মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বরানগর পুরসভায় কর্মী নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছে। একইসঙ্গে স্বজনপোষণের অভিযোগ ওঠে তৃণমূল পরিচালিত পুর বোর্ডের বিরুদ্ধে। পুর-নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে অয়ন শীলকে গ্রেফতার করার পর তার কাছে পাওয়া তথ্য থেকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে এই পুরসভায় কর্মী নিয়োগে নানা অনিয়মের অভিযোগ সামনে আসে। ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে ইডি (ED)। আর এই সব কর্মী নিয়োগে মোটা টাকার খেলা হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা মনে করছেন।
পুরসভায় কর্মী নিয়োগ প্যানেলে কারা ছিলেন? (ED)
পুর-নিয়োগ প্যানেলে কারা ছিলেন তা ইডি আধিকারিকদের স্ক্যানারে রয়েছে। জানা গিয়েছে, ২০১৭-১৮ সালে এই পুরসভায় অয়ন শীলের কোম্পানির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। পরে, রিক্রুটমেন্ট বোর্ডে ছিলেন চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিক, তত্কালীন ভাইস চেয়ারম্যান জয়ন্ত রায়, এক্সিকিউটিভ অফিসার সুদীপ ভট্টাচার্য, কাউন্সিলার বিশ্বজিত্ বর্ধন এবং অনিন্দ্য রাউত। পুরসভার কর্মী পদে কয়েক হাজার ছেলেমেয়ে আবেদন করেছিলেন। তারমধ্যে ১৭০ জনকে নিয়োগ করা হয়। কিন্তু, নিয়োগ হওয়ার পর যে তালিকা সামনে আসে তাতে চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার জোগাড়়। রিক্রুটমেন্টের দায়িত্বে থাকা পদাধিকারীদের পরিবারের লোকজনের নাম সামনে আসে। এক সিআইসি সদস্যের পরিবারের লোকজনের নাম তালিকায় রয়েছে। এছাড়া একাধিক কাউন্সিলারদের ঘনিষ্ঠরা চাকরি পেয়েছেন বলে অভিযোগ। শাসক দলের পুর কর্মচারী ইউনিয়নের রাজ্য নেতা আশিস দে-র ওই নিয়োগে বড় ভূমিকা রয়েছে। এমনিতেই এই নেতার বাড়ি বীরভূম। গরু পাচার কাণ্ডের ধৃত অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত তিনি। তাঁর ছেলের চাকরিও বরানগর পুরসভায় হয়েছে। ওই নেতার হাত ধরে বীরভূম, মুর্শিদাবাদ জেলার একাধিক ছেলে এই পুরসভায় নিয়োগপত্র পেয়েছেন। স্রেফ শাসক দলের বদান্যতায় তাঁদের চাকরি হয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। এমনকী বীরভূম, মুর্শিদাবাদ জেলার যাদের নিয়োগ করা হয়েছে, তারা নিয়মিত পুরসভায় পর্যন্ত আসে না বলে অভিযোগ। কিন্তু, তাদের নিয়মিত প্রতিমাসে বেতন হয়ে যায়। এরকম ২৫-৩০ জন কর্মী রয়েছেন। যা নিয়ে তৃণমূলের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন। বোর্ড মিটিংয়ে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
চেয়ারপার্সনের কী বক্তব্য?
নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে পুরসভার চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিক বলেন, নিয়ম মেনে পুরসভায় নিয়োগ হয়েছে। তবে, কাউন্সিলর বা রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের দায়িত্বে থাকলে তাঁর ছেলেমেয়েরা পরীক্ষা দিতে পারবে না এমন কোনও নিয়ম নেই। পরীক্ষা দিতেই সকলেই চাকরি পেয়েছেন। স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ হয়েছে। আর কেউ পুরসভায় নিয়মিত না আসলে তাঁকে শো কজ করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
৩২ কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই অনেক তথ্য জানতে পারে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা
পুরসভার ৩২ জন কর্মীকে ইডি সেপ্টেম্বর মাসে ডেকে পাঠায়। মূলত তৃণমূল ঘনিষ্ঠ যাদের পুরসভায় চাকরি হয়েছে তারা ডাকা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে নিয়োগে পুরসভার চেয়ারপার্সন এবং অনিন্দ্য রাউতদের ভূমিকা নিয়ে অনেক তথ্য জানতে পেরেছে তদন্তকারী আধিকারিকরা। নিয়োগের পিছনে মোটা টাকা আর্থিক লেনদেন হয়েছে, সেই বিষয়ে অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকরা। এমনিতেই ইডি (ED), সিবিআইয়ের স্ক্যানারে আসার পর থেকেই চেয়ারপার্সন পুরসভায় আসা অনিয়মিত হয়ে পড়ে। কাউন্সিলারদের একাংশের সঙ্গে নিয়োগ ইস্যুতে দুরত্ব তৈরি হয়েছে। কয়েকজিন আগে ইডি আধিকারিকরা হানা দিয়ে চেয়ারপার্সনের মোবাইল বাজেয়াপ্ত করেন। তৃণমূল নেতা অনিন্দ্য রাউতের কাছে অনেক তথ্য পান। আর চেয়ারপার্সন কার কার সঙ্গে যোগাযাগ রাখতেন তা বোঝার চেষ্টা করছে তদন্তকারী আধিকারিকরা।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours