শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ও বলরাম-মন্দিরে
চতুর্থ পরিচ্ছেদ
১৮৮৩, ১১ই মার্চ
জন্মোৎসবে ভক্তসঙ্গে — সন্ন্যাসীদের কঠিন নিয়ম
বেলা প্রায় সাড়ে আটটা বা নয়টা। ঠাকুর (Ramakrishna) আজ অবগাহন করিয়া গঙ্গায় স্নান করিলেন না; শরীর তত ভাল নয়। তাঁহার স্নান করিবার জল ওই পূর্বোক্ত বারান্দায় কলসী করিয়া আনা হইল। ঠাকুর স্নান করিতেছেন, ভক্তেরা স্নান করাইয়া দিল। ঠাকুর স্নান করিতে করিতে বলিলেন, “এক ঘটি জল আলাদা করে রেখে দে।” শেষে ওই ঘটির জল মাথায় দিলেন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ আজ বড় সাবধান, এক ঘটি জলের বেশি মাথায় দিলেন না।
স্নানান্তে মধুর কন্ঠে ভগবানের নাম করিতেছেন। শুদ্ধবস্ত্র পরিধান করিয়া দুই-একটি ভক্তসঙ্গে দক্ষিণাস্য হইয়া কালীবাড়ির পাকা উঠানের মধ্য দিয়া মা-কালীর মন্দিরের অভিমুখে যাইতেছেন। মুখে অবিরত নাম উচ্চারণ (Kathamrita) করিতেছেন। দৃষ্টি ফ্যালফেলে—ডিমে যখন তা দেয়, পাখির দৃষ্টি যেরূপ হয়।
মা-কালীর মন্দিরে গিয়া প্রণাম ও পূজা করিলেন। পূজার নিয়ম নাই—গন্ধ-পুষ্প কখনও মায়ের চরণে দিতেছেন, কখনও বা নিজের মস্তকে ধারণ করিতেছেন। অবশেষে মায়ের নির্মাল্য মস্তকে ধারণ করিয়া ভবনাথকে বলিতেছেন, “ডাব নে রে।” মার প্রসাদী ডাব।
আবার পাকা উঠানের পথ দিয়া নিজের ঘরের দিকে আসিতেছেন। সঙ্গে মাস্টার ও ভবনাথ। ভবনাথের হাতে ডাব। রাস্তার ডানদিকে শ্রীশ্রীরাধাকান্তের মন্দির; ঠাকুর বলিতেন, ‘বিষ্ণুঘর’। এই যুগলরূপ দর্শন করিয়া ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করিলেন। আবার বামপার্শ্বে দ্বাদশ শিবমন্দির। সদাশিবকে উদ্দেশে প্রণাম করিতে লাগিলেন।
ঠাকুর (Ramakrishna) এইবার ঘরে আসিয়া পৌঁছিলেন। দেখিলেন, আরও ভক্তের সমাগম হইয়াছে। রাম, নিত্যগোপাল, কেদার চাটুজ্যে ইত্যাদি অনেকে আসিয়াছেন। তাঁহারা সকলে তাঁহাকে ভুমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করিলেন। ঠাকুরও তাঁহাদের কুশল প্রশ্ন করিলেন (Kathamrita) ।
ঠাকুর (Ramakrishna) নিত্যগোপালকে দেখিয়া বলিতেছেন, “তুই কিছু খাবি?” ভক্তটির তখন বালকভাব। তিনি বিবাহ করেন নাই, বয়স ২৩। ২৪ হবে। সর্বদাই ভাবরাজ্যে বাস করেন। ঠাকুরের কাছে কখনও একাকী, কখনও রামের সঙ্গে প্রায় আসেন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁহার ভাবাবস্থা দেখিয়া তাঁহাকে স্নেহ করেন। তাঁহার পরমহংস অবস্থা—এ-কথা ঠাকুর মাঝে মাঝে বলেন। তাই তাঁহাকে গোপালের ন্যায় দেখিতেছেন।
ভক্তটি বলিলেন, ‘খাব’। কথাগুলি ঠিক বালকের ন্যায়।
আরও পড়ুনঃ “যে শালারা হরিনামে মত্ত হয়ে নৃত্য-গীত করতে পারবে না, তাদের কোন কালে হবে না”
আরও পড়ুনঃ “একটা ঢোঁড়ায় ব্যাঙটাকে ধরেছে, ছাড়তেও পাচ্ছে না—গিলতেও পাচ্ছে না…”
আরও পড়ুনঃ “বিবেক, বৈরাগ্যরূপ হলুদ মাখলে তারা আর তোমাকে ছোঁবে না”
আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?"
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours