মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মেডিক্যাল কলেজগুলিতে দুর্নীতির (Medical Scam) অন্যতম মাথা বিরূপাক্ষ বিশ্বাস ও অভীক দে-র বিরুদ্ধে জমা পড়ল তদন্ত কমিটির রিপোর্ট। থ্রেট সিন্ডিকেটের অন্যতম মুখ হিসেবে এই দুই চিকিৎসক অভীক দে, বিরূপাক্ষ বিশ্বাসের নাম উঠে আসে। তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে কমিটি গঠন করেছিল স্বাস্থ্য ভবন (Health Bhavan)। সেই রিপোর্টই এবার এল প্রকাশ্যে। রিপোর্টে বিস্ফোরক অভিযোগ সামনে এসেছে।
বিরূপাক্ষর বিরুদ্ধে কী উঠে এল তদন্তে? (Medical Scam)
বিরূপাক্ষ বিশ্বাস বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ (Medical Scam) হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাক্তার। কেন তিনি ৯ অগাস্ট আরজি করে গিয়েছিলেন, কী করছিলেন ঘটনাস্থলে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এরপর বর্ধমান থেকে সরিয়ে কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে তাঁকে পাঠিয়ে দেয় স্বাস্থ্যভবন। বদলির নোটিশ জারি হতেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন সেখানকার জুনিয়র ডাক্তাররা। সাধারণ মানুষও বিক্ষোভ দেখান। এরপরই স্বাস্থ্যভবন সিনিয়র রেসিডেন্ট পদ থেকে অব্যাহতি দেয় বিরূপাক্ষকে। তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া তদন্ত কমিটির রিপোর্টে একাধিক অভিযোগে সিলমোহর দিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির নামে মর্শিদাবাদের ব্যবসায়ী দীন মহম্মদের কাছ থেকে তিন লক্ষ টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সাগর দত্ত, তাম্রলিপ্ত মেডিক্যাল কলেজ, রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ ও ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। পুলিশের খাতায় বিরূপাক্ষের বিরুদ্ধে চারটি এফআইআর দায়ের হয়েছে।
রাতভর পার্টি না করলে মেয়েদের ফেল করে দেওয়ার হুমকি!
আরজি কর হাসপাতালে (Medical Scam) তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর থেকে বারবার উঠে এসেছে চিকিৎসক অভীক দে-র নাম। তিনি এসএসকেএম হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের পিজিটি। অভিযোগ ওঠে, তিনিই মেডিক্যাল কলেজগুলিতে থ্রেট কালচারের অন্যতম মাথা। তাঁকে সাসপেন্ডও করে স্বাস্থ্যভবন। গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। সেই তদন্ত কমিটিই চলতি মাসে ১৫ পাতার রিপোর্ট জমা দিয়েছে স্বাস্থ্যভবনে। জানা গিয়েছে, মেডিক্যালের ছাত্রীরা রাতভর পার্টি না-করলেই পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেকের নাম করে মেডিক্যালের নবাগত ছাত্রদের থেকে তোলাবাজি চলত। আরজি করের নির্যাতিতার ধর্ষণ ও খুনে সঞ্জয় রায়কেই একমাত্র দোষী হিসেবে তুলে ধরতে ছাত্রদের ব্রেনওয়াশ করা হয়। এসএসকেএম-এর পিজিটি ছাত্র অভীক দে-র বিরুদ্ধে এমনই বিস্ফোরক সব অভিযোগ এনে স্বাস্থ্যভবনে রিপোর্ট পেশ করল তদন্ত কমিটি।
পাশাপাশি, অভীক দে যে সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তাও উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। গত ৯ অগাস্ট নির্যাতিতার দেহ উদ্ধারের দিন আরজি করের ক্রাইম সিনে থাকার কথা অস্বীকার করেননি অভীক দে। ক্রাইম সিনে 'লাল জামা' পরিহিত অভীকের উপস্থিতি ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায়। স্বাস্থ্য দফতরের তদন্ত কমিটির রিপোর্টে সে কথা উল্লেখ করা আছে। অভীক স্বীকার করে বলেছেন, 'মেডিক্যাল কাউন্সিলের দলের সঙ্গে আরজি কর গিয়েছিলাম।' তদন্ত কমিটির রিপোর্টের দুনম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে, অভীক দে যে সার্জারি বিভাগে এমএস করছিলেন, তা একদমই নিয়ম বহির্ভূত। কারণ তিনি থিসিস পেপার জমাই করেননি। এমনকী নিজের আইকার্ডও গ্রহণ করেননি। ৮ অগাস্ট থেকে এসএসকেএম হাসপাতালেও তাঁকে দেখা যায়নি। তদন্ত কমিটিতেই এই সব তথ্য উঠে এসেছে।
কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ
কলেজের দার্জিলিং ক্যাম্পাসে (Medical Scam) অভীক দে-র বেআইনি উপস্থিতির কথা উঠে এসেছে কমিটির রিপোর্টে। সেই ক্যাম্পাসে মাঝেমধ্যেই নবাগত পড়ুয়াদের কাছ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করে টাকা তোলারও অভিযোগ রয়েছে অভীকের বিরুদ্ধে। এমনকী, মেডিক্যাল কলেজের সরকারি জিনিস ব্যবহার ও সরকারি হলে কারও অনুমতি না-নিয়ে নিজের জন্মদিনও পালন করতেন তিনি। এই সমস্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংগৃহীত প্রমাণ এবং সে বিষয়ে অভীক দে-র বয়ানও রিপোর্টের সঙ্গে স্বাস্থ্যভবনে জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। অভীকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্যভবনের কাছে সুপারিশ করেছে কমিটি।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours