India UK Relation: রাজার দেশে লেবার পার্টির জয়, কোন খাতে বইবে ভারত-ব্রিটেন সম্পর্কের জল?

Keir Starmer: ব্রিটেন জয় ‘লেবার’-এর, কী প্রভাব পড়বে ভারতে?...
starmer_f
starmer_f

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মিলে গিয়েছে প্রাক নির্বাচনী সমীক্ষা। ব্রিটেনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে লেবার পার্টি। হার হয়েছে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনকের দল কনজারভেটিভ পার্টির (টোরি)। ব্রিটেনের (India UK Relation) পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন লেবার পার্টির কিয়ের স্টার্মার (Keir Starmer)।

ভারত উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তির দেশ (India UK Relation) 

গত কয়েক বছরে হাল খারাপ হয়েছে ব্রিটেনের অর্থনীতির। অথচ এই সময় ভারতের অর্থনীতির লেখচিত্র ঊর্ধ্বমুখী। প্রত্যাশিতভাবেই সুনক কিংবা স্টার্মার যিনিই প্রধানমন্ত্রী হবেন, তাঁকেই বজায় রেখে চলতে হবে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক। কারণ বর্তমানে ভারত উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তির দেশ। তাই সুনক হেরে গিয়ে স্টার্মার জয়ী হওয়ায়ও ভারত-ব্রিটেন সম্পর্কে বিশেষ প্রভাব পড়বে না বলেই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

ক্ষমতায় স্টার্মারের দল

ভারতের মতো বহুদলীয় গণতন্ত্রের দেশ ব্রিটেনও। সে দেশেরই হাউস অফ কমনসে (ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার মতো) বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় এসেছে স্টার্মারের দল। এক সময় ব্রিটেনের এই দলের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক ছিল ভারতের। পরে ভাঁটা পড়ে সেই সম্পর্কে। লেবার পার্টির রাশ যখন জেরেমি করবিলের হাতে ছিল, তখনই ভারতের সঙ্গে লেবার পার্টির সম্পর্কে চিড় ধরে। ভারত সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন জেরেমি। তার জেরেই তলানিতে ঠেকে ভারতের সঙ্গে লেবার পার্টির সম্পর্ক। ফলে, ভারতের সঙ্গে লেবার পার্টির সুসম্পর্কের (India UK Relation) বাতাবরণ তৈরি করতে হবে স্টার্মারকে। কারণ নরেন্দ্র মোদির জমানায় তরতরিয়ে উঠেছে ভারতীয় অর্থনীতির গ্রাফ। ব্রিটেনকে সরিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের তালিকায় পাঁচ নম্বরে জায়গা করে নিয়েছে ভারত। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, তাই ভারতকে এড়িয়ে কিছুই করার জো নেই স্টার্মারের।

দলীয় অবস্থান পরিবর্তনের স্টার্মার

সে কথা ভালো করেই জানেন স্টার্মারও। তাই ২০২০ সালে লেবার পার্টির রাশ হাতে আসার পরে পরেই দলীয় অবস্থান পরিবর্তনের পথে হাঁটতে শুরু করেন ব্রিটেনের হবু প্রধানমন্ত্রী। ভারত-লেবার পার্টির সম্পর্ক মেরামত করতে তিনি প্রথমেই যে কাজটি করেছিলেন, সেটি হল প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো। ব্রিটেনের নির্বাচনে প্রবাসী ভারতীয়রা একটা ফ্যাক্টর। তাই ভোট বৈতরণী ভালোভাবে পার হতে গেলে যে তাঁদের উপেক্ষা করা যাবে না, তা বুঝেই সে দেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে শুরু করেছিলেন স্টার্মার (India UK Relation)। দেওয়ালি এবং হোলির মতো হিন্দু-উদযাপিত উৎসবগুলিতেও যোগ দিচ্ছিলেন তিনি (Keir Starmer)। নির্বাচনী প্রচারে বেরিয়েও লেবার পার্টির এই নেতার কথায় বারংবার উঠে এসেছে বৈশ্বিক নিরাপত্তা, জয়বায়ু সুরক্ষা এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে মজবুত সম্পর্ক গড়ে তোলার কথা। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এটাই ‘খেয়েছেন’ প্রবাসী ভারতীয়রা। তার জেরেই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেয়েও বেশি আসন পেয়ে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রিত্বের হাল ধরতে চলেছেন স্টার্মার।

আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাড়ছে ভারতের গুরুত্ব

কনজার্ভেটিভ পার্টির জমানায় যেখানে ব্রিটেন ক্রমশই তলিয়ে গিয়েছে, প্রায় (প্রায় বললাম এই কারণে যে কনজার্ভেটিভ পার্টি ব্রিটেন শাসন করেছে ১৪ বছর, আর মোদি ১০ বছর) সেই একই সময় ভারতের হাল ধরেছেন বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএর নেতা নরেন্দ্র মোদি। তার পর থেকেই আন্তর্জাতিক মঞ্চেও ভারতের উত্থান লক্ষ্যণীয়। আন্তর্জাতিক মহলের মতে, বর্তমানে আন্তর্জাতিক মঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ভারত (India UK Relation)। তাই ভারতের সঙ্গে ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক দ্রুত মেরামত করাই যে তাঁর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হবে, তা বুঝেছিলেন স্টার্মার। নির্বাচনের ফল বের হওয়ার পর জনগণের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণেও তিনি বলেছেন, “পরিবর্তনের কাজ আজ থেকেই শুরু হবে (ওয়াকিবহাল মহলের মতে, হয়ত প্রেক্ষাপট ভিন্ন, তবে তাঁর এই সংক্ষিপ্ত বাক্যে লুকিয়ে রয়েছে অনেক ইঙ্গিত। যারই একটি হল ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত।)।”

স্টার্মারকে শুভেচ্ছা মোদির

এদিকে, ব্রিটেনের হবু প্রধানমন্ত্রী স্টার্মারকে শুভেচ্ছা জানালেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লিখেছেন, “ভারত-ব্রিটেন দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।”

স্টার্মারের লক্ষ্য

ভারতের সঙ্গে লেবার পার্টির সম্পর্কের সেতুবন্ধন করার পাশাপাশি অভিবাসন নীতি ও বাণিজ্য চুক্তির মতো বৈদেশিক নীতিগুলিতে গুরুত্ব দেওয়াও লক্ষ্য স্টার্মারের (Keir Starmer)। অভিবাসন হ্রাসের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও ঐক্যমত্যে আসতে হবে তাঁকে। ব্রিটেনের শিল্পক্ষেত্রে কর্মরত ভারতীয়দের অস্থায়ী ভিসার বিষয়ে আলোচনা করে ভারসাম্যমূলক আইন প্রণয়ন করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে স্টার্মারের। এফটিএ নিয়েও পদক্ষেপ করতে হবে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের হবু বাসিন্দাকে। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে এফটিএ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল ভারত-ব্রিটেনের। এনিয়ে ১৪ রাউন্ড বৈঠকও হয়ে গিয়েছে। এই বিষয়টিকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে স্টার্মারকে (India UK Relation)। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো রাহুল রায়চৌধুরী যথার্থই বলেছেন, “নয়া লেবার সরকারের কাছে ভারতের গুরুত্ব একটুও কমবে না বলেই আমার বদ্ধমূল ধারণা।”

আর পড়ুন: ব্রিটেনের ‘হাউস অফ কমনসে’ রেকর্ড সংখ্যক ভারতীয় বংশোদ্ভূত, তালিকায় কারা?

লেবার পার্টির তরফেও বলা হয়েছে, তারা ভারতের সঙ্গে নয়া কৌশলগত অংশীদারিত্ব খুঁজবে। এর মধ্যে যেমন রয়েছে এফটিএ, তেমনি রয়েছে নিরাপত্তা, শিক্ষা, প্রযুক্তি এবং অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তন। কিছুদিন আগে স্বয়ং স্টার্মারই (Keir Starmer) বলেছিলেন, “যখন দুটি জাতির ইতিহাস আমাদের মতোই জড়িয়ে থাকে, তখন এটি একটি দীর্ঘ ছায়া ফেলতে পারে। তবে আজকের ভারতে আমি সেই (India UK Relation) ছায়া দেখতে পাচ্ছি না।” ভারতকে যে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে ব্রিটেন, তার আরও প্রমাণ হল, লেবার দলের তরফে জানানো হয়েছে, নতুন সরকার গঠনের একমাসের মধ্যে ভারত সফরে আসবেন নবনিযুক্ত ব্রিট বিদেশ সচিব ডেভিড ল্যামি। গতকালই, ডেভিডকে মনোনীত করেছেন স্টার্মার। এর পরই, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ল্যামিকে অভিনন্দন-বার্তা পাঠিয়েছেন। 

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles