মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: নির্জনে, নিরালায় অনাবিল প্রকৃতির মাঝে দু'দণ্ড শান্তির খোঁজে যাঁরা পথে বের হন, তাঁদের কাছে অন্যতম সেরা স্থান হল পশ্চিমবঙ্গের নিকটতম প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের অপূর্ব সুন্দর পর্যটনকেন্দ্র ম্যাকলাস্কিগঞ্জ (Jharkhand News)। ১৯৩৪ সালে রাতুর মহারাজের কাছ থেকে প্রায় ১০০০ হেক্টর জমি লিজ নিয়ে (যার মধ্যে ছিল কঙ্কা, হেসাল, লাপড়া বস্তি) এদেশে বসবাসকারী অ্যাংলো ইন্ডিয়ান মানুষজনের নিজস্ব ভূমি হিসেবে এক আরণ্যক জনবসতি গড়ে তোলেন ই টি ম্যাকক্লস্কি সাহেব, যা পরবর্তীকালে সাধারণ মানুষের মুখে মুখে হয়ে দাঁড়ায় "ম্যাকলাস্কিগঞ্জ"। একে আপামর বাঙালি এবং প্রকৃতিপ্রেমিক পর্যটকের মনে চিরস্থায়ী করে রেখে গিয়েছেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ। এই ম্যাকলাস্কিগঞ্জ-এর পটভূমিতেই তিনি লিখেছিলেন তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস "একটু উষ্ণতার জন্য।
লাল পলাশ আর কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম আলো (Jharkhand News)
চারদিকে শিমুল, পলাশ, মাদার, কৃষ্ণচূড়া গাছের ফাঁক দিয়ে উঁকি মারে জ্যাকারান্ডা, পুটুস ফুলের রঙিন আকর্ষণ। মাঝে মধ্যেই রয়েছে বেশ বড় বড় আমবাগান। লালমাটির পাথুরে পথ। সেই পথের-ই দু'পাশে রয়েছে একাধিক অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের বাড়ি। তবে বর্তমানে এখানে আর অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের বাস আগের মতো নেই, তবুও এখনও বেশ কিছু অ্যাংলো ইন্ডিয়ান পরিবার বাস করেন। বসন্ত ঋতু এলেই এই সমগ্র অঞ্চল যেন নতুন রূপে, নতুন রঙে সেজে ওঠে। লাল পলাশ আর কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম আলোয় সমগ্র ম্যাকলাস্কিগঞ্জ যেন এক অপরূপ মোহময়ী রূপ ধারণ করে। কাছেই এক ছোট্ট পাহাড়, নাম "নাকো পাহাড়"। কেউ কেউ আবার একে "নক্কী" পাহাড় বলেও জানেন। এখানে রয়েছে একটি ছোট্ট নদী। আদিবাসী কিশোরীর উচ্ছলতায় আপন খেয়ালে বয়ে চলেছে সেই ছোট্ট কিন্তু সুন্দরী নদী। রয়েছে আদিবাসী হস্তশিল্প সমবায় "জাগৃতি বিহার", আর এখানে রয়েছে একটি অদ্ভুত স্থাপত্য। একই জায়গায় গড়ে তোলা হচ্ছিল একটি হিন্দু মন্দির, খ্রিষ্টানদের জন্য চার্চ, মুসলিমদের জন্য মসজিদ। যদিও এটির নির্মাণকাজ পুরোপুরি সম্পূর্ণ হয়নি, তবু সর্বধর্মের মিলনের স্মারক হিসেবে এটি একটি অনন্য উদ্যোগ হয়ে উঠতে পারে। এসব তো দেখবেনই, সঙ্গে প্রাণ ভরে উপভোগ করুন এখানকার শান্ত, নির্মল পরিবেশ, অনাবিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বসন্তের পলাশ আর কৃষ্ণচূড়া ফুলের আগুন রাঙা ছবি (Jharkhand News)।
কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন? (Jharkhand News)
যাতায়াত-কলকাতা থেকে ডালটনগঞ্জ বা বেতলা যাওয়ার প্রায় সব ট্রেনই যাচ্ছে ম্যাকলাস্কিগঞ্জের (Jharkhand News) ওপর দিয়ে। হাওড়া থেকে যাচ্ছে শক্তিপুঞ্জ এক্সপ্রেস, ভূপাল এক্সপ্রেস প্রভৃতি ট্রেন। আবার রাঁচি থেকে বাস যাচ্ছে ম্যাকলাস্কিগঞ্জ। রাঁচি থেকে সড়কপথে দূরত্ব প্রায় ৬০ কিমি। যেতে সময় লাগে প্রায় দুই-আড়াই ঘণ্টা। আর হাওড়া থেকে রেলপথে দূরত্ব প্রায় ৪৫২ কিমি। সময় লাগে প্রায় ১০-১২ ঘণ্টা। আর ডালটনগঞ্জ শহর থেকে সময় লাগে প্রায় তিন থেকে চার ঘণ্টা।
থাকা খাওয়া-এক সময় এখানে বেশ কিছু হোটেল ছিল। বর্তমানে এখানে হোটেলের সংখ্যা বেশ কম। তবে এখন ও এখানে বেশ কিছু বাড়ি আছে যেগুলো প্রয়োজনে পর্যটকের ভাড়া দেওয়া হয়। এর জন্য যোগাযোগ করতে পারেন ০৮৯৮১৬১২১০০ নম্বরে। আর হোটেল বুকিং বা এই বিষয়ে বিশদ জানতে প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন ০৭৭৩৯০৮৯০৫২ নম্বরে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours