মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: পাঁচবছর আগে উত্তর দিনাজপুরের দাড়িভিটে, পুলিশের গুলিতে দুই ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় এনআইএ (NIA) তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দাড়িভিট হাইস্কুলে, বাংলার বদলে উর্দু শিক্ষক নিয়োগের প্রতিবাদে স্কুল চত্বরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল ছাত্র-ছাত্রীরা, অভিযোগ সেসময় আচমকাই পুলিশের ছোড়া গুলিতে প্রাণ যায় দুই বিক্ষোভকারী ছাত্রনেতা রাজেশ সরকার (২০) এবং তাপস বর্মনের (২০)। সেসময় এই ঘটনাকে ঘিরে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। প্রথম থেকেই সিবিআই তদন্তের দাবি জানায় নিহত ছাত্রদের পরিবার। জল গড়ায় হাইকোর্ট অবধি। কেন্দ্রীয় তদন্ত যদি কখনও হয় পাওয়া যাবে বিচার! এই আশায় ছাত্রদের দেহ দাহ করেনি পরিবার। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা মালঞ্চ নদীর তীরে আজও শোয়ানো রয়েছে তাঁদের দেহ। এদিন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থারের এজলাসে এনআইএ (NIA) তদন্তের নির্দেশ আসতেই বিচারের আশায় আরও একবার বুক বাঁধলেন নিহতদের পরিবার। সেদিন পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়া রাজেশ সরকারের মা, ঝর্ণা সরকার এই প্রতিবেদককে ফোনে বলেন, ‘‘পাঁচ বছর ধরে কাঁদছি, বিচারের আশায়। আসল সত্য উদঘাটিত হোক এটাই চাই। পুলিশি তদন্তে আমাদের ভরসা কখনও ছিলনা। রাজাশেখর মান্থার আমাদের কাছে ভগবানতুল্য।’’ প্রসঙ্গত পুলিশের গুলিতে কয়েকদিন আগেই উত্তরদিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে নিহত হন মৃত্যুঞ্জয় বর্মন নামের এক যুবক। সেই আবহে আজকে দাড়িভিট কান্ডে এনআইএ (NIA) তদন্তের নির্দেশ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। কারণ এতে আরও জোরালো হবে কালিয়াগঞ্জ গুলি কান্ডে কেন্দ্রীয় তদন্তের দাবি। এদিন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের নির্দেশও দেন।
সেদিনের ঘটনাক্রম
উত্তর দিনাজপুরে জেলার চিকেন নেকে বাস প্রায় ৭২ শতাংশ সংখ্যালঘু মানুষদের। সেখানের দাড়িভিট হাইস্কুলে বাংলার বদলে শিক্ষক নিয়োগ করা হয় উর্দুর। ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি, উর্দুভাষী পড়ুয়া না থাকা সত্ত্বেও ওই ভাষায় শিক্ষক নিয়োগ করা হয় জোরপূর্বক। অথচ বাংলা ভাষার শিক্ষকের প্রয়োজন থাকলেও সেই চাহিদা মেটানো হয়নি। এই দাবিতেই বিক্ষোভে নামে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা। সেইমতো ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর উত্তরদিনাজপুর জেলার ডিএম স্কুলে এসে প্রতিশ্রুতি দেন, উর্দু শিক্ষক নিয়োগ করা হবেনা স্কুলে। পরের দিন ১৯ সেপ্টেম্বর ছাত্র-শিক্ষক প্রীতি ফুটবল ম্যাচও অনুষ্ঠিত হয়। এক আন্দেলনকারীর দাবি, হঠাৎই ২০ সেপ্টেম্বর দুগাড়ি পুলিশ, স্কুলে এসে উর্দু শিক্ষককে নামিয়ে দিয়ে যায়। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্র-ছাত্রীরা। স্কুলের গেটে তালা লাগিয়ে চলতে থাকে বিক্ষোভ। আন্দোলনকারীদের দাবি, পুরুষ পুলিশরা এইসময় নানা অশ্লীল মন্তব্য করতে থাকে ছাত্রীদের উদ্দেশে। সেইসময় স্থানীয়রা প্রতিবাদে এগিয়ে আসেন। তখনই পুলিশ গুলি ছোড়ে। মৃত্যু হয় রাজেশ তাপসের। পায়ে গুলি লেগে আহত হন বিপ্লব নামে অপর এক আন্দোলনকারী। ঘটনায় অভিযোগ ওঠে, গুলিবিদ্ধ রাজেশ তাপসকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে গেলে মাঝপথে হামলাও শুরু হয় ভ্যানে। কোনওক্রমে হাসপাতালে পৌঁছালে, রাজেশকে মৃত বলে ঘোষণা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরের দিন ২১ সেপ্টেম্বর মারা যান তাপস বর্মন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours