Thomas Cup: প্রথমবার জয়ী টমাস কাপ জিতে ইতিহাস রচনা ভারতের, বিজয়ীদের ফোন প্রধানমন্ত্রীর

ভারত মাতা কি জয় আওয়াজের মধ্যেই বিজয়োৎসব শ্রীকান্তদের...
thomas_cup
thomas_cup

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কিদাম্বি শ্রীকান্তের (Kidambi Srikanth) শটটা বিপক্ষের কোর্টে আছড়ে পড়ার পরেই ভারতীয় খেলোয়াড়রা ছুটে এলেন। অবিশ্বাস্য মুহূর্ত তাইল্যান্ডের ব্যাংককে। বিশ্বসেরা ভারত। তারপরে ভারতের জাতীয় সঙ্গীতে গমগম করে উঠল ব্যাংকক। ফাঁকা পেলেই গোটা স্টেডিয়ামে আওয়াজ, ভারত মাতা কি জয়। বাজছে ঢোল, তালে তালে জন-গণ-মন। সত্যিই এটা ব্যাংকক তো? নাকি দিল্লি বা কলকাতা? বোঝা যাচ্ছিল না। 

ব্যাডমিন্টনে সোনার দিন ভারতের। প্রথমবার টমাস কাপ (Thomas Cup) জিতে ইতিহাস গড়লেন শ্রীকান্তরা। ব্যাডমিন্টনের বিশ্বকাপ বলা যায় টমাস কাপকে। টমাস কাপের ৭৩ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার জিতল ভারত। অলিম্পিক্স, এশিয়ান গেমস, কমনওয়েলথ গেমস, বিশ্ব ব্যাডমিন্টন, সব জায়গায় পদক থাকলেও এই একটি প্রতিযোগিতায় কিছুতেই দাপট দেখাতে পারছিল না ভারত। সেই অভাব মিটে গেল রবিবার, প্রথমবার ফাইনালে উঠেই চ্যাম্পিয়ন হল দেশ। ব্যাংককের নোনথাবুড়ির ইম্প্যাক্ট অ্যারেনাতে ফাইনালে পরিষ্কার ৩-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দিল ১৪ বারের বিজয়ী ইন্দোনেশিয়াকে।

প্রথম ম্যাচে লক্ষ্য সেন (Lakshya Sen) প্রথম গেমে পিছিয়ে পড়েও জেতেন। প্রথম গেমে ৮-২১ ব্যবধানে হেরে যান লক্ষ্য। বলা যায় জিনটিং উড়িয়ে দিয়েছিলেন তাঁকে। কিন্তু সেখান থেকে দেখা গেল মরিয়া লড়াই। গ্যালারি থেকে ‘ভারত মাতা কি জয়’ চিৎকার উদ্বুদ্ধ করছিল লক্ষ্যকে। তাঁর মরিয়া লড়াই দেখা গেল শেষ দু’টি গেমে। লক্ষ্যর নাছোড় মনোভাবই জয় এনে দিল ভারতকে। খেলার ফল ৮-২১, ২১-১৭, ২১-১৬। ফিরে আসার লড়াই দেখালেন লক্ষ্য। তাঁর জয় চাগিয়ে দিল চিরাগদের (Chirag Shetty)।

দ্বিতীয় ম্যাচ ছিল ডাবলসের লড়াই। চিরাগ শেট্টি এবং সাত্ত্বিকসাইরাজ (Satwiksairaj) মুখোমুখি হয়েছিলেন মহম্মদ এহসান এবং সুকামুলিয়োর। লক্ষ্যর মতো চিরাগরাও প্রথম গেম হেরে পিছিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু হার মানেননি তাঁরা। শেষ পয়েন্ট পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। দ্বিতীয় ম্যাচে ভারত জেতে ১৮-২১, ২৩-২১, ২১-১৯ ফলে। তৃতীয় ম্যাচে নেমেছিলেন শ্রীকান্ত। আশা-ভরসা ছিল তাঁর উপরেই। টানা তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে জিতলেন শ্রীকান্ত। বিশ্বের আট নম্বর জোনাথন ক্রিস্টিকে হারালেন তিনি। তৃতীয় ম্যাচে কিদম্বি শ্রীকান্ত জিতলেন ১৫-২১, ২২-২০ পয়েন্ট। পাঁচ ম্যাচের বাকি দুটির আর প্রয়োজন হয়নি।

৪৩ বছর পর সেমিফাইনালে পা রাখা, তারপর ইতিহাসে প্রথমবার ফাইনাল খেলতে নামা, এবং সেখানে ১৪ বারের চ্যাম্পিয়ন, গতবারের চ্যাম্পিয়ন এবং প্রতিযোগিতার ফেবারিট ইন্দোনেশিয়াকে, পাঁচ ম্যাচের লড়াইয়ে প্রথম তিন ম্যাচেই উড়িয়ে দিয়ে। সত্যিই স্বপ্নের মতো লাগছে। টমাস কাপকে বলা যেতে পারে ছেলেদের ব্যাডমিন্টনের বিশ্বকাপ, তাই ইন্দোনেশিয়া-কে হারিয়ে এই জয় ৮৩-তে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কে হারিয়ে ক্রিকেটে প্রথম বিশ্বজয়ের সমতুল্য বা ব্যাডমিন্টনে তার চেয়েও অনেক বেশি। 

একটা সময় ছিল যখন ভারতকে টমাস কাপের যোগ্যতা অর্জন করতেই অনেক কষ্ট করতে হত। কিন্তু গত কয়েকবছরে সেই ছবিটা বদলেছিল। কিন্তু সাফল্য কোনওবারই ধরা দিচ্ছিল না। ইন্দোনেশিয়া, জাপান, চিন, মালেশিয়া, ডেনমার্ক, ব্যাডমিন্টনের ‘বড়দা’দের কাছে কুলীন হয়েই থাকতে হচ্ছিল ভারতকে।

কিন্তু এবার কোয়ার্টার ফাইনালে পাঁচবারের বিজয়ী মালয়েশিয়াকে হারিয়ে, সেমিফাইনালে প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বেশি অংশ নেওয়া ডেনমার্ককে হারিয়ে, যে দলে ছিলেন টোকিয়ো অলিম্পিক্সে সোনাজয়ী তথা এই মুহূর্তে বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড় ভিক্টর অ্যাক্সেলসেন, আর ফাইনালে ব্যাডমিন্টনের 'অস্ট্রেলিয়া', ইন্দোনেশিয়াকে হারিয়ে, কিদম্বি শ্রীকান্ত, লক্ষ্য সেনরা দেখিয়ে দিলেন, তাঁরাও কোনও অংশে কম নন। 

খেলা শেষে বিজয়ী দলের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কথা বলেন প্রত্যেক সদস্যের সঙ্গে। সকলকে অনুপ্রাণিত করেন। বিজয়ী দলকে ১ কোটি আর্থিক পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর।

ভারতীয় ছেলেদের এই জয় ব্যাডমিন্টনকে এক নতুন মাত্রায় পৌঁছে দিল। লক্ষ্য কিদম্বি দেখিয়ে দিলেন ব্যাডমিন্টনে তাঁরাও বিশ্বশাসন করতে পারেন। শুধু ভারতীয় ব্যাডমিন্টন নয়, ভারতীয় ক্রীড়ার ইতিহাসে আজকের দিনটা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। 

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles