মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বছরের প্রথম থেকেই ডেঙ্গি (Dengue) রুখতে নানা কর্মসূচির কথা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু প্রত্যেক বছরই পশ্চিমবঙ্গের ডেঙ্গি পরিস্থিতি ওই ধরনের কর্মসূচির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বরং ঢক্কানিনাদ করে নানা কর্মসূচির যে আহ্বান কলকাতা পুরসভা ও রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর করেছিল, তা একেবারেই বাস্তবের মুখ দেখেনি, এমনই অভিযোগ করছে রাজ্য ও কেন্দ্রের বিভিন্ন দফতর। আর রাজ্যের ডেঙ্গি পরিস্থিতিই এই অভিযোগের বাস্তব রূপ!
কী অভিযোগ উঠেছে (Dengue)?
কলকাতা ও আশপাশের জেলা যেমন হাওড়া, হুগলি, উত্তর চব্বিশ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকায় মেট্রো রেল সম্প্রসারণের কাজ চলছে। যার জেরে বহু এলাকা ভাঙা হচ্ছে, ব্রিজ তৈরি হচ্ছে। নির্মীয়মাণ এলাকায় জল জমছে। রেলের তরফে বিভিন্ন জায়গা ঘিরে রাখা হয়েছে। সেখানেও জল জমার আশঙ্কা থাকছে। পাশপাশি মশার লার্ভাও দেখা যাচ্ছে। রেল মন্ত্রকের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট পুরসভাকে পরিষ্কারের জন্য একাধিকবার আবেদন করলেও তারা কর্ণপাত করেনি। এমনকী স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। তারপরেও কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। মশা নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ কিংবা অন্য কোনও সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।
রেল মন্ত্রকের পাশপাশি এমন অভিযোগ করছে রাজ্যের একাধিক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। যাদবপুর, কলকাতা সহ রাজ্যের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, বারবার কলকাতা পুরসভার কাছে আবেদন করলেও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। গড়িমসি ভাব রয়েছে। কলকাতার একাধিক সরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, সামান্য বৃষ্টি হলেও রাস্তায় জল জমে। বৃষ্টি কমলেও জল জমে থাকে। ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বারবার পুরসভার কাছে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।
বাদ নেই কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলো। এনআরএস, আরজিকর, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ সহ একাধিক মেডিক্যাল কলেজের হস্টেল ডেঙ্গির (Dengue) আঁতুরঘর। মশা মারার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বারবার পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতরের কাছে আবেদন করলেও কোনও সক্রিয়তা দেখা যায়নি বলেই অভিযোগ।
কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহল জানাচ্ছে, মশা নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করাই পুরসভার প্রধান দায়িত্ব। প্রয়োজনে পুরসভা সেই দফতরের থেকে খরচ নিয়ে নেবে। কিন্তু নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখা, জল জমা আটকানোর কাজ পুরসভার। এই দায় ঠেলার জেরে ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
রাজ্যে ডেঙ্গি (Dengue) পরিস্থিতি কেমন?
রাজ্যে ডেঙ্গির দাপট উর্ধ্বগামী। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে ইতিমধ্যেই ৩৮ হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রত্যেক সপ্তাহে প্রায় চার হাজারের কাছাকাছি মানুষ নতুন করে ডেঙ্গি আক্রান্ত হচ্ছেন। অক্টোবর মাসে পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হবে বলেই আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। যদিও সরকারি হিসাবে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছেন ৩ জন। কিন্তু বেসরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই পর্যন্ত ডেঙ্গি (Dengue) আক্রান্ত হয়ে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিত আরও ভয়াবহ হবে বলেও আশঙ্কা করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
কী বলছেন পুরকর্তা এবং স্বাস্থ্যকর্তারা?
অভিযোগ মানতে নারাজ পুরকর্তারা। কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বলেন, "আমরাই বিভিন্ন জায়গায় নজরদারি করছি। জমা জল আছে কিনা দেখছি। প্রয়োজনে কর্মী নিয়ে গিয়ে মশার লার্ভা মারা হচ্ছে। কিন্তু অভিযোগ পেয়েও পুরসভা কাজ করেনি, এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।"
স্বাস্থ্য কর্তারা জানাচ্ছেন, পুরসভার সঙ্গে সারা বছর যোগাযোগ রাখা হয়। নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখা কিংবা জল জমে থাকলে কোনও অসুবিধা হলে সেটা দেখার দায়িত্ব পুরসভার। তবে, ডেঙ্গি পরিস্থিতি (Dengue) নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য দফতর সব সময়ই সক্রিয়।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours