মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: প্রেমিকা শ্রদ্ধাকে খুনের পর নিজের পাতা পর পর ভুলের জালেই ধরা পড়ে যায় আফতাব। ছয় মাস আগে, গত ১৮ মে শ্রদ্ধা ওয়ালকরকে খুন করে আফতাব আমিন পুনাওয়ালা। তাঁর দেহ ৩৫ টুকরো করে ছত্তরপুরের জঙ্গলে ছড়িয়ে দেয়। তবে শ্রদ্ধা যে খুন হয়েছে, এ কথা যাতে কেউ বুঝতে না পারে, তার জন্যই আফতাব শ্রদ্ধার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট সক্রিয় রেখেছিল। এমন কিছু কাজ করে সে, যাতে মনে হতে পারে যে শ্রদ্ধা তখনও জীবিত। আফতাব নিয়মিত লেনদেনও করত শ্রদ্ধার অ্যাকাউন্ট থেকে। কিন্তু এই চালই যে পাল্টা বিপদ হয়ে ফিরে আসবে তাঁর কাছে, এ কথা কল্পনাও করতে পারেনি আফতাব। শ্রদ্ধাকে খুনের পর মাস ছয়েক ধরে পুলিশের চোখে ধুলো দিলেও ওই ভুলগুলির জন্যই আফতাবকে সন্দেহ করতে শুরু করেন তদন্তকারীরা।
গত ২৬ অক্টোবর আফতাব আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকে পুলিশ। সেই সময় আফতাব জানায়, গত ২২ মে ঝগড়ার পর শ্রদ্ধা দিল্লির ছত্তরপুরের মেহরৌলির ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে গিয়েছিল। জামাকাপড় ও অন্যান্য সামগ্রী রেখে, শুধু মোবাইল ফোন নিয়েই শ্রদ্ধা বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল, এমনটাই জানায় আফতাব। তার বক্তব্যের উপর ভিত্তি করেই পুলিশ শ্রদ্ধার মোবাইলের গতিবিধি, কল ডিটেলস ও সিগন্যাল লোকেশন খতিয়ে দেখে।
২৬ অক্টোবর আফতাবের দাবি ছিল, ‘‘২২ মে-র পর থেকে তাঁর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখেননি শ্রদ্ধা।’’ অথচ, শ্রদ্ধার মোবাইলের তথ্য খতিয়ে দেখে জানা যায়, ২২ থেকে ২৬ মে-র মধ্যে শ্রদ্ধার মোবাইল ব্যবহার করে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে আফতাবের ব্যাঙ্কে ৫৪ হাজার টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে। লোকেশন ছিল— মেহরৌলির ছত্তরপুর এলাকা, যেখানে তারা একসঙ্গে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতেন। শুধু তাই নয়। এরপরও, ৩১ মে এমনই একটি চ্যাটের সময় শ্রদ্ধার মোবাইলের লোকেশন ছিল ছত্তরপুর। এখানেই পুলিশের সন্দেহ হয়, প্রশ্ন ওঠে যদি ২২ মে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় শ্রদ্ধা, তবে বাড়ির পাশেই কীভাবে শ্রদ্ধার ফোনের লোকেশন পাওয়া গেল।
আফতাবকে আটক করে লাগাতার জেরা করা হয়। পুলিশের দাবি, তখনই সে স্বীকার করে যে তার কাছেই শ্রদ্ধার ফোন ও ব্য়াঙ্কিং অ্যাপের পাসওয়ার্ড থাকায় সে আর্থিক লেনদেন করেছিল। এমনকী, শ্রদ্ধার ক্রেডিট কার্ডের বিলও মিটিয়ে দিয়েছিল আফতাব, যাতে ব্যাঙ্কের তরফে শ্রদ্ধার মুম্বইয়ের ঠিকানায় কাউকে পাঠানো না হয়।
আরও পড়ুন: দিল্লিতে হিন্দু লিভ-ইন পার্টনারকে খুন করে দেহ ৩৫ টুকরো করল মুসলিম যুবক
কীভাবে ধরা পড়ল আফতাব
পুলিশকে আফতাব জানায় কীভাবে পরিকল্পনা করে শ্রদ্ধাকে খুন করে সে। তার দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে যে ঘটনাবলীর কথা জানা গিয়েছে পুলিশ সূত্রে, তার সংক্ষিপ্ত তালিকা:
১৫ মে, ২০২২: দিল্লির নতুন ফ্ল্যাটে আসে তারা।
১৮ মে, ২০২২: শ্রদ্ধার সঙ্গে বচসা বাধে আফতাবের। সেদিনই সে শ্রদ্ধাকে খুন করার কথা নিশ্চিত করে। বচসার মধ্যে শ্রদ্ধা কান্নায় ভেঙে পড়লে তখনই তাঁর শ্বাসরোধ করে তাঁকে খুন করে আফতাব।
২১ মে, ২০২২: শ্রদ্ধার দেহ ৩৫ টুকরো করে আফতাব। নতুন ফ্রিজ কিনে তাঁর দেহাংশ ফ্রিজে রাখে এবং প্রতিদিন রাত ২টোর পর শ্রদ্ধার দেহের টুকরো এক এক করে জঙ্গলে ফেলে আসতে থাকে আফতাব।
২২-২৬ মে, ২০২২: শ্রদ্ধার অ্যাকাউন্ট থেকে ৫৪ হাজার টাকা নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে আফতাব।
২৬ মে, ২০২২: শ্রদ্ধার ফোন থেকে শেষ ফোন করা হয়। কল রেকর্ড থেকে সেই তথ্যই মিলেছে।
৩১ মে, ২০২২: শ্রদ্ধার ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল থেকে তাঁর বন্ধু লক্ষ্মণকে শেষ টেক্সট করে আফতাব। শ্রদ্ধার বয়ানেই সে লেখে। লক্ষ্মণ শ্রদ্ধাকে এরপর থেকে ফোন করলে দেখে শ্রদ্ধার ফোন সুইচ অফ।
১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২: শ্রদ্ধার বাবা ভাসি থানায় তাঁর মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার ডায়েরি করে। এর আগে সেপ্টেম্বর মাসেই শ্রদ্ধার বন্ধু লক্ষ্ণণের সঙ্গে কথা হয় শ্রদ্ধার বাবার। লক্ষ্মণ তাঁকে জানায়, মে-এর শেষ থেকে শ্রদ্ধার ফোন বন্ধ। শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁর দেখা বা কথা হয়নি।
২৬ অক্টোবর, ২০২২: আফতাব আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকে পুলিশ। সেই সময় আফতাব জানায়, গত ২২ মে ঝগড়ার পর শ্রদ্ধা দিল্লির ছত্তরপুরের মেহরৌলির ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে গিয়েছিল। জামাকাপড় ও অন্যান্য সামগ্রী রেখে, শুধু মোবাইল ফোন নিয়েই শ্রদ্ধা বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।
৩ নভেম্বর, ২০২২: আফতাবকে দ্বিতীয়বার জেরা করে পুলিশ। তখনও একই কথা বলে সে। আফতাব জানায় সে নিজেও নাকি শ্রদ্ধার খোঁজ করছে।
৮ নভেম্বর, ২০২২: আফতাব এই দাবি করলেও দিল্লি পুলিশ দেখে শ্রদ্ধার ফোন ২২-২৬ মে পর্যন্ত দিল্লির লোকেশনেই ছিল।
১১ নভেম্বর, ২০২২: আফতাবকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জানতে চায়, ২২ থেকে ২৬ মে-র মধ্যে শ্রদ্ধার মোবাইল ব্যবহার করে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে আফতাবের ব্যাঙ্কে ৫৪ হাজার টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে। লোকেশন ছিল— মেহরৌলির ছত্তরপুর এলাকা, যেখানে তারা একসঙ্গে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতেন। কী করে এটা সম্ভব?
১২ নভেম্বর, ২০২২: আফতাবের বয়ানে অসঙ্গতি পায় পুলিশ। আফতাবও নানান ধরনের তথ্য দিতে থাকে। পুলিশ তাকে হেফাজতে নেয়।
+ There are no comments
Add yours