মাধ্য়ম নিউজ ডেস্ক: সম্প্রতি, বাংলাদেশ (Bangladesh) সফরে গিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর (External Affairs Minister S Jaishankar)। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ২ দিনের সফরে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (PM Sheikh Hasina) ও বিদেশমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাত শেষে জয়শঙ্কর জানান, দুদেশের মধ্যে সম্পর্কের (India Bangladesh Relation) বন্ধন আরও দৃঢ় হচ্ছে। তিনি বলেন, আলাপচারিতার সময় দুই দেশের মধ্যে সংযোগ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
জয়ঙ্কর জানান, মূলত দুদেশের মধ্যে যোগাযোগ আরও বৃদ্ধির ব্যাপারেও কথাবার্তা হয়েছে। আর সেই সূত্র ধরেই ভারতের উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলি যাতে চট্টগ্রাম বন্দর (Chittagong port) ব্যবহার করতে পারে তারও প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সূত্রের খবর, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, ভারতের উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে পারে। মূলত অসম ও ত্রিপুরার মতো উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলির সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ আরও বৃদ্ধির জন্য চট্টগ্রাম বন্দর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই প্রসঙ্গই উত্থাপন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে ভারত ও বাংলাদেশ একটি মউ স্বাক্ষর করেছিল, যাতে ভারতে পণ্য পরিবহণের জন্য বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ মন্ত্রিসভা পণ্য পরিবহনের জন্য দুটি বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার জন্য নতুন দিল্লির সঙ্গে প্রস্তাবিত চুক্তি অনুমোদন করেছে। চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র-বন্দর। উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি এই বন্দর ব্যবহার করে তাদের অর্থনৈতিক কার্যকলাপকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করতে পারে। সেই সম্ভাবনাও রয়েছে।
এদিকে, শেখ হাসিনাকে ভারতে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর তরফে পাঠানো সেই আমন্ত্রণ হাসিনার কাছে পেশ করেন জয়শঙ্কর। পরে বিদেশমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাঁর সময় সুবিধা অনুযায়ী ভারত সফরে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘‘আমার এখনও জানা নেই কখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করবেন। সফরটি সম্পূর্ণ তাঁর সুবিধাজনক সময়ের উপর নির্ভর করে। আমাদের সফর চূড়ান্ত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’’ বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গেও দেখা করেন এস জয়শঙ্কর এবং তাঁকে জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশনের পরবর্তী বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য তাঁকে ভারতে আমন্ত্রণ জানান।
সাম্প্রতিককালে, পাকিস্তান বাদ দিয়ে ভারতের অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে চিনের ঘনিষ্ঠতা ক্রমশ বাড়ছিল। ভারতকে চাপে ফেলতে এক-এক করে নেপাল থেকে শুরু করে শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করে চিন। বিশাল অঙ্কের আর্থিক অনুদান হোক বা সহজলভ্য় ঋণ-- এক এক করে টোপ দিয়ে ভারতের প্রতিবেশীদের কব্জা করার কৌশল নেয় 'ড্রাগনের দেশ'। এতে ভারতের সমস্যা বাড়ছিল। কিন্তু, হালে চিনের মুখোশ খুলে গিয়েছে। বিশেষ করে, শ্রীলঙ্কার ভয়াবহ পরিস্থিতি চোখে আঙুল দিয়ে সকলকে দেখিয়ে দিয়েছে, চিনের সঙ্গে হাত মেলালে, আখেরে কী ক্ষতিটাই না হবে! বন্দর গঠন থেকে শুরু করে সার্বিক পরিকাঠামো উন্নয়নের টোপ --- চিনের সহজ ঋণের লোভে পা দিয়ে কার্যত দেউলিয়া অবস্থা হয়েছে ভারতের প্রতিবেশী এই দ্বীপরাষ্টটির।
পাকিস্তানে এখন অন্য চিনা-সমস্যায় জর্জরিত। এমনিতে, চিনকে বলা হয় পাকিস্তানের সব ঋতুর বন্ধু। কিন্তু, করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে মানববোমা বিস্ফোরণে ৪ চিনা নাগরিকের মৃত্যুও দেখিয়ে দিচ্ছে, বালোচিস্তানের মানুষ চিনাদের ওপর কতটা ক্ষুব্ধ হয়ে রয়েছে। এটাও দিনের আলোর মতো স্বচ্ছ যে, ওই অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই চিনারা নিপীড়ন চালাচ্ছিল। ফলে, ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলি এখন টের পাচ্ছে, চিনের সঙ্গে হাত মেলালে হাত পুড়বেই। ফলে, চিন নিয়ে এখন তারা সতর্ক। পাকিস্তানের মতো অবস্থা নয় যাদের, অর্থাৎ, যারা চিনের ওপর নির্ভরশীল নয়, সেই সব দেশ এখন নিজেদের তফাতে রাখতে চাইছে চিনের থেকে।
যেমন বাংলাদেশ। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সুসম্পর্ক দীর্ঘদিনের। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনে ভারতের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। গত কয়েক দশক ধরে, ধীরে ধীরে নিজেদের মেলে ধরছে এই প্রতিবেশী রাষ্ট্র। নিজেদের ক্ষমতার ওপর আস্থা রেখে ক্রমশ এগিয়ে চলেছে তারা। কিন্তু, একটা সময়ে বাংলাদেশও চিনের দিকে অনেকটা ঝুঁকে পড়ছিল। যা ভারতের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছিল। যদিও, শ্রীলঙ্কায় সাম্প্রতিকালের ঘটনাবলি থেকে প্রাপ্ত বাস্তব পরিস্থিতি দেখে হয়ত তারাও ভাবতে শুরু করেছে, যে চিনের দিকে ঘেঁষলে, লাভের চেয়ে ক্ষতিই হবে বেশি।
অন্যদিকে, ভারত এখন দক্ষিণ এশিয়া তথা ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি শক্তি হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেছে। বিশেষ করে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্ব ভারত স্বাবলম্বী ও আত্মনির্ভর হয়ে উঠেছে। কোনও বড় শক্তি তা সে পশ্চিমের হোক বা পূর্বের-- এখন ভারতকে ঘাঁটাতে চায় না। ভারত কারও সার্বভৌমত্ব খণ্ডন করে না। সবচেয়ে বড় কথা, কোভিডকালে, কঠিন সময়ে ভ্যাকসিন পাঠিয়ে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল ভারত। সব মিলিয়ে সু-প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে ভারত যে চিনের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে, তা বলা বাহুল্য।
+ There are no comments
Add yours