শ্রীযুক্ত বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী ও অন্যান্য ভক্তের প্রতি ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের উপদেশ
পঞ্চম পরিচ্ছেদ
ঈশ্বরের আদেশ প্রাপ্ত হলে তবে ঠিক আচার্য
বিজয়—ব্রাহ্মসমাজের কাজ করতে হয়, তাই সদা-সর্বদা আসতে পারি না; সুবিধা হলে আসব।
শ্রীরামকৃষ্ণ (বিজয়ের প্রতি)—দেখ, আচার্যের কাজ বড় কঠিন, ঈশ্বরের (Ramakrishna) সাক্ষাৎ আদেশ ব্যতিরেকে লোকশিক্ষা দেওয়া যায় না।
যদি আদেশ না পেয়ে উপদেশ দাও (Kathamrita), লোকে শুনবে না। সে উপদেশের কোন শক্তি নাই। আগে সাধন করে, বা যে কোনরূপে হোক ঈশ্বরলাভ করতে হয়। তাঁর আদেশ পেয়ে লেকচার দিতে হয়। ও-দেশে একটি পুকুর আছে, নাম হালদার-পুকুর। তার পাড়ে রোজ লোকে বাহ্যে করে রাখত। সকালে যারা ঘাটে আসত তারা তাদের গালাগালি দিয়ে খুব গোলমাল করত। গালাগালে কোন কাজ হত না—আবার তার পরদিন পাড়েতেই বাহ্যে। শেষে কোম্পানীর চাপরাসী এসে নোটিশ টাঙিয়ে দিল যে, এখানে কেউ ওরূপ কাজ করতে পারবে না। যদি করে, শাস্তি হবে। এই নোটিশের পর আর কেউ পাড়ে বাহ্য করত না।
তাঁর আদেশের পর যেখানে সেখানে আচার্য হওয়া যায় ও লেকচার দেওয়া যায়। যে তাঁর আদেশ পায় (Kathamrita), সে তাঁর কাছ থেকে শক্তি পায়। তখন এই কঠিন আচার্যের কর্ম করতে পারে।
এক বড় জমিদারের সঙ্গে একজন সামান্য প্রজা বড় আদালতে মোকদ্দমা করেছিল। তখন লোকে বুঝেছিল যে, ওই প্রজার পেছনে একজন বলবান লোক আছে। হয়তো আর-একজন বড় জমিদার তার পেছনে থেকে মোকদ্দমা চালাচ্ছে। মানুষ সামান্য জীব, ঈশ্বরের সাক্ষাৎ শক্তি না পেলে আচার্যের এমন কঠিন কাজ করতে পারে না।
বিজয়— মহাশয়! ব্রাহ্মসমাজে যে উপদেশাদি হয়, তাতে কি লোকের পরিত্রাণ হয় না?
সচ্চিদানন্দই গুরু — মুক্তি তিনিই দেন
শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—মানুষের কি সাধ্য অপরকে সংসারবন্ধন থেকে মুক্ত করে। যাঁর এই ভুবনমোহিনী মায়া, তিনিই সেই মায়া থেকে মুক্ত করতে পারেন। সচ্চিদানন্দগুরু বই আর গতি নাই। যারা ঈশ্বরলাভ করে নাই, তাঁর আদেশ পায় নাই, যারা ঈশ্বরের শক্তিতে শক্তিমান হয় নাই, তাদের কি সাধ্য জীবের ভববন্ধন মোচন করে।
আমি একদিন পঞ্চবটীর কাছ দিয়ে ঝাউতলায় বাহ্যে যাচ্ছিলাম (Kathamrita)। শুনতে পেলুম যে, একটা কোলা ব্যাঙ খুব ডাকছে। বোধ হল সাপে ধরেছে। অনেকক্ষণ পরে যখন ফিরে আসছি, তখনও দেখি, ব্যাঙটা খুব ডাকছে। একবার উঁকি মেরে দেখলুম কি হয়েছে। দেখি, একটা ঢোঁড়ায় ব্যাঙটাকে ধরেছে—ছাড়তেও পাচ্ছে না—গিলতেও পাচ্ছে না—ব্যাঙটার যন্ত্রণা ঘুচছে না। তখন ভাবলাম, ওরে! যদি জাতসাপে ধরত, তিন ডাকের পর ব্যাঙটা চুপ হয়ে যেত। এ-একটা ঢোঁড়ায় ধরেছে কি না, তাই সাপটারও যন্ত্রণা, ব্যাঙটারও যন্ত্রণা!
যদি সদ্গুরু (Ramakrishna) হয়, জীবের অহংকার তিন ডাকে ঘুচে। গুরু কাঁচা হলে গুরুরও যন্ত্রণা, শিষ্যেরও যন্ত্রণা! শিষ্যেরও অহংকার আর ঘুচে না, সংসারবন্ধন আর কাটে না। কাঁচা গুরুর পাল্লায় পড়লে শিষ্য মুক্ত হয় না।
আরও পড়ুনঃ “ঈশ্বর বড় চুম্বক পাথর, তাঁর কাছে কামিনী ছোট চুম্বক পাথর! কামিনী কি করবে?”
আরও পড়ুনঃ “বিবেক, বৈরাগ্যরূপ হলুদ মাখলে তারা আর তোমাকে ছোঁবে না”
আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?"
আরও পড়ুনঃ “পশ্চিমে বিবাহের সময় বরের হাতে ছুরি থাকে, বাংলাদেশে জাঁতি থাকে”
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours