মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কলকাতার যাদবপুর একটি অতি পরিচিত জায়গা। আর তা পরিচিত হওয়ার পিছনে যার অবদান সবচেয়ে বেশি, সেটি হল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় আজ বিশ্বের দরবারে পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু এই যাদবপুরেই আছে আরও এক জায়গা, যাকে যাদবপুরের অন্যতম ল্যান্ডমার্ক বলা যেতে পারে। তা হল 'সুলেখা মোড়'। এই জায়গার নাম অতি সাধারণ হলেও এর পিছনে আছে অনেক ইতিহাস। আসলে 'সুলেখা' একটি কোম্পানি, যা লেখার কালি প্রস্তুত করত। সেই কালির (Sulekha Ink) ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা যে গোটা ভারত ও বিশ্বে পৌঁছে গিয়েছিল, সেকথাও কমবেশি সবারই জানা। কিন্তু এর ইতিহাস কি জানেন?
সুলেখা কালির (Sulekha Ink) উৎপত্তি কীভাবে?
সময়টা ১৯০৫ সাল। লর্ড কার্জনের কুখ্যাত বঙ্গভঙ্গর সূচনা হয়েছে। এর প্রতিবাদে সরব অনেকেই। এটি পরিণত হল স্বদেশি আন্দোলনে। মূল লক্ষ্য ছিল, সমস্ত বিদেশি পণ্য বর্জন করে স্বদেশি পণ্য উৎপাদন ও ব্যবহার করা। এরই ফলে তৈরি হয় এশিয়ান পেইন্টস, টাটা স্টিল নামক অনেক সংস্থা। এই আন্দোলনে গান্ধীজিও প্রভাবিত হন এবং তিনি চিঠি, আবেদনপত্র প্রভৃতি লিখতে দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি কালি খুঁজছিলেন। এই চাহিদার কথা তিনি জানান বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামী সতীশচন্দ্র দাশগুপ্তকে। আর সতীশচন্দ্রের কাছ থেকে একথা জানতে পেরে ননীগোপাল মৈত্র এবং তাঁর ভাই শঙ্করাচার্য মৈত্র দেশীয় কালি বানানোর প্রথম উদ্যোগ নেন। এই উদ্যোগের ফসল হিসাবেই ১৯৩৪ সালে জন্ম নেয় সুলেখা কালি কোম্পানি। আস্তে আস্তে গোটা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়তে থাকে এই কালির জনপ্রিয়তা। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি এই কালি ছিল ভারতের প্রথম তৈরি কালি। আর এই কালি উৎপাদন হত দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুরে। বর্তমানের সুলেখা মোড়েই ছিল এর কারখানা। সেই থেকে এই জায়গা নাম পায় 'সুলেখা মোড়'।
সুলেখা নাম কে এবং কেন রাখলেন?
প্রথমে স্বদেশি কালি নামেই পরিচিত পেয়েছিল এই কালি। কিন্তু পরে গান্ধীজির কাছে এই কালির জনপ্রিয়তা এতটাই বেড়ে ওঠে যে তিনি নিজে এর নামকরণ করেন। খুব ভালো লেখা হত, তাই 'সু-লেখা' থেকে 'সুলেখা' নামকরণ করেন তিনি। এই কালি এই নামেই পরিচিতি পায় সমগ্র ভারতবর্ষে। বাংলার বাইরেও এর উৎপাদন শুরু হয় এই নামেই। এমনকী এই কালির বিজ্ঞাপনের লেখা লেখেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি লেখেন, 'সুলেখা কালি কলঙ্কের থেকেও কালো'
ননীগোপাল মৈত্র শিক্ষকতার চাকরি ছেড়েছিলেন কেন?
স্বাধীনতা সংগ্রামী ননীগোপাল মৈত্র প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি ছিলেন এবং সেই সময় তিনি পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর হন। পরে তিনি ছাড়া পেয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। কিন্তু সেই সময় স্বদেশী আন্দোলনের দ্বারা তিনি এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন যে, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যুট পরে যাওয়ার নীতি থাকলেও তিনি ধুতি-পাঞ্জাবি পরে শিক্ষকতা করতেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তকেও মেনে না নেওয়ায় চাকরি ছেড়ে তিনি কলকাতায় চলে আসেন এবং এই কালির ব্যবসাতেই সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করেন। সে সময় এই কালি "প্রফেসর মৈত্রের কালি" নামেও পরিচিতি পেয়েছিল। এক সময় এই কালির মাসিক বিক্রির হার ছিল প্রায় এক মিলিয়ন বোতল, যা অবাক করার মতো বিষয়। স্বাধীনতা ও স্বদেশি আন্দোলনের এটিও এক নতুন পদক্ষেপ ছিল। এই কালি আজও বাঙালির কাছে নস্টালজিক হয়ে আছে। ১৯৮৯ সালে এই কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেলেও আবার ২০০৬ সালে এই কালির উৎপাদন শুরু হয়।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours