মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন ও অর্থ পাচার (Money Laundering) বিরোধী ব্যবস্থার বিষয়ে ভারতের মূল্যায়ন সম্পর্কিত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স, সংক্ষেপে এফএটিএফ (FATF)। ফ্রান্সে স্থিত সন্ত্রাসবিরোধী নজরদারি এই সংস্থা জানিয়েছে, ভারত অপরাধ থেকে অর্থ পাচারের গন্তব্য নয়।
এফএটিএফ (FATF)
সংস্থা এও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, প্রতি তিন বছর অন্তর একবার করে হবে ভারতের ঝুঁকি মূল্যায়ন। বিশ্বের আর্থিক তছরুপ ও জঙ্গি সংগঠনের আর্থিক লেনদেনের ওপর নজরদারি চালায় এফএটিএফ। এই প্রতিষ্ঠানের সদর দফতর প্যারিসে। বৃহস্পতিবার ভারত সম্পর্কে মূল্যায়ন রিপোর্ট প্রকাশ করেছে এই সংস্থা। সেই রিপোর্টে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের হুমকি মোকাবিলায় ভারতের সিস্টেমের প্রশংসা করা হয়েছে। আর্থিক জালিয়াতি মামলায় বিচার ত্বরান্বিত করতে ভারতকে আহ্বানও জানিয়েছে প্যারিস-ভিত্তিক এই সংস্থা।
এফএটিএফের মূল্যায়ন রিপোর্ট
মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের বিরুদ্ধে ভারতের পদক্ষেপের পূর্ববর্তী মূল্যায়ন রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল ২০১০ সালে। পরবর্তী মূল্যায়ন রিপোর্ট প্রকাশিত হবে ২০৩১ সালে। এফএটিএফের (FATF) প্রকাশিত মূল্যায়ন রিপোর্টে স্বীকার করা হয়েছে, ভারত অ্যান্টি মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসবাদের অর্থায়ন স্ট্রাকচারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকরী উন্নয়ন করেছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারত সন্ত্রাসবাদ ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের ক্ষেত্রে গুরুতর হুমকির মুখোমুখি। এর মধ্যে রয়েছে আইএসআইএল (ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট) বা আল কায়েদার মতো সংগঠনগুলিও। যারা জম্মু-কাশ্মীর ও তার আশপাশে সক্রিয় রয়েছে। সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে ভারতের উল্লেখযোগ্য ভূমিকারও প্রশংসা করা হয়েছে। জটিল আর্থিক তদন্ত পরিচালনা করার ক্ষেত্রে নয়াদিল্লির দক্ষতার প্রশংশাও করেছে সন্ত্রাসবিরোধী নজরদারি এই সংস্থা। সন্ত্রাসে যারা অর্থায়ন করছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলার নিষ্পত্তি ও শাস্তি দেওয়ায় আরও মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার দিকেও ইঙ্গিত করেছে এফএটিএফের এই প্রতিবেদন (FATF)। সন্ত্রাসে অর্থায়নে ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করতে প্রচারাভিযানও চালিয়েছে ভারত। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে (Money Laundering), সন্ত্রাসী অর্থায়নের জন্য অলাভজনক খাতের অপব্যবহার রোধেও ভারত সক্রিয়।
আরও পড়ুন: “পাকিস্তান আর কংগ্রেসের অ্যাজেন্ডা একই”, কাটরার সভায় সরব মোদি
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সুন্দর ব্যবহার করা হয়েছে। কার্যকর করা হয়েছে সহযোগিতাও। মানি লন্ডারিং প্রসিকিউশান এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধের ক্ষেত্রকে শক্তিশালী করতে বড় ধরণের ইমপ্রুভমেন্টের প্রয়োজন বলেও দাবি করা হয়েছে এফএটিএফ-এর ওই প্রতিবেদনে।
রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, ভারতের মূল অর্থ পাচারের উৎসগুলি দেশের অভ্যন্তরে সংঘটিত অবৈধ কার্যকলাপ থেকে উদ্ভূত হয়। এই সব কালো অর্থ সাদা করা হতে পারে ভারতে কিংবা বিদেশে। বিদেশে সাদা করে ভারতে ফিরে মিলিয়ে যেতে পারে বৈধ অর্থনীতির স্রোতে। এনআরএ-র ফল অনুযায়ী, ভারতের সবচেয়ে বড় অর্থ পাচারের ঝুঁকিগুলি প্রতারণার সঙ্গে সম্পর্কিত। এর মধ্যে রয়েছে সাইবার সক্ষমতাসম্পন্ন প্রতারণা, দুর্নীতি ও মাদক পাচারে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলিও।
ওই রিপোর্টেই বলা হয়েছে, ওই জঙ্গি সংগঠনের তরফে ভারতে হামলা চালানো হতে পারে, এমন আশঙ্কা রয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারত ও উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ও মাওবাদীদের হামলার আশঙ্কাও রয়েছে ভারতে।
ওই রিপোর্টেই দাবি করা হয়েছে, প্রতিটি জঙ্গি সংগঠনের ক্ষেত্রে ঝুঁকির মাত্রা সমান নয়। একে আলাদা ছটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে আইসিস বা জম্মু-কাশ্মীর ও সংলগ্ন এলাকায় সক্রিয় আল কায়েদার সঙ্গে যোগসূত্র থাকা জঙ্গি গোষ্ঠী। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হামলার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে ওই রিপোর্টে। এই তালিকায় উত্তর-পূর্ব ভারত ও উত্তর ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ও মাওবাদীরাও রয়েছে। ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের রিপোর্টে জানানো হয়েছে, সরকার ফেলে দেওয়ার চেষ্টাও করতে পারে মাওবাদীরা (FATF)।
আরও পড়ুন: মেডিক্যাল কলেজে কায়েম ‘থ্রেট কালচার’, জানুন এই সংস্কৃতি সম্পর্কে
ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, গত পাঁচ বছরে অর্থ পাচারের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার সংখ্যা কনস্টিটিউশনাল চ্যালেঞ্জের একটি সিরিজ। ২০২২ সালে সমাধান হয়েছে। যদিও মামলা ও দোষী সাব্যস্ত হওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। তবুও মুলতুবি মামলার বিরাট সংখ্যাও রয়ে গিয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, মূল্যায়নের পর ভারতকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ বিভাগে রাখা হয়েছে এবং নিয়ম অনুযায়ী তিন বছরের মধ্যে প্লেনারিতে রিপোর্ট করবে। জানা গিয়েছে, ভারত, ইতালি, ফ্রান্স এবং ব্রিটেন হল মাত্র চারটি দেশ, যাদের নিয়মিত (Money Laundering) পর্যবেক্ষণ বিভাগে রাখা হয়েছে (FATF)।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours