মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আরজি কর নিয়ে আন্দোলনের মাঝে 'শিড়দাঁড়া' প্রসঙ্গ নিয়ে রাজ্যজুড়ে তোলপাড় হয়। আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের হাতে প্রতীকী শিরদাঁড়া তুলে প্রশাসনের শিরদাঁড়া সোজা রাখার বার্তা দিয়েছেন। যা তাঁদের আন্দোলনকে এক নতুন মাত্রা দেয়। তারপর থেকে 'শিরদাঁড়া' ইস্যুতে রক্তচাপ বেড়েছে প্রশাসনের। এবারের পুজোয় প্রতীকী শিরদাঁড়াকে থিম করে মণ্ডপসজ্জার কথা ভেবেছিল শহর ও শহরতলির কয়েকটি পুজো কমিটি। প্রবল ‘পারিপার্শ্বিক চাপে’ পুজোর সেই শিরদাঁড়া মডেলের ঠাঁই হয়েছে কোথাও মণ্ডপের পিছনে আবর্জনার স্তূপে। কোথাও আবার শিরদাঁড়া মডেল ঢাকা পড়ল ত্রিপলে।
'শিরদাঁড়া' মডেলের ঠাঁই হয়েছে মণ্ডপের পিছনে আবর্জনার স্তূপে (Durga Puja)
বেলেঘাটা গান্ধীমাঠ ফ্রেন্ডস সার্কেলের পুজো (Durga Puja) থিমের নাম দেওয়া হয়েছিল 'বাবারা পরিবারের শিরদাঁড়া'। উদ্যোক্তাদের দাবি, 'বাবা'রা হাজারো প্রতিকূলতার মধ্যে থেকে পরিবারকে আগলে রাখেন। সন্তানকে মানুষ করতে প্রাণপাত করেন। সকল ঘাত- প্রতিঘাত সামলে পরিবারের গায়ে আঁচড় টুকু লাগতে দেন না। মেরুদন্ডকে সোজা রেখে নিঃশব্দে লড়াই জারি রাখেন। বাবাদের সেই সংগ্রাম আত্মত্যাগকে কুর্নিশ জানাতেই এই থিম। গত ফেব্রুয়ারি থেকেই সেই মতো প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছিল। থিমের নকশাতে ছিল ৪০ ফুটের এই মেরুদণ্ডটি। সেই মতোই কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন শিল্পীরা। মণ্ডপসজ্জার সামগ্রী দিয়ে মেরুদণ্ড তৈরি করে তা মণ্ডপে বসানোও হয়ে গিয়েছিল। আচমকা, তা সরিয়ে দেওয়া হয়। জানা গিয়েছে, শিরদাঁড়া মডেলের ঠাঁই হয়েছে মণ্ডপের পিছনে আবর্জনার স্তূপে। পুজো উদ্যোক্তাদের তরফে জানানো হয়েছে, ‘‘আমরা যে কোনও রকমের বিতর্ক এড়িয়ে যেতে চেয়েছি। আরজি কর আবহে এই 'শিরদাঁড়া' নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে পুজো উদ্যোক্তাদের। এমন পরিস্থিতিতে আমরা দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে আমরা অন্য কিছু ভাবছি না। আমরা উৎসব নিয়েই থাকতে চাই।’’
আরও পড়ুন: রাজ্যজুড়ে ফের কর্মবিরতি শুরু জুনিয়র ডাক্তারদের, সিদ্ধান্ত জিবি বৈঠকে
হাওড়ার সাঁতরাগাছির ক্লাবে 'শিড়দাঁড়া' ঢাকা পড়ল ত্রিপলে
এ বার ৪১তম বর্ষে পা দিয়েছে হাওড়ার সাঁতরাগাছি কল্পতরু স্পোর্টিং ক্লাবের পুজো। তাদের পুজোর থিম বাস্তবতা। মণ্ডপে ঢোকার মুখেই তৈরি করা হয়েছে ২০ ফুট লম্বা প্রতীকী শিরদাঁড়া। প্রতিবাদের প্রতীক হিসাবে পুজোর মণ্ডপে ব্যবহার করা হয়েছে মানুষের মেরুদণ্ড। সঙ্গে মণ্ডপের গায়ে লেখা, 'মা আমি ডাক্তার হতে পারলাম না'। মা দুর্গার হাতে অস্ত্রের বদলে থাকছে আয়না। মানুষের বিবেককে জাগ্রত করতে এই প্রতীকী আয়না ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিল্পী সৌরভ ঘোষ। পুজো উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, এক চিকিৎসকের স্বপ্নকে বোঝাতে প্যান্ডেল জুড়ে মুখ বাঁধা ছোট ছোট থলি ব্যবহার করা হয়েছে। যে স্বপ্ন প্রতি দিন বাস্তবতার আঘাতে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, অন্যায় দেখে মানুষের নির্লিপ্ততা বোঝাতে ছোট ছোট মূর্তির চোখে কালো কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে। সোমবার সেই প্যান্ডেলে ঢোকার মুখেই বসানো হয়েছিল শিরদাঁড়া। পুজো কমিটি সূত্রে খবর, এরপরই পুলিশ আসে মণ্ডপে। এরপরই ত্রিপল দিয়ে তা ঢেকে ফেলা হয়।
চিকিৎসকদের আন্দোলনেও ছিল শিড়দাঁড়া
আরজি কর-কাণ্ডের আবহে সেই শিরদাঁড়ার অনুষঙ্গ বার বার ঘুরে ফিরে এসেছে। শিরদাঁড়ার প্রসঙ্গ এসেছে সাহসিকতার প্রতিরূপ হিসেবে। প্রতীকী শিরদাঁড়া নিয়ে মিছিল (Durga Puja) করেছিলেন চিকিৎসকেরা। শুধু তা-ই নয়, কলকাতার সদ্য প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকেও চিকিৎসকেরা শিরদাঁড়া উপহার দিয়েছিলেন। ঘটনাচক্রে, চিকিৎসকের আন্দোলনের চাপেই বিনীতকে কলকাতার কমিশনার পদ থেকে সরিয়ে দেয় রাজ্য সরকার। পুজোর থিমেও সেই শিরদাঁড়া নিয়ে বিতর্ক এখন তুঙ্গে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours