Gajan: চৈত্র শেষে গাজন উৎসবে মেতে উঠেছে গ্রাম বাংলা, জানুন এর ঐতিহ্য ও তাৎপর্য

বোলান গানের সুরে দেবাদিদেব মহাদেবের স্মরণ ও পুজো এই বাংলার বহু প্রাচীন রীতি
Gajan
Gajan

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: চৈত্র মাসের শেষবেলায় গ্রাম বাংলা মেতে উঠেছে গাজনে (Gajan)। বোলান গানের সুরে দেবাদিদেব মহাদেবের স্মরণ ও পুজো এই বাংলার বহু প্রাচীন রীতি। কত প্রচলিত ছড়া জুড়ে রয়েছে গাজনকে (Gajan) ঘিরে— 


'আমরা দুটি ভাই, শিবের গাজন গাই
ঠাকুমা গেছে গয়া কাশী 
ডুগডুগি বাজাই...'

গাজন (Gajan) শব্দের মানে কী ?

গবেষকদের মতে, গা শব্দের অর্থ হল গ্রাম। এবং জন মানে জনগণ। বিশ্বাস মতে, এই সময় হর কালীর বিবাহ হয়েছিল। শিব হলেন জনগণের দেবতা। গ্রামের জনগণ সবাই দেবতার বিয়েতে বরযাত্রী যাওয়ার উদ্দেশে সমবেত হন। আবার অন্য একটি মত হল, গাজন (Gajan) শব্দটি এসেছে ‘গর্জন’ থেকে। অনেকে বলেন, সন্ন্যাসীদের হুঙ্কারই শিবসাধনায় গাজন নামে প্রচলিত হয়। বাংলার মঙ্গলকাব্যেও গাজনের উল্লেখ মেলে। ধর্মমঙ্গল কাব্যে রাণী রঞ্জাবতী ধর্মকে তুষ্ট করতে গাজন (Gajan) পালন করেছিলেন বলে উল্লেখ রয়েছে। গাজন বা চরক শুধুই শিবের আরাধনা হলেও এই উৎসব পালিত হয় ধর্মরাজকে ঘিরেও। আর দুই দেবতার পুজোতেই জাতপাতের ভেদাভেদ ভেঙে যে কেউ অংশ নিতে পারে। এটাই বাংলার সংস্কৃতি। নানা ধরণের প্রচলিত লোককথা রয়েছে গাজন (Gajan) নিয়ে। শোনা যায়, শিবভক্ত বান রাজা ইষ্ট দেবতাকে তুষ্ট করতে কঠিন কৃচ্ছ্বসাধনের মধ্য দিয়ে তপস্যা করেন। সেই সূত্র ধরেই চড়কের শিবভক্ত সন্ন্যাসীরা আজও বান ফোঁড়ান, নানা ধরনের ঝাঁপ দেন। যা বেশির ভাগই অত্যন্ত কষ্টের। থাকে নানা অদ্ভূত আচার। জীবনের ঝুঁকিও নেন সন্ন্যাসীরা। বাংলার কোথাও কোথাও গাজনে (Gajan) নরমুণ্ড নিয়ে নাচও দেখা যায়।

পুরাণেও উল্লেখ রয়েছে গাজনের (Gajan)

পুরাণেও রয়েছে গাজনের উল্লেখ। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে রয়েছে– ‘‘চৈত্র মাস্যথ মাঘেবা যোহর্চ্চয়েৎ শঙ্করব্রতী। করোতি নর্ত্তনং ভক্ত্যা বেত্রবানি দিবাশিনম্।। মাসং বাপ্যর্দ্ধমাসং বা দশ সপ্তদিনানি বা। দিনমানং যুগং সোহপি শিবলোক মহীয়তে।।’’ অর্থাৎ, চৈত্র মাসে কিংবা কোনও শিবভক্ত যদি মাঘ মাসে এক, সাত, দশ, পনেরো কিংবা তিরিশ দিন বেতের লাঠি হাতে নিয়ে নৃত্য করেন তবে তাঁর শিবলোক প্রাপ্ত হয়।

গাজন (Gajan) উৎসব

গ্রামবাংলার পাশাপাশি শহরাঞ্চলেও এখন গাজনের ছবি দেখা যায়। চৈত্র মাসের শুরু থেকেই ধ্বনিত হয় ‘ভোলে বাবা বুড়ো শিব…’। গৃহীরাই সন্ন্যাস নেন। সারাদিন সন্ন্যাসীরা পথে পথে ঘুরে ভিক্ষা করেন। দিনভর উপবাসের পরে ভিক্ষায় মেলা চাল, সবজি রান্না করে খান।

বিভিন্ন প্রান্তে গাজনের আঞ্চলিক বৈচিত্র দেখা যায়। কোথাও মুখোশ নৃত্য, কোথাও প্রতীকী শিবলিঙ্গ মাথায় নিয়ে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে পথ পরিক্রমা করেন ব্রতধারী সন্ন্যাসীরা। অনেক জেলায় আবার এই সময়ে কালীনাচ দেখা যায়।

গাজন অংশ হিসেবেই পরের দিন পালিত হয় নীল পুজো। সনাতন সংস্কৃতি মেনে সন্তানের মঙ্গল কামনায় গাজন সন্ন্যাসীদের ফল, আতপচাল, ও অর্থ দান করেন মায়েরা। অনেকে গোটা দিন উপবাস করে শিবের পুজো দেন। কেউ দিনের শেষে সাবু মাখা খান, কেউ রুটি, লুচি। আর চৈত্রের একেবারে শেষ দিনে উদ্‌যাপিত হয় চড়ক। গাজনতলায় হয় চড়কগাছের পুজো। চড়কগাছ মানে একটি লম্বা কাঠের দণ্ড। তার উপরে অনেকটা উঁচুতে আংটায় ঝুলে থাকা জনা সন্ন্যাসীরা ক্রমাগত ঘুরপাক খান। এ দৃশ্য খোদ কলকাতাতেও দেখা যায়।

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের FacebookTwitter এবং Google News পেজ।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles