মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বঙ্গে এসে গিয়েছে বর্ষা। বর্ষা এসেছে গোটা দেশেও। সঙ্গে এসেছে বর্ষার বিভিন্ন রোগ্য-ব্যাধি (Monsoon Diseases)। গ্রীষ্মের খরতাপে পুড়েছে দেশ। তার পর স্বস্তির বৃষ্টি এনেছে বর্ষা। তবে স্বস্তির পাশাপাশি সঙ্গে নিয়ে এসেছে অস্বস্তিও। কারণ রোগ-বালাইয়ের (Infections And Diseases) জ্বালায় অস্থির দেশবাসী। বর্ষার মরশুমের এই রোগগুলির মধ্যে কয়েকটি আবার প্রাণঘাতীও। ঠিক সময় চিকিৎসা শুরু না হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে রোগী কিংবা রোগিণীর।
বর্ষার রোগবালাই (Monsoon Diseases)
এই রোগগুলির কয়েকটির বাহক মশা। বর্ষায় বৃষ্টির জল জমে যত্রতত্র। সেই জমা জলে জন্মায় মশা। পরবর্তীকালে সে-ই হয়ে দাঁড়ায় প্রাণঘাতী নানা রোগের বাহক। মশা-বাহিত রোগের পাশাপাশি বর্ষাকালে উপদ্রব বাড়ে ভাইরাসেরও। তাই এই সময় ভাইরাসঘটিত রোগবালাইয়েও ভোগেন মানুষ। ছত্রাকের সংক্রমণ তো ফি বর্ষার রুটিনের মধ্যেই পড়ে। তাই বর্ষার সময় একটু বেশিই সাবধানতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। একমাত্র সাবধানতা অবলম্বন করলেই জমিয়ে উপভোগ করা যাবে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি-ঋতুর সৌন্দর্য। এবার জেনে নেওয়া যাক, বর্ষায় কী কী রোগ হতে পারে।
পেটের রোগ
ফি বর্ষায় ভারতে যে রোগটি খুবই কমন (Monsoon Diseases), সেটি হল পেটের রোগ। ডায়েরিয়া, তলপেটে খিঁচুনি, বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে, বমিও হতে পারে। জলের মাধ্যমে ছড়ায় ডায়েরিয়া। সামান্য জ্বরও হতে পারে। হতে পারে গাঁটে ব্যথাও। দ্রুত চিকিৎসা শুরু না করলে হতে পারে শরীরের ভয়ঙ্কর ক্ষতি। ডিহাইড্রেশন, ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স মায় কিডনি ফেলিওরও হতে পারে। ডায়েরিয়ার কোনও লক্ষণ দেখা গেলেই দ্রুত ওআরএস খাওয়াতে হবে রোগীকে। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে শুরু করতে হবে যথাযথ চিকিৎসাও।
ডেঙ্গি
বর্ষার আর একটি ভয়ঙ্কর রোগ হল ডেঙ্গি। মশা-বাহিত এই রোগে প্রতি বছর মৃত্যু হয় অনেকের। ন্যাশনাল ভেক্টর বর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের রিপোর্ট বলছে, ২০২১ সালে ভারতে নথিভুক্ত হয়েছিল ডেঙ্গিতে আক্রান্ত এক লাখ রোগীর নাম। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত ব্যক্তি ভুগবেন প্রচণ্ড জ্বরে। মাথাব্যথায় কাতর হবেন রোগী। যন্ত্রণা হতে পারে চোখের পিছনেও। শরীরের বিভিন্ন অস্থিসন্ধিতে যন্ত্রণাও হতে পারে। ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে ত্বকে। ডেঙ্গি থেকেই হতে পারে ডেঙ্গি হেমোরাজিক ফিভার। এক্ষেত্রে রোগীর শরীর থেকে রক্তপাত হতে থাকবে। বিকল হতে পারে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। মৃত্যুও হতে পারে রোগীর। যেসব শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের ক্ষেত্রে বিপদের সম্ভাবনা অনেক বেশি।
আর পড়ুন: ইলিশ কেনা থেকে শিষ্যদের ব্যাকরণ পড়ানো, প্রয়াণের দিনে কী কী করেছিলেন স্বামীজি?
ম্যালেরিয়া
ডেঙ্গির পাশাপাশি বর্ষার আর একটি উপদ্রব হল মশা-বাহিত রোগ ম্যালেরিয়া। জমা জলে দ্রুত ((Monsoon Diseases)) বংশবৃদ্ধি করে অ্যানোফিলিস মশা। এই মশাই ম্যালেরিয়ার বাহক। ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের তাপমাত্রার পারদ বাড়তে থাকে দ্রুত। রোগী ভুগতে থাকেন প্রচণ্ড জ্বরে। ঘনঘন জ্বর আসবে। রোগীর খুব ঘাম হবে। মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব এবং পেশিতেও ব্যথা হবে। হঠাৎ হঠাৎ জ্বর আসবে। ফ্লুয়ের মতো লক্ষণও দেখা দেয়। জ্বর আসে কাঁপুনি দিয়ে। ম্যালেরিয়ার দ্রুত চিকিৎসা শুরু না হলে অ্যানিমিয়া, শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হতে পারে। সেরিব্রাল ম্যালেরিয়া হলে রোগী কোমায় চলে যেতে পারেন, মৃত্যুও হতে পারে।
কলেরা
প্রতি বছর বর্ষায় কলেরা ভয়ঙ্কর আকার (Infections And Diseases) ধারণ করে ভারতে। জলবাহিত এই রোগে অনেকের মৃত্যুও হয়। জলের মতো পাতলা পায়খানা হতে পারে রোগীর। বমি করতে থাকেন। শরীর থেকে জল বেরিয়ে যেতে থাকবে। প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাবে। রোগীর চোখ গর্তে ঢুকে যেতে পারে। ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্সও দেখা দিতে পারে। অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং জল থেকে এই রোগ ছড়ায়। এক্ষেত্রেও রোগীকে দ্রুত ওআরএস খাওয়ানো প্রয়োজন। রোগের উপসর্গ দেখা দেওয়ার পরে পরেই রোগীকে নিয়ে যেতে হবে চিকিৎসকের কাছে।
টাইফয়েড
বর্ষায় ভারতের বিভিন্ন অংশে টাইফয়েডের উপদ্রবও দেখা (Monsoon Diseases) যায়। এক্ষেত্রেও রোগীর শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় অনেকখানি। মাথাব্যথা, তলপেটে যন্ত্রণা এবং দুর্বলতা গ্রাস করে রোগীকে। এক্ষেত্রে জ্বর বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে, রোগীর খিদে কমে যায়, কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা ডায়েরিয়াও দেখা যায়। বুকে গোলাপি ছোপ ছোপ দেখা যায়। টাইফয়েডে আক্রান্ত ব্যক্তির দ্রুত চিকিৎসা শুরু না হলে রোগীর জীবনহানি পর্যন্ত হতে পারে। রোগী আক্রান্ত হতে পারেন সেপ্টিসেমিয়ায়ও।
ফ্লু
বর্ষার আর একটি অতি পরিচিত রোগ হল ফ্লু। ঠান্ডা লাগা, নাক এঁটে যাওয়া, নাক দিয়ে জল গড়ানো এবং মাথাব্যথা এ রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। এ থেকেই রোগী আক্রান্ত হতে পারেন নিউমোনিয়ায়। শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যায়ও ভুগতে পারেন রোগী। জন-ঘন-পূর্ণ এলাকায় দ্রুত ছড়ায় ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাইরাস। এই রোগে সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হতে পারে বয়স্ক ব্যক্তি এবং শিশুদের।
লেপ্টোস্পাইরোসিস
বর্ষায় আর একটি রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এটি হল লেপ্টোস্পাইরোসিস। এই রোগ মূলত দেখা যায় বানভাসি এলাকায়। এক্ষেত্রেও ফ্লুয়ের মতো উপসর্গ দেখা দেবে, রোগী বমি করতে থাকবেন, চোখ হয়ে উঠবে জবাফুলের মতো টকটকে লাল। ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু না হলে রোগীর লিভার এবং কিডনি ড্যামেজ হতে পারে। মেনিনজাইটিস এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
ছত্রাক-ঘটিত রোগ
বর্ষায় ছত্রাক ঘটিত রোগের প্রাদুর্ভাব অতি পরিচিত একটি ঘটনা। দাদ-হাজা-চুলকুনির সমস্যা দেখা দেয়। নখকুনির সমস্যাও হয় এই সময়। এসব ক্ষেত্রে গা-হাত-পা চুলকোতে (Infections And Diseases) শুরু করবে, চামড়া কুঁচকে যেতে পারে, শরীরে ফোস্কার মতো দেখা দিতে পারে, ছাল উঠতে পারে। অবহেলা করলে চামড়ার স্থায়ী সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে (Monsoon Diseases)।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours