Ramakrishna 14: “জিজ্ঞাসা করাতে একজন ভক্ত বলিলেন, এর নাম সমাধি! মাস্টার এরূপ কখনও দেখেন নাই”

Kathamrita: “হৃদ কমলাসনে, ভজ তাঁর চরণ”......কথামৃত' থেকে শুনুন সেই অমৃত বাণী  
Sri_Ramakrishna Kathamrita12
Sri_Ramakrishna Kathamrita12

অষ্টম পরিচ্ছেদ

শ্রুতিবিপ্রতিন্না তে যদা স্থাস্যতি নিশ্চলা।

সমাধাবচলা বুদ্ধিস্তদা যোগমবাপ্স্যসি।।

সমাধিমন্দিরে

সভা ভঙ্গ হইল। ভক্তেরা এদিক ওদিক পায়চারি করিতেছেন। মাস্টারও পঞ্চবটি ইত্যাদি স্থানে বেড়াইতেছেন, বেলা আন্দাজ পাঁচটা। কিয়ৎক্ষণ পরে তিনি শ্রীরামকৃষ্ণের ঘরের দিকে আসিয়া দেখিলেন, ঘরের উত্তরদিকের ছোট বারান্দার মধ্যে অদ্ভুত ব্যাপার হইতেছে!

শ্রীরামকৃষ্ণ স্থির হইয়া দাঁড়াইয়া রহিয়াছেন। নরেন্দ্র গান করিতেছেন, দুই-চারিজন ভক্ত দাঁড়াইয়া আছেন। মাস্টার আসিয়া গান শুনিতেছেন। গান শুনিয়া আকৃষ্ট হইয়া রহিলেন। ঠাকুরের গান ছাড়া এমন মধুর গান তিনি কখনও শুনেন নাই। হঠাৎ ঠাকুরের দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া অবাক্‌ হইয়া রহিলেন। ঠাকুর দাঁড়াইয়া নিস্পন্দ, চক্ষুর পাতা পড়িতেছে না, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস বহিছে! জিজ্ঞাসা করাতে একজন ভক্ত বলিলেন, এর নাম সমাধি! মাস্টার এরূপ কখনও দেখেন নাই, শুনেন নাই। অবাকহইয়া তিনি ভাবিতেছেন ভাগবানকে চিন্তা করিয়া মানুষ কি এত বাহ্যজ্ঞানশূন্য হয়? না জানি কতদূর বিশ্বাস-ভক্তি থাকলে এরূপ হয়। গানটি এই;

চিন্তয় মম মানস হরি চিদঘন নিরঞ্জন।

কিবা, অনুপমভাতি, মোহনমূরতি, ভকত-হৃদয়-রঞ্জন

নবরাগে রঞ্জিত, কোটি শশী-বিনিন্দিত;

(কিবা) বিজলি চমকে, সেরূপ আলোকে, পুলকে শিহরে জীবন।

গানের এই চরণটি গাহিবার সময় ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ শিহরিতে লাগিলেন। দেহ রোমাঞ্জিত! চক্ষু হইতে আনন্দশ্রু বিগলিত হইতেছে। মাঝে মাঝে যেন কি দেখিয়া হাসিতেছেন। না জানি কোটি শশী-বিনিন্দিত কী অনুপম রূপদর্শন করিতেছেন! এরই নাম কি ভগবানের চিন্ময়-রূপ-দর্শন? কত সাধন করিলে, কত তপস্যার ফলে, কতখানি ভক্ত-বিশ্বাসের বলে, এরূপ ঈশ্বর-দর্শন হয়? আবার গান চলিতেছেঃ

হৃদ কমলাসনে, ভজ তাঁর চরণ,

দেখ শান্ত মনে, প্রেমে নয়নে অপরূপ প্রিয়দর্শন!

আবার সেই ভুবনমোহন হাস্য! শরীর সেইরূপ নিস্পন্দন! স্তিমিত লোচন! কিন্তু কি যেন রূপদর্শন করিতেছেন! আর সেই অপরূপ রূপদর্শন করিয়া যেন মহানন্দে ভাসিতেছেন।

এইবার গানের শেষ হইল। নরেন্দ্র গাইলেনঃ

চিদানন্দরসে, ভক্তি যোগাবেশে, হও রে চির গমন।

(চিদানন্দরসে, হায় রে প্রেমানন্দ রসে)

সমাধির ও প্রেমানন্দের এই অদ্ভুত ছবি হ্রদয়মধ্যে গ্রহণ করিয়া মাস্টার গৃহে প্রত্যাবর্তন করিতে লাগিলেন। মাঝে মাঝে হৃদয়মধ্যে সেই হৃদয়োত্তকারী মধুর সঙ্গীতের ফুট উঠিতে লাগিলঃ

প্রেমানন্দরসে হও রে চিরমগন। (হরিপ্রেমে মত্ত হয়ে)

আরও পড়ুনঃ "দু-চারটা মাছ এমন সেয়ানা যে, কখনও জালে পড়ে না"

আরও পড়ুনঃ "ভালো লোকের সঙ্গে মাখামাখি চলে, মন্দ লোকের কাছ থেকে তফাত থাকতে হয়"

 

তথ্যসূত্রঃ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত, ৮ম পরিচ্ছেদ

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles