মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ১৮৭৩ সালে শহর কলকাতার (Kolkata) বুকে ঘোড়ার মাধ্যমে শুরু হয়েছিল ট্রামের (Kolkata Tram) পথ চলা। দেড়শো বছর পরে তা বন্ধ হচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী ট্রাম চলাচকে ধরে রাখতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ বর্তমান মমতা-সরকার। আগামীদিনে ইতিহাসের পাতায় একমাত্র দেখা মিলবে শহর কলকাতার (Kolkata) এই ঐতিহ্যবাহী ট্রামের। বিশ্বের যে বড় বড় শহরে এখনও রমমরিয়ে চলে ট্রাম সেগুলি হল— লিয়ঁ- ফ্রান্স, ভিয়েনা- অস্ট্রিয়া, জুরিখ- সুইৎজারল্যান্ড, লিসবন- পর্তুগাল, বুদাপেস্ট- হাঙ্গেরি, প্রাগ- চেকিয়া, মেলবোর্ন- অস্ট্রেলিয়া। এরসঙ্গে ছিল কলকাতা। তবে তৃণমূল জমানায় তা উঠে যাচ্ছে। তবে কেন এই ট্রাম (Kolkata Tram) বন্ধ করা হচ্ছে, তার কোনও স্পষ্ট জবাব অবশ্য রাজ্য সরকার দিতে পারেনি। সবই ভাসাভাসা বিবৃতি দিচ্ছেন শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা।
আদালতে চলছে জোড়া মামলা
সম্প্রতি ট্রাম নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলায় রাজ্য পরিবহণ দফতরের মন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, গতির সঙ্গে তাল রাখতে গিয়ে শহরে একটি মাত্র রুট ছাড়া আর কোথাও ট্রাম চালানো হবে না। তাঁর যুক্তি, সবার ট্রামের প্রতি আবেগ থাকলেও রাস্তাকে যানজট মুক্ত করতেই শহরের বুকে আর ট্রাম চালানো যাবে না। ট্রাম গবেষক ও ট্রাম-প্রেমী ডক্টর দেবাশীষ ভট্টাচার্য জানান, বর্তমানে কলকাতা হাইকোর্টে ট্রাম নিয়ে দুটি মামলা চলছে। একটিতে, আদালতের তরফে বলা হয়েছিল যে, যতদিন পর্যন্ত এই মামলার শুনানি চলবে, ততদিন ট্রামের কোনও লাইনের উপরে পিচ ঢালা যাবে না ৷ কিন্তু, সম্প্রতি দেখা গিয়েছে কালিঘাট থেকে হাজরা মোড় পর্যন্ত পিচ ঢেলে ট্রাম লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যা আদালত অবমাননার সামিল।
বিজেপি নেতার ট্যুইট
ট্রাম (Kolkata Tram) বন্ধ হওয়ার পরে ডিপোর কাঠা-কাঠা জমির ভবিষ্যৎ কী হবে? এনিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন। বিরোধীদের কটাক্ষ, শহরের ইতিহাসকে নষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছে মমতা-সরকার। ট্রাম তুলে দিয়ে ফাঁকা ডিপোর জমিতে জমিয়ে প্রোমোটিংই লক্ষ্য এখন শাসক দলের। কারণ, এর আগেও ট্রামের জমিতে রসগোল্লা হাব এবং জামাকাপড়ের হাব হওয়ার কথা শোনা গিয়েছিল। গেরুয়া শিবিরের নেতা আইনজীবী তরুণজ্যোতি তেওয়ারি এ নিয়েই এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করেছেন এবং সেখানে লিখছেন, ‘‘ট্রাম ডিপোর জমিগুলি কাকে দেওয়া হবে সেটা ঠিক করে নিয়েছে তো তৃণমূল? একটা অজুহাত দেওয়া হবে জানি যে জনগণের স্বার্থে ডিপোর জায়গাগুলি কোনও না কোনও সংস্থাকে দেওয়া হবে। ঠিক যেমন সিইএসসি-কে দেওয়া হয়েছিল কোয়েস্ট মলের জায়গায়। গোয়েঙ্কাদের ব্যবসায়ী স্বার্থ চরিতার্থ হয় কিন্তু জনগণের কোন স্বার্থে লেগেছে সেটা আজও বুঝতে পারলাম না।’’
ট্রাম এবং কলকাতা সম্পর্ক নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই।।
— Tarunjyoti Tewari (@tjt4002) September 25, 2024
কতটা সুবিধা হত কতজন ব্যবহার করত সেগুলো নিয়ে বলাটাও এখন বেকার।।
আমার মনে একটা অন্য প্রশ্ন আছে।
ট্রাম ডিপোর জমিগুলো কাকে দেওয়া হবে সেটা ঠিক করে নিয়েছে তো তৃণমূল?
একটা অজুহাত দেওয়া হবে জানি যে জনগণের স্বার্থে ডিপোর…
রাজ্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশনের
ট্রামকে তুলে দেওয়ার এই গুপ্ত সরকারি প্রয়াসের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন অনেকে। তাঁদের অভিযোগ, একের পর এক ট্রাম কোম্পানির জমি নয় বিক্রি হচ্ছে, না হলে বিভিন্ন হাব তৈরি করতে অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। কোথায় ব্রিজের ক্ষতি হওয়ার দোহাই দিয়ে উপড়ে ফেলা হচ্ছে ট্রামের ট্র্যাক। কখনও আবার অজুহাত দেওয়া হচ্ছে এই বলে যে, ট্রাম যানজটের সৃষ্টি করে বলে বন্ধ করা হয়েছে এর পরিষেবা। ক্ষোভ দেখা গিয়েছে ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশনের থেকেও। ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সাগ্নিক গুপ্ত বলেন, ‘‘ট্রাম বন্ধ হয়ে যেতে পারে খবরটা ছড়িয়ে পড়ার পরেই সাধারণ মানুষ এমনকি যাঁরা কলকাতায় (Kolkata) থাকেন না, তাঁরাও অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং তাঁরা তাঁদের ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। সবাই কলকাতা পুলিশ এবং কলকাতা কর্পোরেশনকেই দায়ী করছেন। যেমন, দুর্গাপুজো বা হাওড়া ব্রিজ- শহর কলকাতার একটা সিগনেচার, তেমনই ট্রামও (Kolkata Tram) কলকাতার সিগনেচার। আজ বিশ্বের সাড়ে চারশোটা শহরে রমরম করে ট্রাম চলছে। তারা তো অনেক উন্নত দেশ৷ তাহলে নিশ্চই পরিবহণ মাধ্যম হিসেবে ট্রামের উপকারিতা রয়েছে বলেই তারা চালাচ্ছে। অথচ কলকাতায় ট্রাম (Kolkata Tram) যা একটি পরিবেশ বান্ধব যান এবং এত কম খরচে শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যাত্রীদের পৌঁছে (Kolkata) দিচ্ছে, এর উপকারিতাগুলি কেন চোখে পড়ছে না রাজ্য পরিবহণ দফতরের?’’
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours