মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: শনিবার রাতে মৃতদেহ পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে দার্জিলিংয়ের বিজনবাড়ির কিজোমাবস্তি এলাকা। গ্রামের গর্ব শহিদ সেনা (Army) জওয়ান সিদ্ধান্ত ছেত্রীকে শেষ বিদায় জানাতে রবিবার সকাল থেকেই ব্যস্ত পাহাড়ি এই গ্রাম। কাতারে কাতারে মানুষের ভিড়। কারও মুখে কথা নেই। সবার দু চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল। কাশ্মীর সীমান্তে জঙ্গি হামলায় নিহত সেনা (Army) জওয়ান সিদ্ধান্ত ছেত্রী প্রায় দুমাস আগে বিয়ে করেছেন। সংসার গোছানোর আগেই ভেঙে গেল। স্বামীর শোকে মূর্ছা যাচ্ছেন স্ত্রী প্রজ্ঞাদেবী। আর ছেলের মৃতদেহ আঁকড়ে কেঁদে চলেছেন বাবা খরকাবাহাদুর ছেত্রী ও মা দেওকুমারী দেবী।
কাঁদছে গোটা গ্রাম
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৪ এপ্রিল বিয়ের পর সবাইকে হাসিমুখে বিদায় জানিয়ে কাজে যোগ দিতে গিয়েছিলেন সিদ্ধান্ত। পৌঁছে ফোন করে বাড়ির সকলের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন তিনি। কাশ্মীরের রিজৌরি সীমান্তে অভিযানে যাওয়ার আগে পর্যন্তও ফোনে কথা হয়েছিল স্ত্রী ও পরিবারের সকলের সঙ্গে। শেষ ফোনে জানিয়েছিলেন, অভিযান থেকে ফিরে শনিবার ফোন করবেন। একদিন আগেই তাঁর ইউনিট থেকে ফোন আসে দার্জিলিংয়ের বিজনবাড়ির কিজোমাবস্তির ছেত্রীবাড়িতে। কিন্তু সেই ফোনের অপরপ্রান্তে সিদ্ধান্তের গলা শোনা যায়নি। সেনা (Army) দফতরের এক আধিকারিকের কন্ঠে ভেসে আসে সেই মর্মান্তিক সংবাদ, জঙ্গি হামলায় মারা গিয়েছেন ২৫ বছরের তরতাজা জওয়ান সিদ্ধান্ত ছেত্রী। শনিবার বাগডোগরা বিমানবন্দর হয়ে রাতে কিজোমাবস্তিতে সিদ্ধান্তের কফিনবন্দি দেহ পৌঁছতে গোটা গ্রাম কান্নায় ভেঙে পড়ে। গ্রামের গর্ব সিদ্ধান্তকে শেষবারের জন্য একটু দেখা ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য। রবিবার ভোরের আলো ফুটতেই সেই শোক মিছিল ক্রমশ লম্বা হতে শুরু করে। শুধু কিজোমাবস্তিই নয়। তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আশপাশ এলাকা থেকেও আসেন বহু মানুষ।
কী বললেন নিহত সেনা (Army) জওয়ানের পরিবারের লোকজন?
সিদ্ধান্তের জামাইবাবু বিক্রম থাপা বলেন, এর আগেও সিদ্ধান্ত বহুবার অভিযানে গিয়েছে। সফল হয়ে ফিরেই আমাদের সকলের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছে। দুমাস আগে বিয়ে হয়েছিল। সবার সঙ্গে মিশে হাসি-ঠাট্টা করে গত ১৪ এপ্রিল কাজে যোগ দিতে যাওয়ার সময় বলেছিল, মাসখানেক বাদে আবার ফিরে আসবে। সেই আশাতেই আমরা ছিলাম। আর সদ্য বিবাহিতা প্রজ্ঞা এক বুক স্বপ্ন নিয়ে স্বামীর প্রত্যাশায় বসেছিলেন। সবকিছু ওলট-পালট হয়ে গেল। সিদ্ধান্তের দিদি চন্দ্রকলা ছেত্রী কাঁদতে কাঁদতে বললেন, আমার ভাই দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে। এ তো আমাদের গর্ব। কিন্তু এত অল্প বয়সে, সদ্য সংসার পাতার পরপর এভাবে চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছি না।
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হল শেষকৃত্য
শনিবার বিমানে বাগডোগরা বিমানবন্দরে কফিনবন্দি হয়ে সিদ্ধান্তের দেহ পৌঁছতে স্থানীয় জেলা প্রশাসন ও সেনা (Army) বিভাগের তরফে গান স্যালুট দিয়ে সিদ্ধান্তকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। তারপর কফিনবন্দি দেহ রওনা হয় পাহাড়ের বিজনবাড়ির কিজোমাবস্তির উদ্দেশে। রাতে মৃতদেহ পৌঁছতেই শোকস্তব্ধ গ্রাম কান্নায় ডুকরে ওঠে। সিদ্ধান্তের বাবা খরকাবাহাদুর, মা দেওকুমারী দেবী সারা রাত ছেলের কফিনবন্দি দেহ আগলে বসেছিলেন। এদিন সকালেও তাঁদের সেখান থেকে সরানো যায়নি। এদিকে সেনা (Army) ও জেলা প্রশাসনের তরফে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন করার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। আর কয়েক ঘণ্টা বাদেই চিরতরে হারিয়ে যাবে সিদ্ধান্ত। গান স্যালুট, তোপধ্বনি এই পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা খেয়ে খেয়ে ছড়িয়ে দেবে শেষ শোকবার্তা।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours