শুভ্র চট্টোপাধ্যায়, অযোধ্যা
সকাল ১১টা থেকে ‘রামজন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট’-এর সাংবাদিক বৈঠক। সারা দেশ থেকে হাজির সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি। আমরা পৌঁছাতেই দেখলাম বিরাট জেড ক্যাটাগরির কনভয় নিয়ে ঢুকছেন উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য। তাঁর সঙ্গেই এলেন তীর্থ ক্ষেত্র ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক চম্পক রাই। আধঘণ্টার সাংবাদিক সম্মেলনের পরেই আমাদের নিয়ে যাওয়া হল রাম মন্দির প্রাঙ্গণে। সেখানেও ঢোকার মুখে বোঝা গেল কেন রাম মন্দির (Ram Mandir) এত বিশেষ! ভারতের আর কোনও মন্দিরে বোধহয় এত নিরাপত্তার বলয় থাকে না। মন্দির চত্বরে দেখা গেল কয়েক হাজার নির্মাণ কর্মী এক নাগাড়ে কাজ করে চলেছেন। সময় যে বড় কম! প্রভু রামচন্দ্র ঘরে ফিরবেন তাও আবার ৫০০ বছর পরে। একি কম আনন্দের! জানা গেল সেখানে অনেক আইআইটি পাশ ইঞ্জিনিয়ারও কাজ করছেন। সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রম।
ট্রাস্টের সাংবাদিক বৈঠকে কোন কোন দিক উঠে এল?
ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক চম্পক রাই জানিয়েছেন, সব দিক থেকেই আত্মনির্ভর হতে চলেছে এই মন্দির (Ram Mandir)। নিকাশী থেকে জল, বিদ্যুৎ থেকে চিকিৎসাকেন্দ্র সবই থাকছে ভিতরে। অর্থাৎ রাম মন্দির যেন আলাদা একটা ব্যবস্থা। সরকারের কোনও সাহায্যই লাগবে না। উত্তর ও দক্ষিণ ভারতীয় রীতির মেলবন্ধনে তৈরি হচ্ছে মন্দির। প্রসঙ্গত, দক্ষিণ ভারতীয় মন্দির রীতি ‘গোপুরম’ নামে পরিচিত এবং উত্তর ভারতীয় মন্দির রীতিকে নাগারা বলে। এই দুই রীতির ছোঁয়া দেখা যাবে রাম মন্দিরে। অন্যদিকে ভগবান শঙ্করাচার্যের ভাবনা অনুযায়ী ‘পঞ্চায়তন’ ধারণার ছোঁয়াও দেখা যাবে মন্দির চত্বরে। ‘পঞ্চায়তন’ হল পাঁচ দেবদেবীর মন্দির। সূর্য, শঙ্কর, ভগবতী, গণপতি এবং বিষ্ণু। মূল রাম মন্দিরের চার দিকে এই মন্দিরগুলি থাকবে। ভগবান রামকেই বিষ্ণুর অবতার মানা হয় তাই আলাদাভাবে কোনও বিষ্ণু মন্দির থাকছে না।
আত্মনির্ভর রামমন্দির
অযোধ্যার সাংবাদিক সম্মেলনে চম্পক রাই জানান, মন্দির (Ram Mandir) চত্বরেই থাকবে পাওয়ার স্টেশন। যেখান থেকে বিদ্যুৎ বন্টন করা মন্দিরের বিভিন্ন বিভাগে। আবার জল সরবরাহের জন্য তৈরি হচ্ছে মন্দিরের নিজস্ব ওয়াটার প্ল্যান্টও। রামমন্দিরের ঠিক পিছনে থাকবে দিব্যাঙ্গদের জন্য লিফটও। রামমন্দির ট্রাস্টের মতে, ‘‘লাখ লাখ দর্শনার্থী আসবেন মন্দির দর্শনে। তাঁরা পরিক্রমা করবেন মন্দির। তাই তাঁদের জন্য সমস্ত রকমের পরিষেবার ব্যবস্থা করা হবে।’’ মন্দির চত্বরেই মিলবে চিকিৎসা ব্যবস্থাও। গড়ে উঠছে স্বাস্থ্য কেন্দ্র। আবার ভক্তরা যাতে বিশ্রাম নিতে পারেন সেজন্য তৈরি হচ্ছে বিশ্রামাগারও। জানা গিয়েছে রেলের মতোই হবে এই বিশ্রামাগার। যেখানে ভক্তরা নিজেদের মোবাইল, জুতো, ব্যাগ ইত্যাদি সামগ্রী রাখতে পারবেন। এরজন্য আলাদা কোনও চার্জও দিতে হবে না।
বশিষ্ট থেকে অহল্যা, বিশ্বামিত্র থেকে নিষাদ রাজের মন্দিরও তৈরি হচ্ছে
রামজন্মভূমি প্রাঙ্গণে মন্দির (Ram Mandir) তৈরি হবে আরও বেশ কতগুলি। ভগবান রাম চন্দ্রের জীবনে বিশেষ অবদান রয়েছে যাঁদের তাঁদেরও মন্দির তৈরি হবে। বাল্মিকী, বশিষ্ঠ, বিশ্বামিত্র, অগস্ত্য, মাতা শবরী, নিষাদরাজ গোহু, অহল্যা এই সাত মন্দির থাকবে রামন্দিরের প্রাঙ্গণে। অর্থাৎ ভক্তরা মন্দির চত্বরে এলেই আরেকবার রামায়ণ মহাকাব্যকেই চাক্ষুষ করতে পারবেন। রামের জীবনে অবদান ছিল জটায়ুরও। তাঁর মূর্তি ইতিমধ্য়ে কুবের টিলাতে স্থাপন করা হয়েছে।
৭০ একর জায়গার মধ্যে ২০ একরে তৈরি হচ্ছে রাম মন্দির
এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক চম্পক রাই জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ৭০ একর জমি পেয়েছি আমরা। কিন্তু এর মধ্যে ২০ একর জায়গা জুড়ে অবস্থান করবে মন্দির প্রাঙ্গণ। বাকি জায়গায় ১০০-এরও বেশি বৃক্ষরোপণ করা হবে বলে জানিয়েছে তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট। এদিন চম্পত রাই আরও বলেন, ‘‘৭০ একর জায়গার একেবারে উত্তর দিকেই তৈরি হচ্ছে রাম মন্দির। সমগ্র ভূমির যে প্লট নিয়ে বিবাদ এবং বিতর্ক ছিল সেই স্থানেই তৈরি হচ্ছে মন্দির।’’
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours