মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: রাত পোহালেই শুরু হবে দেশের ১৮তম লোকসভা নির্বাচন (Lok Sabha Election 2024)। আগামী ১৬ জুন শেষ হচ্ছে চলতি লোকসভার মেয়াদ। তার আগেই ৪ জুন ফল ঘোষণা হবে এবারের নির্বাচনের। ২০১৯ সালে গত লোকসভা নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসেছিল এনডিএ (NDA)। প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছিলেন নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi)। তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতা দখলে আত্মবিশ্বাসী বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও তাঁর থার্ড টার্ম নিয়ে আশাবাদী।
ভোটের সময়কাল
দেশে সাধারণ নির্বাচন (Lok Sabha Election 2024) শুরু হচ্ছে ১৯ এপ্রিল থেকে। ৭ ধাপের এই নির্বাচন শেষ হবে ১ জুনে। ভারতে শাসনভার কাদের হাতে থাকবে– পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভা নির্বাচনে জয়-পরাজয়ই তা নির্ধারণ করবে। বিপুল সংখ্যক ভোটার এবারের নির্বাচনে ভোট দেবেন। ফলে এই নির্বাচন হতে চলেছে বিশ্বে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় নির্বাচন। লোকসভায় মোট ৫৪৩ জন নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গড়তে কোনও দল বা জোটকে কমপক্ষে ২৭২ টি আসন পেতে হবে। ১৩১ টি আসন আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর জন্য সংরক্ষিত। এই গোষ্ঠীগুলোকে সরকার পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠী হিসাবে চিহ্নিত করেছে।
বিজেপির বিরুদ্ধে কারা
এনডিএ-কে (NDA) ক্ষমতাচ্যুত করতে বিরোধী দল ঐক্যবদ্ধভাবে তৈরি করেছে ইন্ডিয়া জোট (INDIA Alliance)। যেখানে রয়েছে কংগ্রেস (Congress), তৃণমূল কংগ্রেস (TMC), ডিএমকে (DMK), বামফ্রন্ট, সমাজবাদী পার্টি, আম আদমি পার্টি (AAP) সহ দেশের ২৪টি বিরোধী রাজনৈতিক দল। এই জোটের চেয়ারপার্সন মল্লিকার্জুন খাড়গে। BJP-কে ক্ষমতাচ্যুত করার টার্গেট নিয়ে লড়াইয়ে নেমেছে ইন্ডিয়া জোট। সাম্প্রতিক জনমত জরিপগুলো বলছে, মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও এর মিত্ররা তৃতীয়বারের মতো নির্বাচনে জয়ী হবে। লোকসভার সবচেয়ে বড় দলের নেতা বা জোটের নেতা সাধারণত প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হন। প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রিসভা গঠন করেন, যারা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকেন। ২০১৯ সালের নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) একাই ৩০৩ টি আসন পেয়েছিল। আর বিজেপি’র জোট ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটি অ্যালায়েন্স পেয়েছিল ৩৫২ টি আসন। কংগ্রেস দল মাত্র ৫২ টি আসন জিততে পেরেছিল।
বিজেপি সরকারের সাফল্য
২০১৪ সালের নির্বাচন (Lok Sabha Election 2024) ভারতের রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে পাল্টে দিয়েছে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় এসে দেশের ওপর কংগ্রেসের দখল ভেঙে দিয়েছেন। বিশ্বে ভারত এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে। ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি এবং আমেরিকার সঙ্গে ভাল সম্পর্কের কারণে বিশ্বে ভারতের অবস্থান একটা শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে গিয়েছে। আমেরিকা চায় চিনের বিরুদ্ধে ভারতকে তাদের মিত্র করে রাখতে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতের ৮০ কোটি গরিবের জন্য একাধিক উদার কল্যাণমূলক কর্মসূচি চালু করেছেন। এর মধ্যে বিনা মূল্যে শস্য সরবরাহ এবং কম আয়ের পরিবারের নারীদের মাসে ১ হাজার ২৫০ টাকা ভাতা দেওয়ার মতো বিষয় রয়েছে।
কোন কোন তারিখে ভোট?
ভারতজুড়ে বিভিন্ন স্থানে ৭ টি তারিখে ভোট গ্রহণ চলবে। প্রথম দফার ভোট হবে ১৯ এপ্রিল। এরপর ২৬ এপ্রিল, ৭ মে, ১৩ মে, ২০ মে, ২৫ মে’র ভোটের পর ১ জুন সর্বশেষ দফার ভোট হবে। ফল ঘোষণা হবে ৪ জুন। লোকসভা আসন কম এমন কয়েকটি রাজ্যে মাত্র একদিনই ভোট হবে। কিন্তু, যেসব রাজ্যে আসন বেশি সেখানে কয়েক দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ভারতের জনসংখ্যা। এর সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনের সময়ও দীর্ঘ হয়েছে। যেমন: ১৯৮০'র দশকে ভোটের পুরো সময়টা ছিল মাত্র চারদিন, ২০১৯ সালে তা দাঁড়ায় ৩৯ দিনে, আর ২০২৪ সালে এসে ভোট হচ্ছে ৪৪ দিনব্যাপী। মোট ৫৪৩টি লোকসভা আসনে নির্বাচনের পাশাপাশি বিধানসভা নির্বাচন হবে চার রাজ্যে। একইসঙ্গে বিধানসভা উপনির্বাচন হবে ১৩টি রাজ্যে।
আরও পড়ুন: অন্ধকার গর্ভগৃহে রামলালার ললাটে তিলক আঁকল সূর্যরশ্মি, বিজ্ঞানের আশ্চর্য প্রয়োগ
কেন এত দীর্ঘ ভোট?
একাধিক দফায় ভোট গ্রহণের মূল কারণ হচ্ছে, নির্বাচনকে (Lok Sabha Election 2024) সামনে রেখে বিপুল সংখ্যক কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করতে হয়। নির্বাচনী হিংসা প্রতিরোধ থেকে শুরু করে ভোট জালিয়াতি ঠেকানো নির্বাচনে একটি বড় কাজ। ভোটকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তাকর্মীদের পর্যাপ্ত উপস্থিতি নিশ্চিত করতেই ভোটগ্রহণ ধাপে ধাপে করা হয়। ভোটদানের জন্য লাখ লাখ ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে। ভোটাররা এই যন্ত্র ব্যবহার করে প্রার্থীদের মধ্যে একজনকে বেছে নিতে পারবেন কিংবা উল্লিখিত প্রার্থীদের ‘কেউ না’ বিকল্পটি বেছে নিতে পারবেন।
কারা ভোট দেবেন?
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারতের জনসংখ্যা ১৪০ কোটির বেশি। এর মধ্যে ৯৬ কোটি ৯০ লাখ ভোটার এবারের নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন, যা বিশ্বের জনসংখ্যার হিসাবে ৮ জনে ১ জন। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশের বেশি ভোটার পাঁচ বছরের জন্য পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ৫৪৩ জন সদস্যকে নির্বাচিত করবেন। ভোটারদেরকে অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক হতে হবে। তাদের বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি হতে হবে। ভোটার তালিকায় নাম থাকতে হবে এবং বৈধ ভোটার পরিচয়পত্র থাকতে হবে। বিদেশে বাস করা ১ কোটি ৩৪ লাখ ভারতীয়ও ভোট দিতে পারবে। তবে ভোট দেওয়ার জন্য তাদেরকে নিবন্ধন করতে হবে এবং ভারতে ফিরে আসতে হবে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours