা আছে। ফলে বিজয় সংকল্প যাত্রা নিয়ে এই বাঙালি সম্রাটের যাত্রা ছিল উত্তরের হিমালয়ের গোকর্ণ পর্যন্ত। সেই সঙ্গে করছেন অনেক সংগ্রাম। পালসাম্রাজ্যকে উত্তর এবং পশ্চিম ভারতে প্রতিষ্ঠিত করতে, আর্যাবর্তের কান্যকুব্জ জয় করেছিলেন। এরপর সিন্ধুনদ, পাঞ্জাবের উত্তরের হিমালয়ের পাদদেশ পর্যন্ত সাম্রজ্য বিস্তার করেছিলেন।

মালদার নিকটে পাওয়া 'খালিমপুর' তাম্রশাসন থেকে জানা গিয়েছে, কান্যকুব্জে যখন রাজ্যশ্রী গ্রহণ করেন, সেই সময় পাঞ্চালদেশের বয়োবৃদ্ধরা ধর্মপালের মাথায় স্বর্ণকলস থেকে পবিত্র তীর্থ জলপ্রদান করেছিলেন। গান্ধার, মাদ্র, কুরু, কীর, ভোজ, মৎস্য, যদু, যবন, অবন্তি বিভিন্ন নগরের সামন্তরা ধর্ম পালের প্রভুত্ব স্বীকার করেছিলেন। ফলে এই রাজ্যগুলি অর্থাৎ স্থান বিচারে পঞ্চনদের পূর্ব, মধ্য, উত্তর ভাগ, সিন্ধুনদীর পশ্চিমপাড়, আলোয়ার, মালব, জয়পুর, সুরাট পর্যন্ত বিস্তৃত ভূভাগের রাজা ছিলেন বঙ্গের রাজা ধর্মপাল। তাঁকে চম্পু কাব্যে উত্তরাপথস্বামী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বিক্রমশীল, সোমপুর, পাহাড়পুরের বৌদ্ধ মহাবিহার নির্মাণ

ধর্মপালের (Pala Empire) রাজত্বে বঙ্গে যে ভাবে রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়েছিল, পরবর্তী কালে এমন ভাবে আর দেখার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না। যে ভূমি মাত্র ৫০ বছর আগে অরাজকতা, অত্যাচারের ভূমি ছিল, ধর্মপালের সৌজন্যে যেন নিস্তার পেল বঙ্গভূমি। শুধু যে রাজনৈতিক পালা পরিবর্তন হয়েছে তাই নয়, ধর্ম, শিল্প, সাহিত্যের চরম উৎকর্ষলাভ করে। বাঙালি যেন নতুন করে নিজেদের আত্ম প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পেয়ে গেল। ধর্মপালের রাজ্য যেন বাঙালির জীবন প্রভাতের সূচনা হল। খালিমপুর তাম্র শাসনে তাই বলা হয়েছে, “সীমান্তদেশে গোপগণ, বনের বনচরগণ, গ্রামের জনসাধারণ, বাড়ির শিশুরা, দোকানের ক্রেতা-বিক্রেতা, রাজপ্রসাদের খাঁচার পাখিরা সব সময় সুশাসক ধর্মপালের নামগান করতেন।” তাঁর আমলে নালন্দার মতো বিক্রমশীল ছিল বিখ্যাত অধ্যয়ন কেন্দ্র বৌদ্ধ মহাবিহার। গঙ্গাতটে নির্মাণ করেছিলেন তিনি। চারিদিকে ১০৭টি মন্দির ছিল। ১১৪ জন শিক্ষক ছিলেন এই শিক্ষা কেন্দ্রে। এছাড়াও বরেন্দ্রভূমিতে সোমপুর, রাজশাহীতে পাহাড়পুর এবং বিহারের ওদন্তপুরে আরও একটি মহাবিহার নির্মাণ করেছিলেন। লামাতারা নাথ বলেছেন, তিনি মোট ৫০টি শিক্ষা কেন্দ্র নির্মাণ করেছিলেন। এক কথায় পালযুগের সুবর্ণযুগ ছিল তাঁর সময়ে।

আরও ইতিহাস খোঁজের ইঙ্গিত

বাংলার যথার্থ ইতিহাস নিয়ে বার বার দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বঙ্কিমচন্দ্র নিজের লেখায় বাঙালির ইতিহাস লেখার কথা বঙ্গদেশের কৃষক প্রবন্ধে বলে গিয়েছেন। সমাজ সংস্কৃত ধর্ম রাজনীতি নিয়ে সত্যিকারের ইতিহাস খোঁজের কথা বলে গিয়েছেন। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার তাঁর ‘বাংলাদেশের ইতিহাস’ বইতে আক্ষেপ করে বলেছেন, “একদিন বাংলার মাঠে-ঘাটে ঘরে-বাহিরে যাঁহার নাম লোকের মুখে মুখে ফিরিত, তাঁহার কোন স্মৃতিই আজ বাংলাদেশে নাই। অদৃষ্টের নিদারুণ পরিহাসে বাঙালি তাঁহার নাম পর্যন্ত ভুলিয়া গিয়াছে।… তাঁহার জীবনের বিশেষ কোন বিবরণ জানিতে পারি নাই।”

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles