Manipur Violence: ড্রাগের আন্তর্জাতিক চোরাচালানে কোপ পড়তেই শুরু মণিপুরকে অশান্ত করার ‘খেলা’!

মণিপুরে ব্যাপক হিংসার পিছনে কি চিনের মদতপুষ্ট ড্রাগ মাফিয়ারা?
Manipur_Violence
Manipur_Violence

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: অশান্তির আগুনে জ্বলছে মণিপুর (Manipur Violence)। বলা হচ্ছে, এটা নাকি জাতি সংঘর্ষেরই ভয়ঙ্কর পরিণতি। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, সত্যিই কি তাই? নাকি এর পিছনে রয়েছে আরও বড় ষড়যন্ত্র, এবং বিজেপি সরকারকে ফেলে দিয়ে নিজেদের আধিপত্য কায়েম করার নোংরা রাজনীতি? যত দিন যাচ্ছে, এটা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে, ড্রাগ বা মাদকের আন্তর্জাতিক চোরাকারবার, বেআইনি অস্ত্র ব্যবসা এবং সর্বোপরি বিদেশি শক্তি, বিশেষত চিনের অঙ্গুলি হেলনেই এখানকার পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে।

হাইকোর্টের রায় দেখেই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে (Manipur Violence) বিক্ষোভকারীরা

মণিপুরের ভৌগোলিক যা অবস্থান, তাতে ৯০ শতাংশ হল পাহাড়ি এলাকা, ঘন জঙ্গল এবং চিন, মায়ানমারের সীমান্ত। সবদিক থেকে আফিম চাষের আদর্শ জায়গা। তাই একদিকে আফিমের চাষ যেমন রমরম করে হয়ে আসছে, তেমনি সীমান্ত দিয়ে এর চোরাচালানের কারবারও ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। কোটি কোটি টাকার কারবার চলছে দিনের পর দিন। ড্রাগ মাফিয়াদের কাছে এটা হল গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল। আর ঠিক এই জায়গাতেই আঘাত হানতে উঠেপড়ে লেগেছে বিজেপি শাসিত সেখানকার সরকার। নিজেদের বেআইনি সাম্রাজ্যে কোপ পড়তেই গোটা মণিপুরকে অশান্ত করার নোংরা খেলায় (Manipur Violence) নেমে পড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলি। এই রকম একটা অবস্থায় আগুনে ঘি পড়েছে সেখানকার হাইকোর্টের সাম্প্রতিক একটি রায়ে।

কী বলা হয়েছে হাইকোর্টের রায়ে?

এই রাজ্যে বাস করেন প্রায় ৩৪ টি জনজাতি সমাজের মানুষ। এঁদের মধ্যে নাগা, কুকি, মিজো, মেইতি উল্লেখযোগ্য। কিন্তু সবথেকে বেশি হলেন মেইতি গোষ্ঠীর, যাঁরা মূলত সমতল অঞ্চলে বসবাস করেন। এই মেইতিরা মণিপুরের মোট যা এলাকা, তার ১০ শতাংশ অঞ্চলে বসবাস করেন। মণিপুরে বহুদিন ধরেই তাঁরা তফশিলি উপজাতির (ST) স্বীকৃতির দাবি করে আসছিলেন। আর এ ব্যাপারে হাইকোর্টের নির্দেশ আসতেই সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করে মেইতি-বিরোধী আদিবাসীরা। গত এপ্রিল মাসে মণিপুর হাইকোর্ট মেইতিদের তফশিলি উপজাতির মর্যাদা দেওয়ার জন্য সেখানকার রাজ্য সরকারকে সদর্থক ভাবনাচিন্তা করার নির্দেশ দেয়। একদিকে কালো কারবারে সরকারের থাবা, অন্যদিকে নিজেদের বসবাসের এলাকাতেও আধিপত্য খর্ব হওয়ার আতঙ্ক, এই দুটি কারণে তারা হইহই করে মাঠে নেমে পড়ে। ৩ মে অল ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন অফ মণিপুর নামে সংগঠন আন্দোলনের ডাক দেয়। তাতে নেতৃত্ব দেন কুকি এবং নাগা জনগোষ্ঠীর নেতারা। এই সংগঠনের পক্ষ থেকে মণিপুরের চুরাচাঁদপুরের কাছে তোরবুং এলাকায় প্রতিবাদী মিছিলের আয়োজন করা হয়। ধীরে ধীরে আগ্নিগর্ভ হতে শুরু করে মণিপুর। একে একে তোরবুং, গোবিন্দপুর, সাবাল মানিং, মামাং লেইকাই, কাংভাই, ফুবাকচাওতে বাড়িঘরে আগুন দেয় দুষ্কৃতীরা। এরপর শুরু হয় গোষ্ঠী সংঘর্ষ। মণিপুরে যে ব্যাপক হিংসা (Manipur Violence) হয়েছে, তাতে এখনও পর্যন্ত বহু মানুষের প্রাণ গেছে। ৪৫ হাজারের বেশি মানুষ প্রত্যক্ষ ভাবে হিংসার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। মিজোরামের একটি রিপোর্টে বলা হয়, মণিপুর থেকে মোট ৬৫০০ মানুষ নিজের বাড়িঘর ছেড়ে মিজোরামে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।

সংরক্ষণ কেন চান মেইতিরা (Manipur) আর কেন ক্ষুব্ধ (Manipur Violence) কুকিরা?

মেইতিদের কাছে একটি স্পষ্ট তত্ত্ব হল, জনসংখ্যার তত্ত্ব। ১৯৫১ সালে মণিপুরে মেইতিদের জনসংখ্যার অনুপাত ছিল ৫৯ শতাংশ। আর ২০১১ সালে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪ শতাংশে। ফলে মণিপুরের জনজাতি হিসাবে কুকিরা তাঁদের জল-জঙ্গল-জমি দখল করছে বলেই মেইতিদের সংখ্যা ক্রমশ কমছে, এমনটাই দাবি তাঁদের। তাই মেইতিরা তাঁদের সংস্কৃতির সংরক্ষণ এবং জনজাতির পদমর্যাদা চান। অন্যদিকে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং এবং বিজেপি সরকারকে মেইতি সমাজের প্রত্যক্ষ সমর্থক বলে অভিযোগ করছেন কুকিরা। এমনকী কুকি সমাজের এক রাজনৈতিক নেতা বলেন, মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী কুকি বিরোধী! তাই আমাদের আন্দোলন চলবে। কারণ তাঁদের আশঙ্কা, শুধু জল-জঙ্গল-জমি নয়, সংরক্ষণের কারণে পুলিশ-প্রশাসনে তাঁরা যে সব সুবিধা ভোগ করে আসছেন, তাতেও ভাগ বসাবে মেইতিরা। মেইতিরা ধীরে ধীরে আরও ক্ষমতাবান হয়ে উঠবে। পাশাপাশি মেইতি জনগোষ্ঠীর মানুষ পাল্টা কুকিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, সমস্ত হিংসার পিছনে কুকিদের অস্ত্র কারবার, চোরাকারবার, মাদক পাচার, মাফিয়া, দুষ্কৃতী এবং রাজনৈতিক নেতাদের প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে। ফলে দুই গোষ্ঠীর দাবি-পাল্টা দাবি ঘিরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত আগে থেকেই।

মাদক চক্র কতটা প্রভাবশালী (Manipur Violence)?

মণিপুরের এই অশান্তির (Manipur Violence) পিছনে সেখানকার মাদক চোরাচালান, অনুপ্রবেশ, আন্তর্জাতিক চোরাকারবারের প্রত্যক্ষ প্রভাব আছে বলে বিশেষজ্ঞ মহলও মনে করছে। মণিপুর (Manipur) সরকারের সূত্র অনুসারে, ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ১৮৬৬৪ একরের বেশি আফিম চাষ ধ্বংস করেছে বিজেপি শাসিত সরকারের পুলিশ। এর বেশির ভাগটাই করা হত পার্বত্য জেলায়। আবার ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ১৮৮৯ একর আফিম চাষ ধ্বংস করেছিল তৎকালীন কংগ্রেস সরকার। মণিপুরের এই মাদক চক্র শুধু ভারতেই নয়, মায়ানমার হয়ে লাওস, থাইল্যান্ড, দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে আন্তর্জাতিক মাদক চক্র হিসাবে কাজ করছে। তাই মণিপুরে মাদক চাষ বন্ধ হলে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে চিন সহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মাদক চোরাচালানে। আর সেই কারণেই সাময়িক ভাবে হিংসার বাতাবরণ তৈরি করা হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। মণিপুরের আগের সরকারগুলি, বিশেষ করে কংগ্রেস সরকারের আমলে আইন হলেও, নারকোটিক ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবস্ট্যান্সেস অ্যাক্ট ১৯৮৫, মাদক চোরাচালান রোধে তেমন কার্যকর হয়নি। ফলে আন্তর্জাতিক মাদক পাচারকারী এবং কংগ্রেসের নেতাদের আর্থিক লাভে ভাটা পড়েনি। বর্তমানে বিজেপি সরকার এই অবৈধ মাদক চাষ এবং চোরাচালান রোধে কঠোর মনোভাব নিতেই গোষ্ঠী সংঘর্ষের আড়ালে সক্রিয় হয়ে পরিস্থিতিকে ভয়ঙ্কর করে তোলা হচ্ছে। মণিপুর ট্রাইবাল ফোরাম দিল্লিও (MTFD) মণিপুরের হিংসা নিয়ে একটি প্রতিবেদনে বলেছে, আন্তর্জাতিক মাদক মাফিয়ারা অতি সক্রিয় হয়েছে এখানে। 

উল্লেখ্য মণিপুরে সাসপেনশন অফ অপারেশন এগ্রিমেন্ট (SoO) স্বাক্ষরিত হওয়ার ফলে কুকিদের সশস্ত্র জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে মণিপুর এবং ভারতের যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই কুকি সশস্ত্র জঙ্গি গোষ্ঠীরাই মেইতিদের মন্দির, ধর্মস্থলে হিংসাত্মক আক্রমণ করেছিল। অসম রাইফেল এই ঘটনায় বিশেষ অপারেশনও করেছিল। অভিযোগ আরও ওঠে যে এই কুকির সশস্ত্র জঙ্গি গোষ্ঠীরা বাংলাদেশ, মায়ানমার এবং মিজোরাম থেকে অবৈধ আফিম, গাঁজা, কোকেন, হেরোইন, ইয়াবা মাদক চোরাচালানের কাজ করে থাকে। এছাড়াও অবৈধ অনুপ্রবেশকারী পাচারের মোটা অর্থ কুকিদের এই জঙ্গি সংগঠনকে সতেজ রাখে। সেই রসদে ভাটা পড়তেই বিক্ষোভ, হিংসাত্মক আন্দোলন।

আসলে বিজেপি সরকারকে সরিয়ে পাহাড় এবং মাদকের কারবারের রাশ পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনাই যা আন্দোলনকারীদের মূল লক্ষ্য, তা এখন অনেকের কাছেই পরিষ্কার। চিনের হাত মাথায় থাকায় এই কাজে বিক্ষোভকারীরা দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তথ্য বলছে, চোরাকারবারের কিং পিন যারা, তারা আসলে মায়ানমার থেকে অনুপ্রবেশকারী। মণিপুর এবং মিজোরামে কাজ করা চায়না ন্যাশনাল আর্মি (সি এন এ) এবং জোমি রিভলিউশনারি আর্মির (জেড আর এ) সঙ্গে এদের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রয়েছে। এদের কাছ থেকে অস্ত্র এবং অর্থ পেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কুকি ন্যাশনাল আর্মি (কে এন এ)।  

প্রাক্তন সেনা প্রধানের বক্তব্য (Manipur Violence)

অপর দিকে দেশের প্রাক্তন সেনা প্রধান এমএম নরভানেও দিল্লিতে ইন্ডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেছেন যে মণিপুরের হিংসার (Manipur Violence) পিছনে বহিরাগত চিনের বিশেষ শক্তি মদত দিচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিবাদী সংগঠনকে পরিচালনা করছে বাইরের শক্তি। তিনি আরও বলেন, প্রতিবেশী দেশের অস্থিরতা যেমন একটা বড় সমস্যা, তেমনি আমাদের দেশের অভ্যন্তরে কোনও সীমান্তবর্তী এলাকার সমস্যাও আমাদের জন্য আরও খারাপ। দেশের জাতীয় সুরক্ষা নীতিকে সুরক্ষিত রাখা একান্ত প্রয়োজন। বাইরের শত্রুর সঙ্গে সেনা লড়াই করছে, কিন্তু ভিতরের শত্রুর সঙ্গে নাগরিকদের লড়াই করতে হবে। অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা ভীষণ প্রয়োজন।

  

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles