Ram Janmabhoomi Movement: অযোধ্যা রাম জন্মভূমি আন্দোলনের এই ‘অজ্ঞাত নায়ক’দের চেনেন?

Ayodhya: ‘‘মাতা, পিতা, বন্ধু, সখা সব হি রাম নাম’’! শ্রী রাম-এর নামেই জীবন কাটিয়েছিলেন যাঁরা...
Ayodhya_Ram_Temple
Ayodhya_Ram_Temple

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ২০২৪ সালের ২২ জানুয়ারি। অযোধ্যায় (Ayodhya) নব নির্মিত রামমন্দিরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়। কিন্তু এ লড়াই ছিল দীর্ঘদিনের। ১৯৪৯ সাল থেকে অযোধ্যায় রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ নিয়ে বির্তকের সূত্রপাত। সেই সময় থেকে মন্দির নির্মাণের দাবিতে শুরু হয়েছিল আন্দোলন। পরবর্তীকালে এই বিতর্ক গড়িয়েছিল আদালত পর্যন্ত। বিভিন্ন সময় এই আন্দোলনে (Ram Janmabhoomi Movement) নেতৃত্বের ব্যাটন হাতে তুলে নিয়েছিলেন বিজেপির প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী, উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রাক্তন সভাপতি অশোক সিংঘলরা। তবে শুধু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নয়, রামমন্দির আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন সাধু-সন্ত থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। যাঁরা, কোনও দিন পরিচিত ছিলেন না এবং আড়ালে থেকেই নিজেদের কাজ করে গিয়েছেন।

কেন আড়ালে (Ayodhya) 

শ্রী রাম জন্মভূমি আন্দোলনের (Ram Janmabhoomi Movement) ইতিহাসের বেশিরভাগ সময়, বিশেষ করে বিংশ শতাব্দীর ৮-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে বাম-কংগ্রেস মতাদর্শ বিশ্বাসীরা রাম জন্মভূমি আন্দোলনকে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)-এর রাজনীতির পদক্ষেপ হিসেবে উপহাস করেছিলেন। রাম মন্দির আন্দোলনকে দলিত বিরোধী, মুসলিম বিরোধী, উপজাতি বিরোধী হিসেবে দেখানো হয়েছিল। আন্দোলনের পুরো সময়জুড়ে, বাম-কংগ্রেস গোষ্ঠী যুক্তি দেখিয়ে চলেছিল যে, এটি কেবল কয়েকটি তথাকথিত ‘উচ্চ বর্ণের’ আন্দোলন এবং বৃহত্তর হিন্দু সমাজের এর সঙ্গে কোনও যোগ নেই।

বাস্তব অন্য

যে প্রচার বাম-কংগ্রেসরা করেছিল, তা আসলে সত্য থেকে অনেক দূরে। শ্রী রাম জন্মভূমি আন্দোলন (Ram Janmabhoomi Movement) ছিল জনগণের আন্দোলন। একটি আহত সভ্যতা ইতিহাসের একটি নির্দিষ্ট মোড়ে জাগ্রত হয়েছিল, এবং তার হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল। তাই ১৯৯০ সালে লালকৃষ্ণ আডবাণীর রাম রথযাত্রায় যোগ দিয়েছিলেন অগণিত মানুষ। 'মন্দির ওয়াহি বানায়েঙ্গে' স্লোগানে কেঁপে উঠেছিল ভারত। তাঁরা ছিলেন  ধর্মীয় পুরুষ, স্বেচ্ছাসেবক, নিবেদিত এবং গর্বিত হিন্দু। সেই দলে থাকা কয়েকজন ‘নেপথ্য-নায়ক’-এর সম্পর্কে জেনে নেব। 

মহন্ত অবৈদ্যনাথ

উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষনাথ মঠের মহন্ত দিগ্বিজয়ের উত্তরসূরি ছিলেন মহন্ত অবৈদ্যনাথ। ১৯৮৪ সালে রাম জন্মভূমি আন্দোলনের জোরদার করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। সাধুদের এক ছাতার তলায় নিয়ে আসতে রাম জন্মভূমি মুক্তি যজ্ঞ কমিটি গঠন করেছিলেন তিনি।

মোরোপান্ত পিংলে

নাগপুরের মরিস কলেজ থেকে স্নাতক এবং আরএসএস প্রচারক, পিংলে রাম মন্দির আন্দোলনের একজন প্রধান কৌশলবিদ ছিলেন। পিংলে রাম মন্দির আন্দোলনের (Ram Janmabhoomi Movement) সমস্ত প্রধান ‘যাত্রা’, দেশব্যাপী প্রচারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যার মধ্যে ‘শিলা পূজন’ প্রোগ্রামও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি প্রথম ৩ লক্ষেরও বেশি ইট অযোধ্যায় পাঠিয়েছিলেন। তিনি সবসময় পর্দার আড়ালে কাজ করতেন। 

স্বামী বামদেব

একজন তপস্বী, গো-মাতাকে রক্ষা করাই ছিল তাঁর কাজ। তিনি ১৯৮৪ সালে জয়পুরে সর্বভারতীয় স্তরের একটি বৈঠকের মাধ্যমে বিভিন্ন হিন্দু ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক নেতাদের একত্রিত করেছিলেন। ৪০০-এরও বেশি হিন্দু ধর্মীয় নেতা আন্দোলনের ভবিষ্যৎ রোডম্যাপ তৈরি করতে ১৫ দিন ধরে একসঙ্গে কাজ করেছিল। স্বামী বামদেব ১৯৯০ সালে অযোধ্যায় করসেবকদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই সময়ই মুলায়ম সিং যাদবের সরকারের আদেশে উত্তরপ্রদেশে পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজন কর সেবক মারা যান। তিনি সেই উত্তাল সময়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর যখন অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়েছিল, তখনও সেখানে ছিলেন বামদেব।

ভিএইচ ডালমিয়া

একটি সুপরিচিত শিল্পপতি পরিবার থেকে আসা, ডালমিয়া ১৯৯২ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত ভিএইচপির সভাপতি ছিলেন। আড়ালে থাকতে পছন্দ করা ডালমিয়া রাম জন্মভূমি আন্দোলনের (Ram Janmabhoomi Movement) একজন প্রধান নেতা ছিলেন। যখন শ্রী রাম জন্মভূমি ন্যাস ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তখন তাঁকে এর কোষাধ্যক্ষ করা হয়। বিতর্কিত কাঠামো ধ্বংসের পরে তাঁকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল।

এসসি দীক্ষিত

১৯৮০-এর দশকে রাম জন্মভূমি আন্দোলনের একজন সামনের সারির নেতা ছিলেন এসসি দীক্ষিত। তিনি ১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশের পুলিশ মহাপরিদর্শক ছিলেন। অবসর নেওয়ার পরে, তিনি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সহ-সভাপতি হিসাবে যোগদান করেন। তিনি অযোধ্যায় (Ayodhya) করসেবকদের আন্দোলনের কৌশল তৈরি করতেন। ভিএইচপি দ্বারা পরিচালিত বিভিন্ন মঠের প্রচারণার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৯০ সালে অযোধ্যায় করসেবা চলাকালীন রাম জন্মভূমি আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।

দাউদয়াল খান্না

রাম জন্মভূমি মুক্তি যজ্ঞ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসাবে, দাউদয়াল খান্না আন্দোলনের (Ram Janmabhoomi Movement) মাটি প্রস্তুত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি তাঁর প্রথম জীবনে একজন কংগ্রেস নেতা ছিলেন এবং ১৯৬০-এর দশকে উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস পরিচালিত সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনি ১৯৮৩ সালে একটি জনসভায় অযোধ্যা, মথুরা এবং কাশী (বারাণসী)-তে মন্দির পুনর্নির্মাণের বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন। তাঁর উদ্যোগটি রাম জন্মভূমি আন্দোলন পুনরায় শুরু করার মূল অনুঘটক প্রমাণিত হয়েছিল। 

কোঠারি ভ্রাতৃদ্বয়

রম কুমার কোঠারি এবং শরদ কুমার কোঠারি ছিলেন দুই ভাই। এঁরা ১৯৯০ সালের অক্টোবর মাসে করসেবায় অংশ নিতে কলকাতা থেকে অযোধ্যায় (Ayodhya) গিয়েছিলেন। তাঁরা অযোধ্যায় ১৯৯০ সালের ৩০ অক্টোবর করসেবায় প্রথম ব্যাচের সদস্য হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন। দুই দিন পরে, ২ নভেম্বর, যখন তাঁরা করসেবা করছিলেন তখন তাঁদের দুজনকেই পুলিশ কাছাকাছি থেকে গুলি করে হত্যা করে। রমের বয়স ছিল ২৩ এবং শরদের বয়স ছিল মাত্র ২০ বছর।

আরও পড়ুন: তাঁর আমলেই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের পথ দেখিয়েছিলেন হাসিনা

শুধু এঁরা নয়, অন্যদের মধ্যে সেতারাম মালি (যোধপুর), রমেশ কুমার (গঙ্গানগর), মহাবীর প্রসাদ (ফৈজাবাদ), রমেশ পাণ্ডে (অযোধ্যা), সঞ্জয় কুমার (মুজাফফরপুর), অধ্যাপক মহেন্দ্রনাথ অরোরা (যোধপুর) এই আন্দোলনের (Ram Janmabhoomi Movement) জন্য তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। অযোধ্যায় (Ayodhya) হনুমানগড়ির কাছে শহিদ গলি আজও প্রমাণ করে "রাম লাল্লা হাম আয়েঙ্গে, মন্দির ওহি বনায়েঙ্গে" ছিল একটা আবেগ। যার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles