মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: স্ত্রীকে ইদের উপহার কিনে দিতে নিজের গলার সোনার চেন বিক্রি করে দিয়েছিলেন তেলাঙ্গানার খুন হওয়া হিন্দু যুবক। উপহার কেনার আগেই অবশ্য স্ত্রীর ভাইয়ের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন ওই যুবক। কৃষ্ণবেশে স্বামীর একটা ছবিই আপাতত বুকে জড়িয়ে ধরে লাগাতার কেঁদে চলেছেন আসরিন সুলতানা ওরফে পল্লবী। এতদিন পতিগৃহে যাত্রা করতে না পারলেও, এখন পেরেছেন। যতদিন বাঁচবেন স্বামীর ভিটে ছেড়ে কোথাও নড়বেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বছর পঁচিশের ওই তরুণী।
ভালবেসে মুসলিম সহপাঠীকে বিয়ে করেছিলেন তেলাঙ্গানার সারুরনগর এলাকার হিন্দু যুবক বছর ছাব্বিশের বিল্লাপুরাম নাগরাজু। বিয়ের পরে পরেই গা ঢাকা দেন নবদম্পতি। পাছে হিন্দু স্বামীর কোনও ক্ষতি তাঁর আত্মীয়রা যাতে না করতে পারেন, তাই নাম বদলে সুলতানা হয়ে যান পল্লবী। সম্প্রতি এলাকায় ফিরে কাজে যোগ দেন নাগরাজু। এর পরেই রাতের অন্ধকারে বাইকে চড়ে এসে তাঁকে নৃসংশভাবে কুপিয়ে খুন করে সুলতানার এক ভাই ও তার বন্ধু। সেদিনের সেই নৃশংসতার ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে সুলতানার। তিনি বলেন, কয়েকটা মুহূর্তের মধ্যেই অন্তত ৩০-৩৫ বার লোহার রড দিয়ে আমার ভাই ও তার এক বন্ধু নাগরাজুর মাথায় আঘাত করছিল। সেই দৃশ্য দেখতে ভিড় জমে গিয়েছিল। সাহায্যের জন্য অনুনয়-বিনয় করলাম। সবাই খুনের দৃশ্য মোবাইল বন্দি করতেই ব্যস্ত। কেউ সাহায্য করল না আমাকে। চোখের সামনেই ছটফট করতে করতে মারা গেল আমার স্বামী।
আরও পড়ুন : ভিনধর্মের যুবতীকে বিয়ে, প্রাণ গেল দলিত যুবকের, ধৃত স্ত্রীর ভাই সহ ২
নাগরাজুর মৃত্যুর পরে স্বামীর ভিটেয় ফিরে এসেছেন সুলতানা। স্বামীর পরিবার তাঁদের বিয়ে মেনে না নেওয়াতেই তাঁরা ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন এদিক-সেদিক। নাগরাজুর মৃত্যুর পরে তাঁর শোকে কাতর পরিবারকে সান্ত্বনা দিতেই ভিটেয় ফিরেছেন সুলতানা। স্বামীর একটি ছবি বুকে নিয়ে কেঁদে চলেছেন অনর্গল। স্বামীকে নৃশংসভাবে খুন করলেও, তিনি যে স্বামীর ভিটে ছেড়ে কোত্থাও যাবেন না, কান্নাভেজা গলায় তা জানিয়ে দিয়েছেন ভিন ধর্মের ওই তরুণী।
নাগরাজু যে তাঁকে কত ভালবাসতেন, কাঁদতে কাঁদতে বারবার সেকথাই বলছিলেন সুলতানা। তিনি জানান, তাঁকে ইদের উপহার কিনে দিতে চারমিনারে নিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছিলেন নাগরাজু। সেজন্য গলার দামি সোনার চেনটা মাত্র ২৫ হাজার টাকা বিক্রিও করে দিয়েছিলেন। সেই টাকা এনে তাঁর হাতে দিয়েওছিলেন স্বামী। তারপর...। হাউহাউ করে কেঁদে ফেলেন সদ্য বিধবা তরুণী। ওড়নার আঁচল দিয়ে কান্না রোধের নিষ্ফল চেষ্টাও করতে দেখা যায় তাঁকে।
+ There are no comments
Add yours