মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আরজিকরে ডাক্তারি ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় কাঠগড়ায় রাজ্য প্রশাসন। সরকারি হাসপাতালে নাইট ডিউটির সময় কর্তব্যরত মহিলা চিকিৎসকের এ হেন পরিণতিতে বিস্মিত দেশ। এই ঘটনাকে দিল্লির নির্ভয়াকাণ্ডের থেকেও নৃশংস বলে দাবি করেছেন অনেকে। মহিলা চিকিৎসকদের জন্য নিরাপদ পরিবেশের দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। দিল্লির এইমস সহ দেশের বিভিন্ন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী সংগঠনের চাপে অবশেষে গাফিলতি মেনে নিয়েছে প্রশাসন। এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তেও রাজ্যের আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিজেপির চাপ
যেভাবে হাসপাতালের মধ্যে অর্থাৎ নিজের কর্মস্থলে এক ডাক্তারি পড়ুয়ার নৃশংস মৃত্যু হয়েছে তাতে নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে এবং অভিযুক্তের কঠোর শাস্তির দাবিতে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মবিরতিতে নেমেছেন একাংশ ডাক্তারি পড়ুয়া ও জুনিয়র চিকৎসকরা। নির্ভয়া কাণ্ডের চেয়েও ভয়াবহ বলে নিন্দায় সরব হয়েছে চিকিৎসকদের একাধিক সংগঠন। এই ঘটনায় সরব হয়েছে বিজেপি। রাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তা কোথায়, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আরএসএস-পন্থী চিকিৎসক সংগঠন ন্যাশনাল মেডিক্যাল অর্গানাইজেশন, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এই বিষয়ে চিঠি লিখেছে। তারা চিকিৎসকদের জন্য কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা আইনের দাবি জানিয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নাড্ডাকে চিঠি দিয়েছে বিজেপি যুব মোর্চাও।
Sincerely urge Hon'ble Union Minister of Health and Family Welfare, Shri Jagat Prakash Nadda ji seeking for a CBI investigation into the alleged rape and murder of on duty 31 yr old junior doctor in R G Kar Medical College that has shocked the entire nation.@JPNadda pic.twitter.com/zubOelQghL
— Dr.Indranil Khan (@IndranilKhan) August 10, 2024
সিবিআই তদন্তে রাজি মমতা
রাজ্যজুড়ে চিকিৎসকদের বিক্ষোভ-প্রতিবাদ, ঘরে-বাইরে প্রবল চাপে পড়ে বাধ্য হয়েই সব দাবি মানছে রাজ্য। আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় যে কোনও এজেন্সি তদন্ত করলে রাজ্য সরকারের কোনও আপত্তি নেই, বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের (রাজ্য সরকারের) উপর আস্থা না থাকলে আন্দোলনরত পড়ুয়ারা যে কোনও এজেন্সির কাছে যেতে পারেন। আমাদের কোনও আপত্তি নেই।’’
পড়ুয়াদের ক্ষোভ সঙ্গত
পড়ুয়াদের ক্ষোভকেও সঙ্গত বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী। আশপাশে সিসি ক্যামেরা থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে ঘটনা ঘটল, সেই প্রশ্নও তুলেছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী এ-ও বলেছেন, হাসপাতালের ভিতরের বিষয় দেখভালের জন্য সুপার, প্রিন্সিপালদেরও দায়িত্ব রয়েছে। সে ক্ষেত্রে কোনও ফাঁকফোকর ছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্তের কঠোর শাস্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “ফাঁসির পক্ষে আমি নই। তবে কোনও কোনও ঘটনায় শিক্ষা দেওয়ার জন্য এরকম শাস্তি দরকার, যাতে আর কেউ করার সাহস না পায়। আমি নির্দেশ দিয়েছি, ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে মামলা নিয়ে গিয়ে, দরকার হলে ফাঁসির আবেদন জানানো হোক। যে কালপ্রিট এটা করেছে, তার কোনও ক্ষমা নেই।”
কী বললেন পুলিশ কমিশনার
আরজিকরে ডাক্তারি পড়ুয়াকে খুনের ঘটনায় অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা্ করা হবে বলে আশ্বাস দিলেন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলও। আরজি কর-কাণ্ডে ইতিমধ্যেই এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েল আরও বলেন, ‘‘সারা রাত তদন্ত চালানো হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ-সহ বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে একজনে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে, পরিবার অন্য কোনও এজেন্সিকে দিয়ে তদন্ত করতে চাইলে আপত্তি নেই। আমরা সহযোগিতা করব।’’
চিকিৎসকদের বিক্ষোভ
আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে জরুরি পরিষেবা ব্যতীত চিকিৎসকরা একের পর এক হাসপাতালে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে। কর্মবিরতি সিএনএমসি, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, এনআরএস, এসএসকেএমও। কর্মবিরতি জেলার হাসাপাতালেও। আরজি করের ঘটনার প্রকৃত তদন্তের দাবিতে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে এমার্জেন্সি পরিষেবা সচল রেখে বাকি পরিষেবার ক্ষেত্রে কর্মবিরতি ও অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেছেন জুনিয়ার চিকিৎসকরা। অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররাও। হাসপাতালের সুপার অফিসের সামনেই অবস্থান বিক্ষোভে বসেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: তদন্ত কমিটিতে ইন্টার্ন! আরজি করে ছাত্রী খুনের ঘটনায় সিবিআই দাবি শুভেন্দুর
জল গড়িয়েছে দিল্লিতেও
দেশের সব ডাক্তার অ্যাসোসিয়েশনকে এই ঘটনার প্রতিবাদে নামার আবেদন জানিয়েছে এইমস আরডিএ। ইতিমধ্যেই তাদের তরফে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকেও এই ঘটনা খতিয়ে দেখার আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা। সিবিআই তদন্তের দাবি জানাচ্ছেন দিল্লির বিভিন্ন হাসপাতালের ডাক্তাররা। পিজিআই চণ্ডীগড়ের রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনও উদ্বেগপ্রকাশ করে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছে। তাদের দাবি, এই ঘটনাকে যারা ধামাচাপা দিতে চেয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত এবং মহিলা চিকিৎসকদের শুধুমাত্র দিনের বেলায় ডিউটি দিতে হবে। পেডিয়াট্রিক সার্জারি অ্যাসোসিয়েশন এই ঘটনাকে নির্ভয়াকাণ্ডের থেকেও নৃশংস বলে দাবি করে মহিলা চিকিৎসকদের জন্য নিরাপদ পরিবেশের দাবি জানিয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাসপাতালে হাসপাতালে বিক্ষোভ বাড়ছে, সার্বিক ভাবে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবাকে তা প্রভাবিত করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours