তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
রাজ্যে একাধিক শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। বিশেষত মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে পর পর সদ্যোজাত শিশুমৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় গোটা রাজ্য। তার জেরেই একাধিক প্রশ্ন উঠছে। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ খোদ জানিয়েছেন, জেলায় বাড়ছে নাবালিকা মায়ের সংখ্যা। তার জেরেই শিশুমৃত্যু। আবার স্বাস্থ্য দফতরের একাংশ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জানিয়েছেন, প্রয়োজনের তুলনায় কম ওজনের শিশুর জন্ম হচ্ছে (Malnutrition)। আর তার জেরেই নবজাতকের দেহে নানান জটিলতা দেখা দিচ্ছে। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। আর এর পরেই রাজ্য জুড়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
কোন তিন প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে? (Malnutrition)
শিশুমৃত্যুর ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে। সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, নাবালিকা মায়ের সংখ্যা বাড়ছে কেন? আগে একাধিকবার কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, নাবালিকা মায়ের নিরিখে দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু রাজ্যের যুক্তি, নাবালিকা বিয়ে কমছে। কন্যাশ্রী রুখে দিয়েছে নাবালিকা বিয়ের সমস্যা। কিন্তু মুর্শিদাবাদে পর পর শিশু মৃত্যুর ঘটনার পরে খোদ কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, জেলা জুড়ে বাড়ছে নাবালিকা মায়ের সংখ্যা। তাই শিশুমৃত্যু বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট মহল জানাচ্ছেন, এই সমস্যা শুধু মুর্শিদাবাদ জেলার নয়। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, মালদা সহ একাধিক জেলায় নাবালিকা মায়ের সংখ্যা বাড়ছে। তাহলে প্রশ্ন, কন্যাশ্রী কি আদৌও কার্যকর হয়েছে?
স্বাস্থ্য দফতরের একাংশ জানাচ্ছেন, প্রয়োজনের তুলনায় কম ওজন (Malnutrition) নিয়ে নবজাতকের সংখ্যা রাজ্যে বাড়ছে। তাই শিশুমৃত্যুর ঘটনাও বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, তাহলে কি রাজ্য সরকার আশাকর্মীদের ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারছে না?
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মহল জানাচ্ছেন, গর্ভবতী মহিলাদের জন্য কেন্দ্রের একাধিক প্রকল্প রয়েছে। গর্ভাবস্থায় মা যাতে পুষ্টিকর খাবার খেতে পারে, তা সুনিশ্চিত করতেও একাধিক প্রকল্প রয়েছে। গর্ভবতীর বাড়ি গিয়ে আয়রন ট্যাবলেট ও ফলিক অ্যাসিড পৌঁছে দেওয়ার কথা প্রশাসনের। আর এই কাজগুলোর দায়িত্বে থাকেন আশাকর্মীরা। তাহলে মায়েরা ঠিকমতো পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছেন না কেন? কেন প্রয়োজনের তুলনায় কম ওজনের শিশুর জন্ম হচ্ছে (Malnutrition)? তাহলে প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাব কি এর কারণ?
আবার প্রশাসনের অন্দরেই জানা যাচ্ছে, অসুস্থ নবজাতকদের অনেক ক্ষেত্রেই এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতালে রেফার করা হচ্ছে। দূরত্বের ধকল সহ্য করতে পারছে না একরত্তি। ফলে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে বাধ্য হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, কবে রেফার রোগ থেকে মুক্তি পাবে সরকারি হাসপাতাল? জেলায় জেলায় মেডিক্যাল কলেজ খোলার পরেও কেন অসুস্থ শিশুকে নিয়ে মাইলের পর মাইল পাড়ি দিতে হচ্ছে?
কী বলছেন প্রশাসনের কর্তারা? (Malnutrition)
নাবালিকা মায়ের প্রসঙ্গে প্রশাসনের কর্তারা জানাচ্ছেন, এই সমস্যা সামাজিক, রাতারাতি মিটবে না। তাই এখনও নাবালিকা মায়েরা রয়েছেন। তবে, কন্যাশ্রী এই সমস্যা মোকাবিলা করতে সব চেয়ে বড় অস্ত্র।
আশাকর্মীরা যথেষ্ট সক্রিয় বলে সাফ জানাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। তাঁরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি হোক কিংবা গর্ভবতীদের বাড়িতে আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড পৌঁছে দেওয়ার কাজ, যথেষ্ট সক্রিয় ভাবেই আশাকর্মীরা তা করছেন। সেই কাজে নজরদারিও রয়েছে। কিন্ত তার পরেও কেন বাড়ছে শিশুমৃত্যু, সেই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি (Malnutrition)।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours