Keir Starmer: ব্রিটেনের কুর্সিতে লেবার পার্টি, স্টার্মার-রাজত্বে ভারত-ব্রিটেন সম্পর্ক কেমন হবে?

India UK Relation: ব্রিটেনের কুর্সিতে স্টার্মার, ‘হিন্দুফোবিয়া’ মুছবে সাগর পাড়ের দেশ থেকে?...
starmer_f
starmer_f

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ১৪ বছর পর ফের ব্রিটেনের কুর্সিতে বসেছে লেবার পার্টি। ২০১০ সালের পর এই প্রথম লেবার পার্টির কোনও (India UK Relation) নেতা হতে চলেছেন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের বাসিন্দা। লেবার পার্টির তরফে ব্রিটেনের কুর্সিতে যিনি বসতে চলেছেন তিনি কিয়ের স্টার্মার (Keir Starmer)। জয়ের পর ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, “১৪ বছর পর ফের ব্রিটেন নিজেদের ভবিষ্যৎ ফিরে পেয়েছে।”

স্টার্মারের মাথায় কাঁটার মুকুট! (Keir Starmer)

স্টার্মারের আগে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী পদে ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনক। তাঁর বছর দুয়েকের শাসনে ভারত-ব্রিটেন সম্পর্ক তুঙ্গে উঠছে, এমনটা বলা যায় না। তবে সম্পর্কের অবনতিও হয়নি। এবার স্টার্মারের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্পর্কের জল কোন খাতে গড়ায়, সে দিকেই তাকিয়ে ভারত ও ব্রিটেন দুই দেশ। স্টার্মার যে সময় ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসেছেন, সেই সময় সে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব ভালো নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম ব্রিটেনের ঘাড়ে করের বোঝা চেপেছে বিপুল পরিমাণে। সংখ্যাতত্ত্বের হিসেবে নিট ঋণের পরিমাণ ব্রিটেনের বার্ষিক অর্থনৈতিক আউটপুটের সমান। দেশের (Keir Starmer) পাবলিক পরিকাঠামো নড়বড়ে, জীবনযাপনের মান কমছে তীরের বেগে। সঙ্কটের মুখে সে দেশের জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা। এহেন আবহে কুর্সিতে বসেছেন স্টার্মার।

স্টার্মারের সামনে গুচ্ছ চ্যালেঞ্জ

বস্তুত, কাঁটার মুকুট পরেছেন ব্রিটেনের নয়া প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সামনে সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল দ্রুত দেশের আর্থিক পরিস্থিতির মোকাবিলা করা। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির তালিকায় দীর্ঘদিন ধরে পাঁচ নম্বরে ছিল ব্রিটেন। গত বছর সেই জায়গাটা দখল করেছে নরেন্দ্র মোদির ভারত। ব্রিটেন নেমে গিয়েছে ওই তালিকার ছ’নম্বরে। তাই ব্রিটেনকে ফের পূর্বাবস্থায় ফেরানোটাই স্টার্মারের কাছে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। ব্রিটেনবাসীর জীবনযাপনের মানোন্নয়ন করাও তাঁর আশু কর্তব্য। স্বাস্থ্য, শিক্ষা-সহ বিভিন্ন অতিপ্রয়োজনীয় খাতে বাজেট বরাদ্দ কাটছাঁট না করেই উন্নয়ন করতে হবে এই সব ক্ষেত্রে। এসব ‘ঘরোয়া সমস্যা’র সমাধানও যেমন করতে হবে স্টার্মারকে, তেমনি মজবুত করতে হবে ভারত-ব্রিটেন (পড়ুন, লেবার পার্টির) সম্পর্কও।

আর পড়ুন: চিনা হেফাজতে মৃত্যু তিব্বতি তেনজিং ডেলেকের, কে জানেন?

তলানিতে ভারত-লেবার পার্টির সম্পর্ক

কাশ্মীর নিয়ে মন্তব্যের জেরে তলানিতে ঠেকে ভারত ও লেবার পার্টির সম্পর্ক। সেই সম্পর্ককে পুনরায় আগের জায়গায় ফিরিয়ে দেওয়াও অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ ব্রিটেনের নয়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে। স্টার্মারের আগে লেবার পার্টির রাশ ছিল জেরেমি করবিনের হাতে। তাঁর ভারত-বিরোধী অবস্থানের জন্যই নয়াদিল্লির সঙ্গে লেবার পার্টির সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এই সম্পর্ককেই দ্রুত ফেরাতে হবে জেরেমি জমানার আগের অবস্থায়।

প্রতিশ্রুতি রক্ষার পালা স্টার্মারের

ঋষি সুনক যখন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন বিরোধীদলের নেতা ছিলেন স্টার্মার (Keir Starmer)। সেই সময়ই তিনি ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার কথা বলতেন। ব্রিটেনে ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিন্দুদের ওপর খালিস্থানপন্থীরা যখনই হামলায় চালাত, তখনই তার কড়া নিন্দা করতেন স্টার্মার। নির্বাচনী প্রচারে বেরিয়ে তিনি এ-ও দাবি করেছিলেন, তাঁর দল সরকারে এলে বৈশ্বিক নিরাপত্তা, জলবায়ু সংরক্ষণ এবং অর্থনৈতিক সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে ভারতের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে চাইবে। ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতায় এসেছে স্টার্মারের দল। তাই এবার তাঁর পালা প্রতিশ্রুতি রক্ষার।

ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক

ক্ষমতায় এলে তিনি যে ভারতের সঙ্গে নতুন কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান, নির্বাচনী প্রচারেই তা জানিয়েছিলেন স্টার্মার। ভারতের সঙ্গে তিনি যে মুক্ত-বাণিজ্যের চুক্তি করতেও বদ্ধপরিকর, সেটাও জানিয়েছিলেন ব্রিটেনের লেবার পার্টির এই নেতা। এর পাশাপাশি প্রযুক্তি, নিরাপত্তা, শিক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয় নিয়েও ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী স্টার্মার। বর্তমানে ভারত বিশ্বের দ্রুত উন্নতিশীল দেশ। বিভিন্ন (India UK Relation) আন্তর্জাতিক সংস্থার করা সমীক্ষা বলছে, অচিরেই জাপানকে টপকে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের তালিকায় চার নম্বরে চলে আসবে মোদির ভারত। তাই ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে মুখিয়ে ব্রিটেনের নয়া প্রধানমন্ত্রী।

‘হিন্দুফোবিয়া’ মুছে ফেলতে আগ্রহী!

তিনি যে হিন্দু-বিরোধী নন, তিনি যে ব্রিটেন থেকে ‘হিন্দুফোবিয়া’ মুছে ফেলতে আগ্রহী, তা-ও ভোটের আগে বারংবার প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন স্টার্মার। সেই কারণেই হিন্দুদের উৎসব হোলি কিংবা দেওয়ালির মতো অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন তিনি। বার্তা দিতে চেয়েছিলেন ‘আমি তোমাদেরই লোক’ গোছের। স্টার্মারের এই কৌশলে কাজ হয়েছে। ব্রিটেনের নির্বাচনে প্রবাসী ভারতীয় হিন্দু ভোটাররা একটা বড় ফ্যাক্টর। সেই ফ্যাক্টরই এবার ব্যাপকভাবে কাজ করেছে বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের মতে, প্রবাসী হিন্দু কিংবা ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের একটা বড় অংশের ভোট এবার পড়েছে লেবার পার্টির ঝুলিতে। তাই স্টার্মারের জয় হয়েছে নিছক কেক-ওয়াক।

স্টার্মারের জয়ের পর তাঁকে ফোনে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই সময়ই দুই রাষ্ট্রনেতা ‘মজবুত অর্থনৈতিক বন্ধন’ গড়ে তুলতে আগ্রহী বলে জানিয়েছিলেন। স্টার্মার মোদিকে (India UK Relation) এ-ও বলেছিলেন, ভারত-ব্রিটেন মুক্ত বাণিজ্য নিয়ে চলা দোটানায় ইতি টানতে প্রস্তুত ব্রিটেন।

আসলে মোদির ভারতকে এড়িয়ে যাওয়ার যে কোনও উপায়ই নেই লেবার পার্টির নেতা তথা ব্রিটেনের নয়া প্রধানমন্ত্রী স্টার্মারের (Keir Starmer)!

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles