মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মাঝে মধ্যেই লাগাতার বৃষ্টি। কয়েক দিন আবার সূর্যের তাপে বাইরে থাকাই কষ্টকর হয়ে ওঠে। ফের শুরু হয় বৃষ্টি। গোটা অগাস্ট মাস জুড়ে কলকাতা ও তার আশপাশের এলাকায় এমনই আবহাওয়া চলছে। আর এই আবহাওয়াতেই বংশবিস্তার করছে ডেঙ্গির মশা। যার জেরে সল্টলেক, নিউটাউন, রাজারহাট, বাগুইআটির মতো একাধিক জায়গায় কার্যত লাল সতর্কতা জারি হতে চলেছে।
কী বলছে সাম্প্রতিক সমীক্ষা?
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ইতিমধ্যেই হয়েছে চারগুণ! ফলে, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২৭ অগাস্ট পর্যন্ত রাজারহাট, সল্টলেক, নিউটাউন এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৪৬ জন। কিন্তু ২০২৩ সালের ২৭ অগাস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ৫০৪ জন। অর্থাৎ কয়েকগুণ বেশি। তার মধ্যে অগাস্টের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহেই ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন ১৮০ জন। ফলে, পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলেই জানাচ্ছে বিশেষজ্ঞ মহল।
কেন বাড়ছে ডেঙ্গি?
স্বাস্থ্য কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, রাজ্যের মধ্যে উত্তর চব্বিশ পরগনা ডেঙ্গিপ্রবণ জেলা। প্রত্যেক বছর উদ্বেগ বাড়ায় এই জেলা। এই জেলায় আক্রান্ত ও মৃত্যহার বেশি থাকে। সল্টলেক, রাজারহাট, নিউটাউনের মতো এলাকা উত্তর চব্বিশ পরগনার মধ্যেই রয়েছে। তাই বিশেষ নজরদারি হচ্ছে। রোগ নির্ণয় বেশি হচ্ছে বলেই জানা যাচ্ছে। তাই বাস্তব পরিস্থিতি স্পষ্ট হচ্ছে। কিন্তু জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই সব এলাকায় ডেঙ্গি সংক্রমণ উর্ধ্বমুখী হওয়ার পিছনে রয়েছে একাধিক কারণ। প্রথমত, এই সব এলাকায় একাধিক নির্মীয়মাণ বহুতল রয়েছে। বর্ষার জমা জল সাত দিনের বেশি থাকার ঝুঁকি এই এলাকায় সবচেয়ে বেশি। সেখানেই ডেঙ্গি রোগ বহনকারী মশা বংশবিস্তার করে। পাশপাশি নিয়মিত ব্লিচিং পাউডার ছেটানো কিংবা মশা মারার ওষুধ দেওয়ার কাজও হয় না। ফলে, বিপদ বাড়ে। এছাড়াও, সল্টলেক এলাকায় একাধিক ফুলের নার্সারি রয়েছে। প্রচুর টব থাকে। সেগুলোতেও বর্ষার জল জমছে। বাড়ছে মশার দাপট। অনেক সময়েই নার্সারিতে ঠিকমতো নজরদারি হয় না। ফলে, ডেঙ্গি সংক্রমণ বাড়ছে। এর পাশাপাশি, রাস্তার অবস্থাও বেহাল। বহু জায়গায় বৃষ্টির পরে জল জমে থাকছে। সেখানেও মশার উপদ্রব বাড়ছে।
কীভাবে হবে মোকাবিলা?
স্বাস্থ্য কর্তারা অবশ্য জনসচেতনতার উপরই জোর দিচ্ছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, সল্টলেক, রাজারহাট, নিউটাউনের মতো এলাকায় ডেঙ্গি সংক্রমণ বাড়ছে। তাই জ্বর হলে আর অবহেলা করা চলবে না। দ্রুত রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। রোগ নির্ণয় দ্রুত হলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমে। তবে, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসচেতনতার পাশপাশি প্রশাসনিক তৎপরতাও জরুরি। বিশেষত ডেঙ্গি মশার বৃদ্ধি যাতে না হয়, সেদিকে নজরদারি প্রয়োজন। পুর প্রশাসনকে নিয়মিত এলাকা পরিদর্শন করতে হবে। কোনও জায়গা বন্ধ থাকলে, সেই জায়গায় প্রশাসনকে ঢুকে দেখতে হবে জল যাতে না জমে। রাস্তা মেরামত করতে হবে, নিকাশি ব্যবস্থা ভালো করতে হবে। যাতে কোনও পরিস্থিতিতেই জল না জমে। সেই নজরদারির দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। সেই কাজে গাফিলতি থাকলে ডেঙ্গি সংক্রমণ বাড়বেই।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours